গৌতম ব্রহ্ম: ‘বাড়ি নিয়ে যান। আর কিছু করার নেই। রোগীর মেয়াদ বড়জোড় এক মাস।’ বছর পাঁচেক আগে এমনই নিদান দিয়েছিলেন হাজরার এক সরকারি হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ। রোগীকে বাড়ি পাঠিয়ে শেষ ইচ্ছা পূরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। কান্নার রোল উঠেছিল হাওড়ার সাঁতরাগাছির সামন্ত পরিবারে। বাড়ির কর্তা আশিস সামন্তর আয়ূ যে আর মাত্র এক মাস!
[ প্রতাপচন্দ্র হোমিওপ্যাথি কলেজে অচলাবস্থা, বহু ডাক্তারের ডিগ্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা]
আশিসবাবুকে যমের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছে আয়ুর্বেদ। আরও ভালভাবে বললে রক্তচোষা জোঁক। সুশ্রুতের বিধান মেনে লিচ থেরাপি বা জলৌকা বচরণের মাধ্যমে আশিসবাবুকে দুরারোগ্য কর্কটরোগের অভিশাপ থেকে প্রায় মুক্ত করে ফেলেছে শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠ। অন্তত তেমনই দাবি রাজাবাজারের এই সরকারি আর্য়ুবেদ হাসপাতালের পঞ্চকর্ম বিশেষজ্ঞ আশিসকুমার দাসের। তিনি জানিয়েছেন, ‘আশিসবাবুর মুখে রডেন্ট আলসার বা ব্যাসাল সেল ক্যানসার হয়েছিল। রোগের ছোবলে নষ্ট হয়ে যায় বাঁ চোখ। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছিল পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত। থাবা বসিয়েছিল ডান চোখেও। ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল মুখাবয়ব। পাঁচ বছর লড়াইয়ের পর ৬২ বছরের আশিসবাবু এখন অনেকটাই সুস্থ।‘ স্বভাবতই খুশি রোগীর পরিবার। এক মাসের আয়ু নিয়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় পার করে দিলেন আশিসবাবু! কিন্তু, ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসকরা যা করলেন না, তা সামান্য জোঁক করে ফেলল কী করে? আর্য়ুবেদ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘শুধু জোঁক থেরাপি নয়, আশিসবাবুকে কিছু ওষুধও দেওয়া হয়েছিল। এবং অবশ্যই সকালে খালিপেটে ৩০ মিলিলিটার শোধিত গো মূত্র বা গোধন-অর্ক।’
রক্তমোক্ষণ থেরাপি বা ‘ব্লাড লেটিং’ প্রায় হাজার পাঁচেক বছরের পুরানো চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতিরই অন্যতম জলৌকা থেরাপি বা লিচ থেরাপি। অনেকে একে হিরুডোথেরাপিও বলে থাকেন। প্রথমে রোগীর ক্ষতস্থান বা রোগগ্রস্ত জায়গায় তিন-চারটি ‘হিরুডো মেডিসিনালিয়া’ বা নির্বিষ জোঁক বসানো হয়। আয়ুর্বেদ পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তথা শ্যামাদাস বৈদ্যশাস্ত্রপীঠের অধ্যাপক প্রদ্যুৎবিকাশ কর মহাপাত্র জানিয়েছেন, ‘সাকার’ দিয়ে এক একটি জোঁক ২ থেকে ১৫ মিলিলিটার রক্ত শুষতে পারে। সেই সঙ্গে মুখ থেকে এক ধরনের লালা মিশিয়ে দেয় রক্তে। লালায় হিরুডিন, ক্যালিক্রেইন, ক্যালিনের মতো কিছু উৎসেচক থাকে। আর থাকে গিলান্টেন। যা ব্রেস্ট, মেলানোমা, লাং, প্রস্টেট ক্যানসার সারাতে সাহায্য করে। খোদ বিধানচন্দ্র রায়ও এই পদ্ধতি চিকিৎসা করতেন বলে শোনা যায়। তবে লিচ থেরাপিতে চূড়ান্ত পর্যায়ের রডেন্ট ক্যানসার সেরে ওঠা দারুণ খবর। এই নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। মত চিকিৎসকদের।
[ হিন্দু হস্টেলের দাবিতে উত্তপ্ত প্রেসিডেন্সি, অবস্থান বিক্ষোভে পড়ুয়ারা]
The post রক্তচোষা জোঁকের লালায় ক্যানসার মুক্তি, রোগীকে বাঁচালেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা appeared first on Sangbad Pratidin.