কৃষ্ণকুমার দাস: সঙ্গে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ (SwasthyaSathi) কার্ড না থাকলেও অসুস্থ ব্যক্তিকে ভরতি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। কার্ড না থাকার অজুহাতে তাঁকে ফেরানো যাবে না। সেক্ষেত্রে হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড জমা দেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দিতে হবে তাঁকে। সেই সময়কার খরচ দিয়ে দেবে রাজ্য সরকার। শনিবার কলকাতার ৯৯ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে রোগী ফেরানোর অজস্র অভিযোগ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন কলকাতা পুরসভার শীর্ষকর্তারা। সেখানেই এমনই কয়েকটি নির্দেশ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। রোগী ফেরানোর অভিযোগে ক্ষুব্ধ পুরমন্ত্রী কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের জানিয়ে বলেন, ”আগে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করুন, গরিব মানুষকে সুস্থ করুন, তারপর চিকিৎসার খরচের রেট নিয়ে দরাদরি করবেন।”
শুক্রবার বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে শুরুতেই বেশ কয়েকটি হাসপাতালের নাম করে অভিযোগ ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড থাকা সত্ত্বেও রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন পুরমন্ত্রী। পুরকর্তাদের অভিযোগ, ‘বেড খালি নেই’, ‘আইসিইউ ফাঁকা নেই’ – এসব অজুহাত তুলে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছে। বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়, হাসপাতালের বাইরে একটি সাইনবোর্ড লাগাতে হবে, যাতে লেখা থাকবে ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা আছে’। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা দেওয়ার জন্য পৃথক ওয়ার্ড চালুর সুপারিশ করেন পুরমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: কলকাতার ফুটপাথে মায়ের পাশ থেকে অপহরণ, পুলিশি তৎপরতায় ঘরে ফিরল খুদে]
প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলি ‘স্বাস্থ্যসাথী’ পরিষেবায় তেমন আগ্রহ দেখায়নি। কারণ, রাজ্যের সিংহভাগ মানুষ এই চিকিৎসা পরিষেবার অধীনে চলে আসায় ‘ব্যবসা’ হারানোর ভয় চেপে ধরেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির শীর্ষকর্তাদের মনে। তবে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দাবি, এখন আরও বহু নামী হাসপাতাল এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার তিনটি নামী সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল আবেদন করেছে।
[আরও পড়ুন: ভোটের আগে কলকাতায় অস্ত্র পাচারের ছক রুখে দিল পুলিশ, বাবুঘাট থেকে গ্রেপ্তার এক মহিলা-সহ ২]
এদিন বৈঠকে বিভিন্ন অসুস্থতায় রাজ্য সরকারের বেঁধে দেওয়া রেট বৃদ্ধির জন্য দরবার করেন নামী হাসপাতালের সিইও, ডিরেক্টর এবং জেনারেল ম্যানেজাররা। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে স্বয়ং মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণস্বরূপ নিগম হাসপাতাল কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রেট বৃদ্ধির বিষয়টি এখনও মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনাধীন আছে বলে স্বাস্থ্যদপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা এদিনের বৈঠকে জানিয়ে দেন। রোগী পরিষেবা নিয়ে ওই স্বাস্থ্যকর্তা জানিয়ছেন, আগে টোল ফ্রি নম্বরের পরিষেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ৮টি হেল্প ডেস্ক ছিল, এখন তা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের ৯৯ লক্ষ পরিবার ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। হাতে কার্ড পেয়েছেন প্রায় ৭৬ লক্ষ পরিবার। এর মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেই ৬ লক্ষ পরিবার ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন।
রাজ্য সরকার যে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ডের জন্য কী পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে, তার উল্লেখ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরের যুগ্মসচিব জানিয়ে দেন, গত ১ মাসে শুধুমাত্র আরএন টেগোর হাসপাতাল ‘স্বাস্থ্যসাথী’ র পরিষেবা দিয়ে ৪১ কোটি টাকা পেয়েছে সরকারের তরফে। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের প্রাপ্তি ১৪.৯৮ কোটি টাকা।