shono
Advertisement
Indian Museum

সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো মৃতের জন্য মাসে ১৫ হাজার টাকা ইলেকট্রিক বিল!

জলীয় বাষ্প বাড়লেই মান্ধাতার আমলের পুরনো কাপড়ে জন্মাতে পারে ছত্রাক।
Published By: Suhrid DasPosted: 09:24 PM Nov 24, 2025Updated: 09:26 PM Nov 24, 2025

অভিরূপ দাস: বছরে আট হাজার ৭৬০ ঘন্টা এসি চলে তার জন্য। তিনি ঘুম থেকে ওঠেন না। সাড়ে চার হাজার বছর ধরে শুয়ে রয়েছেন একইভাবে। কলকাতার জওহরলাল নেহরু রোডের ইজিপশিয়ান মমির ঘরে তবু এসি বন্ধ করার উপায় নেই। আদ্রতা যে তার দুশমন!

Advertisement

জলীয় বাষ্প বাড়লেই মান্ধাতার আমলের পুরনো কাপড়ে জন্মাতে পারে ছত্রাক। যা পেঁচানো রয়েছে মৃতদেহের গায়ে। ব‌্যাকটিরিয়া বাসা বাধবে করোটির ভেতরে। পণ্ডশ্রম হবে হাজার হাজার বছরের পুরনো মৃতদেহকে তরতাজা রাখার পদ্ধতি। মিশরে যাকে বলা হয় মমিফিকেশন। তার জন‌্য বিশ্রাম পায়না দু-দু'টো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। দু’টো বন্ধ হলেই চালু হয়ে যায় আরও দু’টো। যার জন‌্য মাসে চোকাতে হয় প্রায় হাজার ১৫ টাকার ইলেকট্রিক বিল। এর সঙ্গে রয়েছে পাহারাদারের মোটা খরচ। আদ্রতা টানার অন‌্যান‌্য কেমিক‌্যালের চার্জ। সব মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো মৃতদেহ রাখতে বছরে কয়েক লক্ষ‌ টাকা গুনতে হয় যাদুঘর কর্তৃপক্ষকে।  এ ঘরের দেখভালকারী রূপক নন্দী বলেন, ‘‘কলকাতার ভারতীয় যাদুঘরের এই ব‌্যান্ডেজ জড়ানো মৃতদেহই এশিয়া মহাদেশের প্রথম প্রদর্শিত ইজিপশিয়ান মমি। ঐতিহাসিক মূল‌্য আলাদা।’’

তিন হাজার পাঁচশো আটচল্লিশ মাইল পেরিয়ে ইজিপ্টের এই মমির এ শহরে আসার গল্প হার মানাবে যে কোনও সিনেমাকে। তৎকালীন লেফটেন‌্যান্ট ই সি আর্কবল্ড তাকে শহর কলকাতায় নিয়ে এসেছিলেন। ১৮৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলকে তা উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়। সেই ইস্তক ব‌্যান্ডেজে জড়ানো মিশরীয় মমি শুয়ে রয়েছে শহর কলকাতার একটি ঘরে। আর্কবল্ড কি করে পেলেন এই মমি? জানা যায়, সে সময় মিশরে কর্মরত ছিলেন তিনি। আপার ইজিপ্টের গৌরনার রাজকীয় সমাধি থেকে উদ্ধার হয় এই মমিটি। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর জাহাজে তাকে এদেশে নিয়ে আসা হয়েছিল।

যাদুঘরের ইজিপ্শিয়ান মমির ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করেন রূপক নন্দী। তাঁর কথায়, ‘‘এটা কোনও ফ‌ারাও নয়। তবে ফারাও পরিবারের অত‌্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেউ।’’ কী করে বোঝা গেল? ‘‘ফারাও হলে এই মমির ঢাকনায় মূল‌্যবান রত্নখচিত থাকত। হাত দু’টো থাকত বুকের ওপর। কিন্তু জওহরলাল নেহেরু রোডের ভারতীয় যাদুঘরে চিরঘুমে থাকা সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো মানুষ দু’পাশে হাত ছড়িয়ে শুয়ে।’’ জানিয়েছেন রূপক। জানা যায়, সে সময় কুসংস্কারের কারণে অনেক কুলি-কামিন এই বাক্স কাঁধে তুলতে চাননি। বাধ‌্য হয়ে আর্কবল্ড নিজেই হাত লাগিয়েছিলেন।

যাদুঘরে যে বিশেষ ঘরে ইজিপ্টের মমি শুয়ে সেখানে কড়া ঠান্ডা। আলো নিভু নিভু। মিউজিয়ামের ডিরেক্টর অরিজিৎ দত্ত চৌধুরীর কথায়, তাপমাত্রা আর আদ্রতা দুইই ক্ষতি করতে পারে অতিবৃদ্ধ চিরঘুমে থাকা মানুষটিকে। যে কারণে বর্ষাকালে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন যাদুঘর কর্তৃপক্ষ। প্রথম যখন এটি কলকাতায় আনা হয়, এশিয়াটিক সোসাইটির জর্জ ইভানস মনে করেছিলেন এটি হয়তো বা কোনও নারীর দেহ। পরে জানা যায় এটি পুরুযের দেহ। ভালো করে মমির বাক্স লক্ষ করলে দেখা যাবে সেখানে লম্বা দাড়ি খোদাই করা। মহিলা হলে তা থাকত না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বছরে আট হাজার ৭৬০ ঘন্টা এসি চলে তার জন্য। তিনি ঘুম থেকে ওঠেন না।
  • সাড়ে চার হাজার বছর ধরে শুয়ে রয়েছেন একইভাবে।
  • কলকাতার জওহরলাল নেহেরু রোডের ইজিপশিয়ান মমির ঘরে তবু এসি বন্ধ করার উপায় নেই।
Advertisement