বাবুল হক, মালদহ: মিষ্টির স্বাদ আবার তেতো? শুনে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, রসগোল্লা ঝাল হয় শুনেছি, কিন্তু তেতোও হচ্ছে? কারা খাচ্ছেন? বর্ষবরণের সন্ধ্যায় তেতো মিষ্টির কদর কম ছিল না মালদহ শহরের হিন্দি স্কুলের সামনে জেলা ক্রীড়া সংস্থা লাগোয়া মাঠে। রাজা ঘোষের মিষ্টির দোকানে বেজায় ভিড়। বেশিরভাগই বয়স্ক মানুষ। কারণ সেই একটাই, তেতো রসগোল্লা। এক-একটির দাম মাত্র ২০ টাকা। নগদে কিনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাবার করছেন অনেকেই। অনেকে আবার কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
বড়দিনের কার্নিভালের শেষ রাতে ইংরেজবাজার শহরের বালুচরে হিন্দি স্কুলের সামনের মাঠে ‘খাই-খাই’ মেলার সৌজন্যে দেদার বিক্রি হয়েছে এই তেতো মিষ্টি। যা দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। ইংরেজবাজার শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মহেশমাটি এলাকা থেকে তেতো রসগোল্লার নাম শুনেই ছুটে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, “শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বেঁধেছে। মিষ্টি খাইনি দীর্ঘ কয়েক বছর। তেতো মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে শুনেই ছুটে এসেছি। কিছুটা পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।”
[আরও পড়ুন: ১-৭ জানুয়ারির Horoscope: সিংহ রাশির জাতকদের জীবনে বড় বদল! বছরের প্রথম সপ্তাহ কেমন কাটবে আপনার?]
না, শুধু মেলা উপলক্ষেই এই তেতো মিষ্টি তৈরি করেননি দিয়া দই ভান্ডারের কর্নধার রাজা ঘোষ। মালদহ শহর থেকে মাত্র প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুচিয়ার মহাদেবপুরে রাজাবাবুদের দই ও মিষ্টি তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখানেই বছর কয়েক ধরে অন্যান্য মিষ্টির সঙ্গে ঝাল ও তেতো মিষ্টিও তাঁরা তৈরি করেন। সুগারের রোগীদের জন্য তেতো মিষ্টি কিনতে অনেকেই নিয়মিত ছুটে যান মুচিয়ার মহাদেবপুরে। ব্যবসাও ভাল হচ্ছে। চাহিদাও বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এই বর্ষশেষের উৎসব মরশুমে আরও প্রচার মিলেছে জেলাজুড়ে। এবার রাজাবাবুরা চান, এই তেতো মিষ্টি বিদেশেও রপ্তানি করবেন। সেই উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা।
মিষ্টি ব্যবসায়ী রাজা ঘোষ বলেন, “আজকাল অন্তত ৭৫ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস আক্রান্ত। বিশেষ করে তাঁদের কথা ভেবেই এই তেতো মিষ্টি তৈরি করছি। যে হারে এই অসুখ বাড়ছে, খুব শীঘ্রই একটা সময় আসবে যে, সবাই তেতো মিষ্টিই খুঁজে বেড়াবেন। আমরা মালদহ থেকেই বাংলাদেশ-সহ অন্যান্য দেশে এই মিষ্টি রপ্তানি করতে উদ্যোগী হয়েছি। সরকারি সহায়তাও দরকার আছে।” শুধু ঝাল বা তেতো নয়, এগারো রকমের ভিন্ন স্বাদের রসোগোল্লা তৈরি করেন এই মিষ্টি ব্যবসায়ী। শুরুতেই হিট করেছে মেলার বাজার। নাম শুনে অনেকেই হয়তো মুখ ফেরাচ্ছেন। তবে মিষ্টিপ্রেমীরা এক সঙ্গে বিপরীত দুই স্বাদ নিতে ভিড় করছেন। একটি রসগোল্লা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।
[আরও পড়ুন: বর্ষবরণের রাতে বিধিভঙ্গের অভিযোগে কলকাতায় গ্রেপ্তার ৫৪০ জন, বাজেয়াপ্ত ৮০ লিটার মদ]
ওই ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে বহু মানুষ মধুমেহ রোগে আক্রান্ত। মিষ্টি পছন্দের খাবার হলেও রোগ আক্রান্তের ভয়ে অনেকেই খাওয়া ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই সুগার ফ্রি মিষ্টি অনেক আগেই বাজারে নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। এবার সুগারের ভয় কমাতে নতুন সংযোজন তেতো মিষ্টি। এই তেতো রসোগোল্লা তৈরি করা হচ্ছে করলা দিয়ে। বিশুদ্ধ ছানার রসোগোল্লা তৈরি করে চিনির রসে দেওয়া হচ্ছে। সেই রসে দেওয়া হচ্ছে করলা। আবার ঝাল রসোগোল্লায় দেওয়া হচ্ছে কাঁচা লঙ্কার গুঁড়ো। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে গাজর, লিচু, আনারস-সহ বিভিন্ন স্বাদের রসোগোল্লা তৈরি করছেন তাঁরা। অবশ্যই বাজিমাত করছে তেতো রসগোল্লা।