নব্যেন্দু হাজরা: আরামবাগ (Arambag) নাকি ঔরঙ্গাবাদ? কথা ছিল, যাবেন বেহালা থেকে আরামবাগ। সেইমতো বেহালা থেকে অ্যাপ ক্যাবেও (App cab) চড়েন এক যাত্রী। মোবাইলে ৮৪ কিলোমিটার দূরত্ব যাওয়ার জন্য ভাড়া দেখিয়েছে ২৩৮০ টাকা। কিন্তু পৌঁছনোর পর চালকের মোবাইলে যে দূরত্ব দেখাল, তা দেখে চক্ষুচড়কগাছ যাত্রী থেকে চালক – সকলের। যাত্রী নাকি পাড়ি দিয়েছেন ১২৪৮ কিলোমিটার! ভাড়া উঠেছে ২৪ হাজার টাকারও বেশি!
কিন্তু এই বিভ্রাট কীভাবে হয়? এই প্রশ্নের জালে জড়িয়ে যাত্রী ও ক্যাবচালক – দু’জনই চরম বিভ্রান্ত। দু’পক্ষেরই নাজেহাল দশা। যাত্রীর দাবি, এই ভাড়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, তিনি কোনও মতেই দেবেন না। অন্যদিকে অসহায় চালকের বক্তব্য, “এটা তো মেশিনের রিডিং। আমি কী করবো? উলটে কোম্পানি জানে, যাত্রী পুরো টাকা দিয়েছেন। সেইমতো আমার কাছ থেকে জিএসটি (GST) সমেত ওদের কমিশন ৬০০০ টাকার বেশি চেয়ে মেসেজও পাঠিয়েছে।” কোম্পানির এই টাকা না মেটালে উনি পথে বসে যাবেন বলে আক্ষেপও করেছেন ওই চালক।
[আরও পড়ুন: রাজনীতিতে ‘লক্ষ্মী’বাস! তৃণমূল ভবনে মমতার ঘরের চিলেকোঠায় উদ্ধার ধনদেবীর বাহন]
বাস্তবিকই তাই। ২৪ হাজার টাকার জন্য প্রাপ্য ৬০০০ টাকা না পেয়ে সংশ্লিষ্ট ক্যাব সংস্থা চালকের পরিচয়পত্র বাতিল করে দেয় বলে পরে জানিয়েছেন ওই চালক। কাঁদো কাঁদো হয়ে তিনি জানাচ্ছেন, “এমন ভাড়া কেন উঠল, আমিও জানি না। এদিকে কোম্পানি আমার থেকে তাদের কমিশনের ৬০০০ টাকা মতো চেয়ে মেসেজ করেছে। দিতে পারিনি বলে আমার আইডি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কী করে খাব এখন? গাড়ির মালিক তো আমাকে ছাড়িয়ে দেবে এবার।” সিটু পরিচালিত ওলা উবের অ্যাপ ক্যাব অপারেটর অ্যান্ড ড্রাইভার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ মানু বলেন, “কোম্পানির ভুলে প্রায়ই এরকম ড্রাইভারদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কোম্পানিকে বলেও কোন সমস্যার সমাধান হয় না। সরকার কোন নিয়ম বেঁধে দেয়নি যে কারণে গাড়ির চালকরা ভুগছে।”
[আরও পড়ুন: কসবায় ভুয়ো টিকা কাণ্ড: CBI তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের মামলা]
এমন গরমিলের ঘটনার কথা যিনিই শুনছেন, চোখ কপালে উঠছে তাঁরই। বেহালা (Behala) থেকে আরামবাগ যেতে ২৪ হাজার ১৮৩ টাকা ভাড়া যে নিতান্তই অবাস্তব, তা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কিন্তু তারই জেরে সাধারণ যাত্রী ও চালকের এমন দুর্ভোগ কেন? তার উত্তর পেতে সংশ্লিষ্ট ক্যাব সংস্থাকে ফোন করা হয়। তাদের ল’ এনফোর্সমেন্ট অফিসার অনিরুদ্ধ চৌধুরী বলেন, “আমরা ওই ক্যাবের পুরো তথ্য জানাতে বলেছি। এমনটা হওয়ার কথা নয়। ওরা সেটা দিলেই আমরা বলতে পারব কেন এটা হয়েছে।” কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অন্য যাত্রীর ক্ষেত্রে আবার হবে না তো? এর কোনও নিশ্চয়তা নেই।