সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে চাকরিহীন ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। তার ফলে সংকটে রাজ্যের একাধিক স্কুল। এই রায়ের ফলে চাকরিহারাদের হাহাকারে ভারী কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত। কেউ পরিবারের একমাত্র চাকুরিজীবী। কারও বা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়ভার কাঁধে। কারও ঘরে ছোট সন্তান। কীভাবে হবে দিন গুজরান? এই চিন্তাই যেন রাতের ঘুম কেড়েছে চাকরিহারাদের। তাঁদের ভেঙে না পড়ার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সমাবেশেও যোগ দেবেন তিনি। ভুক্তভোগীদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে পয়লা বৈশাখের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য প্রার্থনা 'চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিহারাদের ঐক্যমঞ্চ'র সদস্যদের। আগামী ২১ এপ্রিল নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে চাকরিহারাদের একাংশ।
শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে 'চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিহারাদের ঐক্যমঞ্চ'র সদস্যরা সাংবাদিক বৈঠক করেন। তাঁরা বলেন, "আর প্রতিশ্রুতি নয়। আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধান করে দিন। আগামী ১৫ এপ্রিল অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের মধ্যে নবান্নের সভাঘরে বৈঠক করুন। ওই বৈঠকে বসে সমস্যা সমাধান করুন।" সমস্যা না মিটলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেয় 'চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিহারাদের ঐক্যমঞ্চ'। আগামী ২১ এপ্রিল পথে নামার হুঁশিয়ারি তাঁদের। নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে চাকরিহারাদের একাংশ। ভিনরাজ্যে কাজ করা বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদেরও এই মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
উল্লেখ্য, দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল, কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বাতিল হয়েছিল ২০১৬-র এসএসসি প্যানেল। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কোর্টের কলমের খোঁচায় চাকরি হারিয়েছিলেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। শীর্ষ আদালতে দফায় দফায় সেই মামলার শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাই কোর্টের চাকরি বাতিল এবং বেতন ফেরতের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। তারপর থেকে দফায় দফায় শুনানি চলছিল।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল শেষ শুনানি। তখন সিবিআই জানায়, তারা চাইছে, কলকাতা হাই কোর্টের ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায় বহাল থাকুক। স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে, ব়্যাঙ্ক জাম্প বা প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য তাদের কাছে নেই। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, একসঙ্গে এতজন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হলে বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। সবপক্ষের সওয়াল শোনার পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। গত ৩ এপ্রিল চূড়ান্ত রায় শোনান তিনি। বাতিল করেন ২৫,৭৫২ হাজার চাকরি।