রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পঞ্চায়েত নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। গেরুয়া নেতারা দাবি করছেন, ভোট লড়াইয়ে তাঁরা প্রস্তুত। কিন্তু বিজেপির দলীয় সার্কুলার বলছে অন্য কথা। ব্লকে যে সংগঠন নেই সেটা প্রমাণ হয়ে গেল রাজ্য বিজেপির পঞ্চায়েত প্রস্তুতি নিয়ে ৯ দফার নির্দেশিকাতেই। সেখানে প্রথমেই বলা হয়েছে, ব্লক ও অঞ্চল সমিতির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচ থেকে দশজনের বুথ কমিটি গঠনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে সার্কুলারে। সিংহভাগ বুথেই সক্রিয় কমিটি নেই বলে দলীয় সূত্রে খবর।
৭৬ হাজার বুথ, পাঁচ হাজারের বেশি অঞ্চল রয়েছে। এছাড়া, প্রশাসনিক ব্লক অনুযায়ী ব্লক সমিতি। কিন্তু সামনেই যখন পঞ্চায়েত ভোট তখন সব ব্লক সমিতি গঠিতই হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে যখন পঞ্চায়েত ভোট হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করেছে গেরুয়া শিবির তখন সংগঠনের এই হাল নিয়ে সরব দলের বিক্ষুব্ধ শিবির। পাশাপাশি বুথ সশক্তিকরণের কাজে দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে (Mithun Chakraborty) দায়িত্ব দিয়েছিল বঙ্গ বিজেপি। গত জুলাই মাসে দলীয় বৈঠকে রাজ্য বিজেপির তরফে বলে দেওয়া হয় যে, বুথ সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট মিঠুনকে করতে হবে। এরপরই অবশ্য মিঠুনকে বুথ সশক্তিকরণ অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে।
বাংলায় বিজেপির (BJP) সংগঠন নিয়ে কোনও অভিজ্ঞতাই নেই মিঠুন চক্রবর্তীর। তিনি বুথের কী বুঝবেন? চার মাস কেটে যাওয়ার পর পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের মিঠুনকে মাঠে নামাতে হচ্ছে বিজেপিকে। গেরুয়া শিবিরের একাংশের মতে, বুথস্তরে দলের সংগঠন তলানিতে তখন মিঠুনকে নামিয়ে পঞ্চায়েতে গেরুয়া পালে হাওয়া তুলতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও, শাসক শিবিরের কটাক্ষ, একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও বিজেপির হয়ে ভোট প্রচারে গিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। তাতে কোনও লাভ হয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, দল আন্দোলনে নেই। বিরোধী রাজনীতির পরিসর দখল করতে এগিয়ে যাচ্ছে বামেরা।
[আরও পড়ুন: বিহারে লরির ধাক্কায় মৃত ১২ পুণ্যার্থী, আর্থিক সাহায্য ঘোষণা কেন্দ্র ও রাজ্যের]
গেরুয়া শিবিরের আদি নেতারা দলের ক্ষমতাসীন শিবিরের দিকে আঙুল তুলে এমন অভিযোগও করছেন। আন্দোলন বিমুখ বঙ্গ বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে গত জুলাই মাসের বৈঠকে মিঠুন আন্দোলন বাড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন। মিঠুন চক্রবর্তীও বলে দিয়েছিলেন, বুথস্তরেও কাজ করতে রাজি তিনি। রাজ্য নেতাদের উপর কার্যত ভরসা হারিয়ে ফের মিঠুনকে প্রচারে নামিয়ে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহলে মিঠুন চক্রবর্তীকে দিয়ে একাধিক সভা করাতে চাইছে বিজেপি। বীরভূমেও যাবেন মিঠুন। পঞ্চায়েত কার্যকর্তা সম্মেলনে থাকবেন মহাগুরু। ২৩ নভেম্বর, পুরুলিয়া থেকে পঞ্চায়েত কার্যকর্তা সম্মেলন শুরু হবে। মিঠুনের সঙ্গে থাকবেন সুকান্ত মজুমদার।
রাজ্য বিজেপির তরফে পঞ্চায়েত নির্বাচন বিষয়ক যে সার্কুলার এসেছে তাতে আরও বলা হয়েছে ব্লক ও পঞ্চায়েত সম্মেলন শুরু করার জন্য। সমস্ত কর্মসূচি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার পঞ্চায়েত কো-অর্ডিনেটরদের। বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।