সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কঠিন আন্দোলন গড়িয়েছে ৬০০ দিনে। দিনের পর দিন রোদ-জল-বৃষ্টিতে পড়ে থাকা আন্দোলন প্রকৃতই কঠিন, ধুলো-বালির সঙ্গে মাঝমাঝেই পাওনা হয় পুলিশের ডান্ডা। তবু নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকা। আর তার মধ্যেই জন্ম একটি সম্পর্কের! বলি চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে খুকুমণি আর মিঠুনের প্রেমকাহিনি। এমনকী সম্প্রতি বিয়ে করেছেন ওঁরা। টালামাটাল বর্তমানে থেকেও ঝলমলে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন খুকুমণি দোলই ও মিঠুন বিশ্বাস। বিশ্বাস করেন, দেরি হলেও চাকরি পাবেন ঠিক।
নদিয়া (Nadia) আর মেদিনীপুরের (Midnapur) দেখা হয়েছিল কলকাতায়, এসএসসি নিয়োগ-দুর্নীতির আন্দোলনের মঞ্চে (SSC Candidates Stage Protest)। কার্যত আন্দোলনই জীবনসঙ্গী খুঁজে দিল নদিয়া চাপড়ার বাসিন্দা মিঠুন বিশ্বাস ও পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার বাসিন্দা খুকুমণি দোলইকে। নিয়োগ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাকী রাস্তায় নেমে দোকা হওয়ার গল্পে রয়েছে আশ্চর্য প্রেমের সেতু। দু’টি দুঃখের জীবনে আচমকা সুখের ঝিলিক! প্রেম মানে তো এটুকুই! তবে হঠাৎ তা সম্ভব না।
[আরও পড়ুন: হাওড়া স্টেশনে শৌচালয় ব্যবহারে টাকা নেওয়ার অভিযোগ, চুক্তি বাতিল ঠিকা সংস্থার]
সম্পর্কের সূত্রপাত ২০২০ সালে, খুকুমণি-মিঠুন বিয়ে করলেন ২০২২-এর আগস্টে। মিঠুন জানান, আন্দোলনের শুরুতে আলাপ হলেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ২০২১ সালে, তখন মেয়ো রোড থেকে আন্দোলন জায়গা বদলে পৌঁছেছে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নম্বর গেটে, অস্থায়ী মঞ্চে। পরে সেই আন্দোলন যায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুকুমণি-মিঠুন একে অপরের কাছে আসেন। শেষ পর্যন্ত জীবনের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত, চলতি বছরে আগস্ট মাসে বিয়ে করলেন ওঁরা। প্রশ্ন ওঠে, বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন কী করে? যখন অনিশ্চিত চাকরি, ধোঁয়াশায় ঢাকা ভবিষ্যত?
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে মিঠুন বলেন, “কঠিন সিদ্ধান্ত। জানি না কবে চাকরি হবে। কিন্তু আজ না হয় কাল, চাকরি আমরা পাবই। বিশ্বাস করি।” তাছাড়া প্রেমের শুরু থেকে ঝড় সামলাচ্ছেন দু’জনেই, দাবি মিঠুনের। বেকার দু’জনের আয় বলতে ছিল প্রাইভেট টিউশানি। তাতে কোপ পড়ে আন্দোলনে যোগ দিতে। মিঠুন বলেন, “তবু একসঙ্গে বাঁচার ইচ্ছে মরেনি।” আপত্তি করেনি পরিবার? মিঠুনই বলেন, “ওঁর (খুকুমণি) বাড়ি থেকে আপত্তি উঠেছিল। বেকার ছেলেকে কে মেয়ে দিতে চায় বলুন!” কিন্তু পরিবারকে খুকুমণি জানায়, মিঠুনেকই বিয়ে করতে চায় সে। এরপর আর কোনও আপত্তি ধোপে টেকেনি।
[আরও পড়ুন: পাঁচিল তোলাকে কেন্দ্র করে রক্ত ঝরল সরশুনায়, ৬ জনকে ধারাল অস্ত্রের কোপ]
মিঠুন জানান, অল্প জমিজমা আছে পরিবারের। চাষবাস করেন আর টিউশানিতে টেনেটুনে চলে সংসার। বিয়ে করলেও আন্দোলনের মঞ্চ ছাড়বেন না কিছুতে। আজ খুকুমণি তো কাল মিঠুন, খুকুমণি মিছিলে তো মিঠুন ধর্নায়… ভাগে যোগে এএসসি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়া যাবেন। মিঠুনের কথায়, “আদালত তো বলছে, আন্দোলনকারীদের দাবি ন্যায্য। আমাদের মনে হয়, আমরা ঠিক একদিন চাকরি পাব।” এই স্বপ্নে বুঁদ হয়েই মিঠুনের সঙ্গে যখন কথা বলছিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল, তখন মিছিল স্লোগান তুলছিলেন খুকুমণি। সেই কারণে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও কথা বলা যায়নি আন্দোলনকারী নববধূর সঙ্গে।