সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দীর্ঘ ১৩ বছরে বিভিন্ন জেলায় বন্যপ্রাণ হামলায় মৃত ৬৭৫ জনের পরিবারকে ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের চাকরি দিচ্ছে রাজ্য (West Bengal)। নতুন বছর থেকেই এর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বনদপ্তর। ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক জেলার ওই পরিবারের একজন করে সদস্যকে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক এই কাজে ফরেস্ট ভলান্টিয়াররা জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণ রক্ষায় মূলত কাজ করবেন। তবে এই কাজ ছাড়াও রেঞ্জ বা বিটের অন্যান্য কাজও তাদেরকে করতে হতে পারে। আপাতত মাসিক ১২ হাজার টাকা বেতন মিলবে। তবে তাদের ইউনিফর্ম কি হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
রাজ্যের বনবিভাগের রাষ্ট্রমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা বলেন, “বন্যপ্রাণ হামলায় মৃতের পরিবারের আর্থিক ক্ষতিপূরণ তো রয়েইছে। এছাড়াও রাজ্য সরকার ওই পরিবারের একজন করে সদস্যকে ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের কাজ দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) একথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণা মত কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণের বহু জায়গায় পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য হাতি, বাঘ, কুমির, লেপার্ডের মত বন্যপ্রাণ হামলায় মারা যান। তাই সেই পরিবারে যাতে আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে সেই কথা মাথায় রেখেই ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের কাজ নিয়ে গত বছর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানেই সবুজ সংকেত দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই বিষয়ে আদেশনামাও জারি হয়। সম্প্রতি বনদপ্তর ওই ৬৭৫ জনের তালিকা প্রস্তুত করেছে। ওই তালিকায় বন্যপ্রাণ হামলায় মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে উত্তরের জেলা আলিপুরদুয়ারে। ওই জেলায় মোট ১৬৩ জন ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের চাকরি পাবেন। এছাড়া জঙ্গলমহলের চার জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুরেও একাধিক জনকে এই চাকরি দেওয়া হচ্ছে। রয়েছে সুন্দরবন ছুঁয়ে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাও। বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের মোট ১৭ টি জেলায় বন্যপ্রাণ হামলায় মৃতের পরিবারের একজন সদস্যকে এই চাকরি দেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় নাবালিকাদের দিয়ে ম্যাসাজের টোপ দিয়ে মধুচক্র! পুলিশের জালে ২]
২০১১ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৪শে মে পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে বন্যপ্রাণ হামলায় যারা মারা গিয়েছেন তাদের পরিবারকেই ওই তালিকায় চিহ্নিত করেছে বনদপ্তর। দীর্ঘ ১৩ বছরে উত্তর থেকে দক্ষিণে হাতির হামলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। বনদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ৫৮৬। এছাড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হামলায় ৩৩ জন, গৌর বা বনগরুর হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের। লেপার্ডের আক্রমণে মারা গিয়েছেন ১০ জন। কুমিরের হামলায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। মৃত্যু হয়েছে বাইসন, হিমালয়ান ব্ল্যাকবিয়ার, রাইনো এবং বন্য শুকরের হামলাতেও।
গত বছর মাঠা বনাঞ্চলের কুদনাতে জ্বালানির জন্য কাঠ কুড়াতে গিয়ে দাঁতালের মুখোমুখি পড়ে প্রাণ হারান বাঘমুন্ডির মাদলা গ্রামের বাসিন্দা ৪৩ বছরের মঙ্গল মুড়া। তার ছেলে সাগর মুড়াকেই বনদপ্তর ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের নিয়োগপত্র দিয়েছে। গত ১৭ই জানুয়ারি তিনি বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলে কাজে যোগ দেন। উত্তরবঙ্গের কালিম্পং জেলার কালিম্পং ডিভিশনের গরুবাথান থানা এলাকায় লোয়ার ফাগু চা বাগানে হাতির হামলায় সুমন কাওয়ারের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালের ১১ জুলাই তিনি হাতির মুখোমুখি পড়ে প্রাণ হারান। তার পরিবারের এক সদস্যকেও এই চাকরি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ওই ডিভিশনের ঝড়খালি গ্রামে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখোমুখি পড়ে মারা যান সাগর বৈদ্য। তার স্ত্রী মামনি বৈদ্য এই কাজ পাবেন। মালদা জেলার মালদা ডিভিশনেও ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বন্য শূকরের হামলায় মারা যান ভরত ঘোষ। তার স্ত্রী ঘিশু ঘোষ এই ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের কাজ পাবেন বলে বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে।
বন্যপ্রাণ হামলায় মৃত্যুর খতিয়ান:
হাতি:৫৮৬, বাঘ:৩৩, গৌর:২৬, লেপার্ড:১০, কুমির:৭, বন্য শূকর:৫, রাইনো: ২, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার :১, হায়না:১
জেলাভিত্তিক বন্যপ্রাণ হামলায় মৃত্যুতে ফরেস্ট ভলান্টিয়ারের তালিকা:
আলিপুরদুয়ার: ১৬৩, ঝাড়গ্রাম: ৯৯, কালিম্পং: ৮, পশ্চিম মেদিনীপুর: ৫৯, হুগলি: ১, মালদা:১, মুর্শিদাবাদ :১, উত্তর চব্বিশ পরগনা:১, কোচবিহার: ৪, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ৩৯ পুরুলিয়া : ২৯, পূর্ব বর্ধমান:৬, পশ্চিম বর্ধমান: ৫, বাঁকুড়া: ৭৮, দার্জিলিং: ৬০, জলপাইগুড়ি: ১১৩, বীরভূম: ৮