shono
Advertisement
West Bengal Lok Sabha Election

লোকসভা, বিধানসভাতে এবার শূন্যের পরিবর্তন হবেই, আত্মবিশ্বাসী বিমান

দলে ‘পরীক্ষিত, সংগ্রামী’ নেতৃত্বের অভাব ছিল। নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি করে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে ধৈর্য ধরতে হচ্ছে, মানছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান।
Published By: Subhajit MandalPosted: 12:39 PM May 20, 2024Updated: 03:11 PM May 20, 2024

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সাংবাদিক বৈঠক ডাকলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাস্তার উপর পার্টি অফিসের দোতলার ঘরটা এক সময় গমগম করত। খুব জরুরি দরকার না থাকলে সেটা এখন শূন‌্যই থাকে। সেই ঘরেই টেবিলের ওপারে বামফ্রন্ট চেয়ারম‌্যান বিমান বসু। শান্ত ছোটখাটো শরীর। বয়স ৮০ পেরিয়েছে বছর তিনেক। মিনিট ২৫ কথা চলতে চলতে দলের ফলাফলের কথা আসতেই তাঁর মেজাজ খানিক চড়ল। আঙুল তুলে একপ্রকার ঘোষণা করলেন, সিপিএম এবার আর শূন‌্য থাকবে না। শূন্যের পরিবর্তন হবেই। বললেন, “বারবার আমাদের সম্বন্ধে বলা হয় শূন‌্য, শূন‌্য, শূন‌্য। ওরা কথা কেন বলছে? ওরা তো শূন‌্য। হ্যাঁ, আমরা বিধানসভায় শূন‌্য, লোকসভায় এ রাজ‌্য থেকে শূন‌্য। কিন্তু এ কথা বলতে পারি, রাজ‌্য থেকে লোকসভায় এবার শূন‌্য আমরা থাকব না। আগামিদিনে বিধানসভা নির্বাচনেও শূন‌্য থাকব না। এই শূন্যের পরিবর্তন করতে হবে।”

Advertisement

২০০০ সাল থেকেই বামপন্থী আন্দোলনের সামনে দক্ষিণপন্থী দলের দাপাদাপি শুরু। সে কথা উল্লেখ করে তার কারণও ব‌্যাখ‌্যা করলেন ফ্রন্ট (Left Front) চেয়ারম‌্যান। বললেন, দলে ‘পরীক্ষিত, সংগ্রামী’ নেতৃত্বের অভাব ছিল। অনেকেই হয় নেই, না হয় অসুস্থ। তাতেই একটা বড় শূন‌্যস্থান তৈরি হয়ে যায়। তাই নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরি করে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে ধৈর্য ধরতে হচ্ছে। বিমানবাবুর (Biman Basu) তাই দাবি, “আমি জোর দিয়ে বলছি এবার আর শূন‌্য থাকবে না। ভয়ংকর পরিবর্তন হতে পারে। সেই পরিবর্তনের জন‌্য অপেক্ষা করতেই হবে। সব কিছু স্ট‌্যাটিক থাকে না।”

[আরও পড়ুন: শ্লীলতাহানিতে ‘অভিযুক্ত’ জওয়ানকে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরাল নির্বাচন কমিশন, দায়ের FIR]

চব্বিশের লোকসভা (West Bengal Lok Sabha Election) নির্বাচনে এ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের আসন সমঝোতা। ২২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম (CPIM)। তাঁদের অর্ধেক প্রার্থীই হয় যুব সম্প্রদায় থেকে অথবা যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে এমন ভেবে রাখা হয়েছে। বিমানবাবুর কথায় ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই ট্রেন্ড আরও বাড়বে ২৯৪ আসনে। নতুন প্রজন্মের এই নেতৃত্বই ভবিষ‌্যতের সম্পদ বলে তাঁর মত। তবে কংগ্রেসের একটা অংশের অভিযোগ, সিপিএম এবার তাদের নতুন প্রজন্মের কোমর শক্ত করে দিতে কংগ্রেসের কাঁধে ভর করেছে। বিমানবাবু তা মানেন না। বলেন, “আমাদের কোনও জোট হয়নি, হয়েছে আসন সমঝোতা। যেখানে যেখানে তা হয়েছে, সেখানে বোঝাপড়া করে প্রচার, লড়াই হচ্ছে। বোঝাপড়া মানেই একটা মঞ্চ হয়ে গেল, তেমন নয়। তবে মঞ্চও হয়েছে অনেক জায়গায়। কিন্তু বামফ্রন্টের অস্তিত্ব এখনও আছে। ফলে আমরা বামফ্রন্টের প্রার্থী আর কংগ্রেসের প্রার্থী একসঙ্গে বোঝাপড়া করে নিয়ে এগিয়েছি।” আসন সমঝোতাই হোক বা জোট, ভবিষ‌্যতেও কি এর অস্তিত্ব থাকবে? “সে প্রয়োজনীয়তা তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। যদি রাজনৈতিক পরিবেশ এইরকম থাকে তখন সমঝোতা এরকমই থাকবে”– তাঁর সাফ জবাব।

