স্টাফ রিপোর্টার: জিজ্ঞাসাবাদের নামে তলব করে অকারণে হয়রান করা নিয়ে বিভাগীয় আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় এবার অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের জেরার সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারি করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। নয়া সেই নিয়ম অনুযায়ী, অভিযুক্তই হোন বা সাক্ষী, কাউকেই তলব করে দীর্ঘ সময় ধরে অকারণে অফিসে বসিয়ে রাখা যাবে না। জেরার জন্য যাঁদের তলব করা হবে, তাঁদের ‘অফিস আওয়ার’-এর মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। খুব বেশি রাত পর্যন্ত জেরা করা যাবে না। বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। দিল্লির দপ্তর থেকে জারি হওয়া এই নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ দেশের প্রত্যেকটি ইডি অফিসে পাঠানো হয়েছে।
ইডি সূত্রের খবর, গত বছর মুম্বই হাই কোর্টে ইডি বনাম রাম কোটুমল ইসরানির মামলার রায়ের ভিত্তিতে সম্প্রতি দিল্লির ইডি দপ্তর থেকে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বুধবার এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, "ইডির সার্কুলার আপাতদৃষ্টিতে ভালো। দীর্ঘসময় বসিয়ে রাখায় একটা মানসিক চাপ তৈরি হয়। এজেন্সি অনেক সময় এটা করে। আশা করি, নতুন সার্কুলারে সমস্যা মিটবে।"
জানা গিয়েছে, মুম্বই হাই কোর্টে মামলার আবেদনকারী ৬৪ বছরের ওই বৃদ্ধকে একটি মামলায় ইডির দিল্লির অফিসে তলব করা হয়েছিল। আদালতে পেশ করা তাঁর বয়ান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট সকাল ১১টায় তিনি ইডির দপ্তরে পৌঁছন। তাঁকে রাত দশটার সময় ‘ইন্টারোগেশন রুমে’ নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয় জেরা। ভোর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত জেরা করার পর ভোর সাড়ে পাঁচটায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। সারারাত তাঁকে ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। অথচ রাতে ঘুম তাঁর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। ইডি মৌলিক অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছে। এমনকী, বাথরুমে গেলেও ইডি আধিকারিকরা তাঁর সঙ্গে যান। সকাল সাতটায় তাঁকে ইডি আধিকারিকরা দিল্লি বিমানবন্দরে নিয়ে যান। সকাল দশটার বিমান মুম্বইয়ের বিমানবন্দরে পৌঁছয় দুপুর সওয়া বারোটায়। দুপুর দুটোয় মুম্বইয়ের ইডি অফিসে পৌঁছনোর পর বিকেল সোয়া পাঁচটায় তাঁকে ইডির তরফে মুম্বইয়ের আদালতে পেশ করা হয়। অথচ তাঁকে অভিযুক্ত হিসাবে তলব করা হয়নি। দিল্লির কোনও আদালতে তাঁর ট্রানজিট রিমান্ড নেওয়া হয়নি। ফলে ওই বৃদ্ধের গ্রেপ্তার বেআইনি বলে দাবি করেন অভিযুক্তর আইনজীবী। সেই মামলার রায়েই ইডির জেরার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি ইডির পক্ষে আধিকারিকদের জন্য অভিযুক্ত বা সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করার জন্য যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তার ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তিকে বিশেষ তারিখ ও সময়ে তলব করার আগে সংশ্লিষ্ট ইডি আধিকারিককে প্রশ্নমালা ও সংশ্লিষ্ট নথি তৈরি রাখতে হবে। যখন আধিকারিক কোনও ব্যক্তিকে তলব করবেন, তখনই তিনি যেন এমনভাবে তাঁর আসার সময় ঠিক করেন, যাতে তাঁকে বসে থাকতে না হয়। কোনও আর্থিক তছরুপের মামলায় যদি আধিকারিকের মনে হয় যে, অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত প্রমাণ, নথি নষ্ট করতে পারে, তবে ওই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক সেই দিনেই বা পরদিনই তাকে তলব করে তাড়াতাড়ি জেরার প্রক্রিয়া শেষ করবেন। এর ফলে ওই ব্যক্তিও তথ্য বা প্রমাণ নষ্ট করার সময় পাবেন না। যাঁকে তলব করা হচ্ছে, তাঁকে যেন অফিস চলাকালীনই জেরা করা হয়। জেরা যেন রাত পর্যন্ত টানা না হয়। প্রবীণ নাগরিক এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট বা শারীরিক অবস্থা বুঝে অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তিকে অবশ্যই অফিস চলাকালীনই জেরা করতে হবে। প্রয়োজনে পরের দিন বা অন্য কোনও দিনে তাঁকে জেরার জন্য তলব করা যেতে পারে। তবে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেও উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়।
যদি কোনও ব্যক্তির জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হয় এবং তদন্তকারী আধিকারিক যদি মনে করেন যে, ওই ব্যক্তি প্রমাণ বা নথি নষ্ট করতে পারেন, পালিয়েও যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে ওই নিয়মে ছাড় অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়াও কারও বিরুদ্ধে আগে ইডির তলবে সাড়া না দেওয়া বা পালিয়ে বেড়ানোর প্রমাণ থাকলে ডেপুটি ডিরেক্টর, জয়েন্ট ডিরেক্টর বা অতিরিক্ত ডিরেক্টরের প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে তাকে অফিসের সময়ের পরেও জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে বলে ইডির ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে।