নব্যেন্দু হাজরা: আজ অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর কলকাতা মেট্রোর ৩৭ তম জন্মদিন। আর আজই কলকাতা মেট্রো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিল নন-এসি রেক। ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর যার হাত ধরে প্রথম মাটির তলা দিয়ে ছুটেছিল নন-এসি মেট্রো, সেই তপন নাথ প্রথম দিন যাত্রী নিয়ে তাঁর মেট্রো ছোটানোর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন সংবাদ প্রতিদিনকে।
“আগের দিন সন্ধ্যেবেলায় জানতে পেরেছিলাম পরদিন সকালে আমায় কলকাতার প্রথম মেট্রো (Metro Railway, Kolkata ) চালাতে হবে। শুরুতে যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। সারারাত ভাল করে ঘুমোতে পারিনি চিন্তায়। পরদিন রিপোর্টিং ছিল সকাল সাত’টায়। ময়দান স্টেশনে। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে। সেখান থেকে এসপ্ল্যানেড (Esplanade) স্টেশনে নিয়ে আসা হল আমাকে আর অন্য মোটরম্যান সঞ্জয় শীলকে। আরপিএফ এসকর্ট করে নিয়ে গেলেন। প্রথম মেট্রোয় চড়ার জন্য সে কি হুড়োহুড়ি ভিড় সেদিন এসপ্ল্যানেড স্টেশনে। মাটির তলা দিয়ে ট্রেন ছুটবে। প্রথমদিন এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত ছুটেছিল ট্রেন।”
[আরও পড়ুন : আরএসএসের রাজ্য সংগঠনে বড় রদবদল, গুরুত্বপূর্ণ পদে এলেন দিলীপ ঘনিষ্ঠ সুব্রত]
তপনবাবুর কথায়, “দিনটা ছিল বুধবার। প্রথম সেই অভিজ্ঞতার সাক্ষ্মী হতে মানুষ সকাল থেকেই চলে এসেছিলেন স্টেশনে। এক টাকা দাম ছিল টিকিটের। কাগজের টিকিট। সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা কী আর ভোলা যায়! প্রথম মেট্রো চলছে। আর তার প্রথম চালক আমিই। ভাবতেই তো এখনও গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রথম ট্রেন চলার আগে প্রায় বছর দুয়েক ট্রায়াল চলে। কিন্তু আগে থেকে জানানো হয়নি যে আমরা দু’জন ছোটাবো ওইদিন মেট্রো। যেই মুহূর্তে জানতে পারলাম বুকটা ধরাস করে উঠেছিল। টেনশন হলেও ভয় করেনি কখনও। ভোরবেলা উঠে রেডি হয়ে লেকটাউনের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলাম। তারপর এসে মোটরম্যানের ড্রেস পরে কেবিনে উঠে পড়া। এখনও সেই সব স্মৃতি চোখের মধ্যে ভাসছে।”
নন-এসি রেক ছুটবে না জেনেই খানিকটা মন খারাপ কলকাতা মেট্রোর প্রথম চালকের। তাঁর কথায়, “যখন শুনছি আর নন-এসি রেক চলবে না। মন তো একটু খারাপ হবেই। তবে সবেরই তো একটা মেয়াদ আছে। এগুলোর মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু নতুন রেক পর্যাপ্ত আসেনি। তাই এতদিন এগুলো চালাতে হতো। এবার থেকে যাত্রীরা সব এসি রেকেই চড়বেন। অনেক অনেক স্মৃতি রয়েছে কলকাতা মেট্রোকে নিয়ে। তা কোনওদিন ঝাপসা হওয়ার নয়। বছর কয়েক আগে আমি অবসর নিয়েছি। কিন্তু এখনও মেট্রোর সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ রয়ে গিয়েছে। প্রথম দিনটা এখনও আমার চোখের সামনে ভাসে। চোখের কোনায় জল চলে আসে।”