আইএসএফের সঙ্গে এই সমঝোতা কেন হল না তা নিয়েও তাঁর নিজস্ব মত রয়েছে। বিমানবাবুর কথায়, “আমরা চেয়েছিলাম আইএসএফ (ISF) আমাদের সঙ্গে থাকুক। আন্তরিকভাবেই চেয়েছি। কিন্তু আইএসএফ চাইল না আন্তরিকভাবে। তারা ৮টা আসনে লড়ার কথা বলল। পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে তারা নতুন। ৮টা আসনে লড়বে কীভাবে? আমরা সেটা বুঝি, কিন্তু আইএসএফ বোঝে না।” তাঁর বক্তব‌্য, “ওরা ২টো আসনে রাজি হলে আমরা বোঝাপড়া করতাম। রাজি নয়, তারা আরও বেশি আসন চাইছিল। সেটাই প্রমাণ হয়ে গেল, তারা এখন ১৭টা আসনে লড়াই করছে।” বিমানবাবুর মতে, “ওরা ৪২ আসনের মধ্যে ১৭ আসনে লড়াইয়ের জায়গায় পৌঁছেছে বলে আমার মনে হয় না। বাস্তবের মাটি বিচার করে সেই সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে বলে মনে হয়নি। রাজনীতিটা সামনে না থাকলে যা হয় তাদের তাই হয়েছে।”

[আরও পড়ুন: ভোটের লাইনে প্রবীণদের এগিয়ে দিলেন স্মৃতি, রায়বরেলির ভোটারদের বিশেষ বার্তা রাহুলের

জীবনে ভোটে লড়েননি, দলের কাজে থাকতে চেয়েছেন বরাবর। হরেকৃষ্ণ কোঙার, প্রমোদ দাশগুপ্তর কথাতেও রাজি হননি। বেশি জোরাজুরি করায় একবার বলেই ফেলেছিলেন, এমন জানলে অন‌্য রাজ্যে গিয়ে রাজনীতি করতেন। দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্র আর রাজ‌্য দুই সরকারকেই দোষেন। জেদ আর কথার ভার যৌবনের মতো না হলেও এখনও তিনিই মুজফফর আহমেদ ভবনের শেষ কথা। সেখানে তাঁর একটা নিজস্ব জগৎও রয়েছে। দলের নীতি, পার্টি কালচার, ভোটের ফল নিয়ে বলতে বলতে কথা মাঝেমাঝে নরম হয়। বুদ্ধ-বিমান জুটির কথা আসতে একটা কষ্ট বেরিয়ে আসে। বলে ফেলেন, “বুদ্ধ সঙ্গে থাকলে ভাল হত। ওর অনুপস্থিতি আমাদের একটা বড় লস। ও থাকলে খুব সুবিধা হত।” বলেন, “১ মার্চ ওর জন্মদিনে গিয়েছিলাম। বুদ্ধ আমার থেকে প্রায় ৪ বছরের ছোট। কিন্তু ওর শরীরটা এরকম হয়ে গেল। চোখে দেখতে পায় না। গলার স্বরে মানুষকে বুঝতে পারে। কথা বলার মতো অবস্থা বেশিরভাগ সময়ই থাকে না, কথা বলতে অসুবিধা হয়। কাগজ পড়তে পারে না, বইও না। ওই বই পড়তে না পারা, ওটাই ওর সব থেকে জ্বালা-যন্ত্রণার জায়গা।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • জীবনে ভোটে লড়েননি, দলের কাজে থাকতে চেয়েছেন বরাবর।
  • হরেকৃষ্ণ কোঙার, প্রমোদ দাশগুপ্তর কথাতেও রাজি হননি।
  • বেশি জোরাজুরি করায় একবার বলেই ফেলেছিলেন, এমন জানলে অন‌্য রাজ্যে গিয়ে রাজনীতি করতেন।
Advertisement