অর্ণব আইচ: ভিসার মেয়াদ ফুরানোর পরও দেশে ফিরে যাননি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কোনও নাগরিক। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও এই তিন দেশের কোনও বাসিন্দা কলকাতা বা জেলার কোথাও লুকিয়ে রয়েছে কি না, এবার সেদিকে নজর পুলিশের। একই সঙ্গে শহর ও জেলাগুলিতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের পুরনো স্লিপার সেল সম্পর্কেও খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন কলকাতা ও রাজ্যের গোয়েন্দারা। দিল্লিতে বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনার পর কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের সতর্ক করেছে লালবাজার ও ভবানীভবন। প্রত্যেকটি থানা ও গোয়েন্দা আধিকারিকদের কলকাতা ও বিভিন্ন জেলায় পাসপোর্ট নিয়ে আসা বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বাসিন্দাদের উপর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশকর্তারা। সেই সূত্র ধরে অভিবাসন দফতরও এই ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে পাসপোর্ট নিয়ে আসা বাসিন্দাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পর আর পুলিশকে কিছু না জানিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে তারা। এর পর দালালচক্রের হাত ধরে তারা ভুয়া ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে নিজেদের ভারতীয় নাগরিক বলেও পরিচয় দিয়েছে। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, এভাবে ভারতীয় নাগরিক সেজে লুকিয়ে থাকা বিদেশিরা সন্দেহজনক।
ইতিমধ্যে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের হাতে এভাবে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা ধরা পড়েছে। সম্প্রতি একইভাবে জাল পরিচয়পত্র নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে এই দেশে থাকার অভিযোগে দক্ষিণ কলকাতা থেকে তিন আফগানকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একইভাবে কলকাতা বা অন্য কোনও জেলায় কোনও পাক নাগরিক লুকিয়ে থাকার সম্ভাবনাও গোয়েন্দারা উড়িয়ে দেননি। আর এভাবেই গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ওই বিদেশি নাগরিকদের কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে বলেই অভিমত পুলিশের।
সূত্রের খবর, তার জেরে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানা ও গোয়েন্দা দপ্তরের সঙ্গে সংযোগ রেখেই কোন কোন বাংলাদেশি, আফগান ও পাক নাগরিক ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দেশে ফিরে যায়নি, সেই তথ্য গোয়েন্দারা জানার চেষ্টা করছেন। ওই বিদেশি নাগরিকদের তালিকা তৈরির পর তারা কোথায় লুকিয়ে থাকতে পারে, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে। গত কয়েক বছরে কলকাতার আশপাশ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে একাধিক জঙ্গি। কলকাতা ও কয়েকটি জেলায় জেএমবি, লস্কর-ই-তৈবা, হুজি, আনসারুল বাংলা টিমের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির স্লিপার সেল সামনে এসেছে গোয়েন্দা পুলিশের।
ওই পুরনো স্লিপার সেলগুলি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে কি না, অথবা স্লিপার সেলের সদস্যদের ফের জঙ্গি সংগঠনের নেতারা ব্যবহার করতে শুরু করেছে কি না, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়াও জামিনপ্রাপ্ত ও সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের কার্যকলাপের উপরও নজরদারি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
