রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: একা লড়তে হবে এই ভয়ে ঘুম উড়েছে বঙ্গ সিপিএমের নেতাদের। হাত ছাড়া যদি লড়তে হয় এই আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন আলিমুদ্দিন। সিপিএম নেতারা এখন কংগ্রেসকে হাতে-পায়ে ধরে চাপ দিচ্ছে এ রাজ্যে তাদের ছেড়ে যেন না যায় কংগ্রেস। কংগ্রেস যেন তৃণমূলের সঙ্গে জোট না করে। হাত ধরার অধীর অপেক্ষায় কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয় সেদিকে নজর রাখছে আলিমুদ্দিন।
রাজ্য কমিটির রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Mohammad Selim) রাজ্য নেতাদের বলেছেন, কংগ্রেস যদি কথা বলতে চায় সিপিএম (CPIM) প্রস্তুত। কংগ্রেসের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে পার্টি। রাজ্য কমিটির বৈঠকে একথা বললেও বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য কংগ্রেসের জন্য আকূল হয়ে অপেক্ষায় থাকার বিষয়টি চেপে গিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। সেলিম বলেন, “বিজেপি ও তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে যাদের সংশ্রব থাকবে না তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হবে। যারা বিজেপি ও তৃণমূল সম্পর্কে দূর্বলতা দেখাবে তাদের থেকে শতসহস্র যোজন দুরে আমাদের অবস্থান হবে।’’ কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত কংগ্রেস নেবে একথা বলেও এদিন জোট করতে কংগ্রেসের উপর কৌশলে চাপও সৃষ্টি করতে চেয়েছেন মহম্মদ সেলিম। সেলিম বলেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বলব, কেউ দেখে শেখে, কেউ ঠেকে শেখে। বাংলায় কংগ্রেস ঠেকে শিখেছে।’’
[আরও পড়ুন: আর্থিক প্রতারণা মামলায় ইডির চার্জশিটে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম! লোকসভার আগে মাথায় হাত কংগ্রেসের]
একথা বলে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হওয়ার উদাহরণ তুলে খোঁচা দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। প্রসঙ্গত, বাংলা, ত্রিপুরা ও কেরলের বাইরে সিপিএমের গুরুত্ব সেই অর্থে আগে ছিল না। আর একমাত্র কেরল ছাড়া বর্তমানে বাংলা ও ত্রিপুরায় পার্টির সংগঠন তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে রাহুল গান্ধীর হাত ধরে টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরিরা (Sitaram Yechuri)। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যদি সত্যি সত্যিই বাংলায় তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট হয়ে যায়, তা হলে তারা যে অকূল পাথারে পড়ে যাবে, এই আশঙ্কাতেই রাতের ঘুম উড়েছে সিপিএমের। ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের শুরু থেকেই নিজেদের ‘অদ্ভুত’ বক্তব্যে অনড় ছিলেন সীতারাম। জোটধর্মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তাঁদের বক্তব্য ছিল, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস ও কেরলে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট করবেন না। বাকি রাজ্যগুলিতে অবশ্য ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’। সিপিএমের এই দ্বিচারিতা নিয়ে বাংলায় পার্টির নিচুলার কর্মীদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে।
[আরও পড়ুন: গ্যালাক্সির বাইরে জনঅরণ্য, দরবারে এসেই ভক্তদের ‘সালাম নমস্তে’ জানালেন ‘সুলতান’ সলমন]
এদিকে, জোট প্রসঙ্গে তৃণমূল এদিন বলেছে, সিপিএম চাইছে, কংগ্রেস যেন তৃণমূলের সঙ্গে জোটে না আসে। কারণ, সিপিএমের অস্তিত্বের লড়াই। সংকটটা বিজেপির আর সিপিএমের। এরাই জোট নিয়ে চিন্তায় আছে। বিজেপির আশঙ্কা হচ্ছে ক্ষমতা থেকে চলে যাবে। আর সিপিএমের শঙ্কা হচ্ছে, দলটা উঠে যাবে। তৃণমূল নেতৃত্ব এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল একাই একশো। আর যদি জোট দরকার হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরা কংগ্রেসের বিষয়ে কথা বলছেন। সিপিএমের সঙ্গে জোট নিয়ে বাংলায় কথা বলার কোনও প্রশ্নই নেই। এদিকে, বৃহস্পতিবার সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষ দিনে রুদ্ধদ্বার আলোচনায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, জোট ভাঙার কথা বললে চলবে না। তবে আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পার্টির ভোট বাড়ানোটাই মূল লক্ষ্য। সেটা করতে যেটা করার দরকার করতে হবে।