নব্যেন্দু হাজরা: ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মার্চের শেষ। টানা দেড়মাস বন্ধ থাকবে হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড এবং শিয়ালদহ-সেক্টর ফাইভ মেট্রো পরিষেবা। আর এই মেট্রো বন্ধের খবরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন নিত্যযাত্রীরা। হাওড়া স্টেশনে এসে মেট্রো ধরে গঙ্গা পার হওয়া যাত্রীরা তো বটে, শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ যাওয়া মেট্রোযাত্রীরাও দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন। কারণ একটাই, মেট্রো চালুর কারণে গত কয়েক বছরে রাস্তা থেকে কয়েকশো বাস কমে যাওয়া। অনেকেই বলছেন, মেট্রো চালুর আগে কী মানুষ হাওড়ায় নেমে ধর্মতলা যাননি! নাকি শিয়ালদহে বা বিধাননগরে নেমে সেক্টর ফাইভ যাননি!
যাত্রীদেরই একাংশ বলছেন, মেট্রো বন্ধ হলে তো আর বাসের সংখ্যা রাতারাতি বেড়ে যাবে না। ফলে এই যে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ মেট্রোয় চড়তেন তাঁরা যাবেন কোথায়! ফলে যা হওয়ার তাই হবে। বাসগুলোতে হবে বাঁদুরঝোলা ভিড়। চাহিদামতো বাসও থাকবে না রাস্তায়। অফিস টাইমে ভুগতে হবে নিত্যযাত্রীদের। শিয়ালদহে নেমে যারা মেট্রোয় চেপে সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় অফিস-কলেজ বা অন্যত্র যেতেন তাঁরাও এবার কীভাবে যাবেন সেটাই ভাবছেন! কারণ শিয়ালদহ মেট্রো চালু হয়েছে, আড়াই বছর আগে। ফলে মানুষের অভ্যেস বদলেছে। বিধাননগরে নেমে অটো, বাসের বদলে তাঁরা শিয়ালদহ থেকে মেট্রো ধরছিলেন। এই দেড় মাস যে তাঁরাও বিপাকে পড়বেন তা মানছেন অনেকেই।
বাসমালিকরা জানাচ্ছেন, মেট্রো চালুর পর বহু মালিকই আর নতুন করে বাস নামাচ্ছেন না। ১৫ বছর পার করে যাওয়া বাস বসে গেলে সেই পারমিটে নতুন বাস নামছে না। গত দুবছরে যে কারণে রাস্তায় বাসের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু বিভিন্ন দিকে মেট্রো চালু থাকায় সমস্যা হয়নি যাত্রীদের। এবার মেট্রো বন্ধ থাকলে ভরসা তো সেই বাস। অথচ এখন বহু রুটের অস্তিত্ব নেই। হাওড়া থেকে যেমন ৫৫, ৫৯, ৫৫এ, বকুলতলা-ধর্মতলা বাস এবং মিনিবাস, ৩৮ নম্বর রুটের বাস পুরোপুরি বসে গিয়েছে। এছাড়া একাধিক রুটে বাসের সংখ্যাও কমে গিয়েছে। ফলে মেট্রো বন্ধ হলে যাত্রীদের সমস্যা তো হবেই।
মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, এই দেড় মাসে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ রুটে অর্থাৎ সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত সিগন্যালিংয়ের সফটওয়্যায়ের আধুনিকীকরণ করা হবে। তারপর পাতালপথে হাওড়া ও শিয়ালদহ রেল স্টেশনকে যুক্ত করবে মেট্রো। অবশেষে চালু হবে কলকাতা-হাওড়া-উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সংযোগকারী ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ রুট। রেলকর্তাদের দাবি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে চালু হয়ে যাবে হাওড়া-সেক্টর ফাইভ মেট্রো পরিষেবা। সারা বাংলা বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "মেট্রো চালু হওয়ায় বাস তো অনেক কমে গেছে ঠিকই। যাত্রী কমে যাওয়ায় বহু মালিক গাড়ি বসিয়ে দিয়েছেন। যাদের বাস ১৫ বছর হয়ে গিয়েছে সেই পারমিটে তাঁরা নতুন বাস নামাচ্ছেনও না। ফলে মেট্রো বন্ধ থাকলে সমস্যা তো হবেই।"