বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: সম্ভাবনাময় ‘৭২’। যে ‘৭২’ আবার গলার কাঁটাও বটে! সবকিছু ঠিক থাকলে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের বাকি কমবেশি দশ মাস। সেইমতো বছর ফুরতেই বাংলায় ভোটের দামামা বেজে ওঠার কথা। সেই অপেক্ষা না করে এখন থেকেই নির্বাচনী জোট প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিচ্ছে রাজ্যের বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। যদিও সূত্রের খবর, নির্বাচনী জোটপ্রক্রিয়া নয়, বরং এই আলোচনা জোটের জট কাটাতে।
আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, দু’তরফের জোটের পথে কাঁটা ছড়াতে পারে ৭২টি আসন। যে ৭২টি আসনে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন বাম ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থীরা। এবারও ওই আসনগুলিতে জয়ের সম্ভাবনা যথেষ্ট বলে আশাবাদী দুই শিবিরই। তাই এই ৭২ আসনের দিকেই সবার নজর। তাই জটও প্রবল। সে কথা বুঝেই ভোটের অনেক আগে থেকে বৈঠকের আয়োজন। আগামী বুধবার সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে বৈঠক হতে পারে বলে খবর। নেতৃত্বের ধারণা, হাতে সময় নিয়ে কথা আলোচনা চালালে সব মতপার্থক্য মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
[আরও পড়ুন: লাদাখ সংঘর্ষ নিয়ে দেশবিরোধী প্রতিবেদন ‘গণশক্তি’র! কী বলছে আলিমুদ্দিন?]
২০১৬-র বিধানসভা ভোটে দফায় দফায় আলোচনার মাধ্যমে বাম ও কংগ্রেসের জোট তৈরি হয়েছিল রাজ্যে। বেশ কিছু আসন নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় আসরে নামতে হয়েছিল রাহুল গান্ধী ও সীতারাম ইয়েচুরিকে। যে কোনও মূল্যে জোট বাঁধার নির্দেশই দিয়েছিলেন দুই শিবিরের দুই শীর্ষ নেতা। সেই নির্দেশে দুই শিবির আসন রফায় সহমত হলেও জনসমর্থন টানতে ডাহা ফেল করে।
জোট নিয়ে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীদের মধে দ্বিধা রয়েছে, তা বুঝতে পেরে হাজার সমালোচনার মধ্যেও পাকসার্কাসে কংগ্রেসের নির্বাচনী সভায় রাহুল গান্ধীর মঞ্চে হাজির হন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এক মালায় দুই শিবিরের নবীন আর প্রবীণ নেতার সেই ছবি রীতিমত ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তাতেও যে কংগ্রেস কর্মীদের মন গলেনি, ভোটের ফলাফলেই তা স্পষ্ট হয়। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তৃণমূল কংগ্রেসই। ভোটপর্ব সাঙ্গ হতেই সিপিএম জানিয়ে দেয়, জোট নয়, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা হয়েছিল। সিপিএম নেতৃত্বের এহেন আচরণে অসন্তুষ্ট হয় বিধান ভবন। ভবিষ্যতে বামেদের সঙ্গে জোট হবে কি না, তা নিয়ে সেসময় সংশয় প্রকাশও করে প্রদেশ কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন: ‘আমরা ভারতীয়, চিন দূর হঠো’, খাস কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিল চিনাদের]
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অনেক আগে থেকেই জোট প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় সহমত বাম ও কংগ্রেস শিবির। বুধবার প্রথম দফার বৈঠকে বসতে পারেন দুই শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব। কোন দল কত আসনে লড়তে পারে, তা নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হওয়ার সম্ভাবনা। আলোচনায় লোকসভার ফলাফল গুরুত্ব নাও পেতে পারে বলে জোট সূত্রে খবর। লোকসভা আর বিধানসভার ভোটের ইস্যু ভিন্ন। তাই ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের ফলাফল ও পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাকে আলোচনার মধ্যে রাখা হতে পারে। এক্ষেত্রে গত বিধানসভা ভোটে যে ৭২টি আসনে জোট প্রার্থীরা জয় পেয়েছিল সেগুলোকেই সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন জোট নেতারা।
কিন্তু চার বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। অনেক বিধায়কই তৃণমূল ও বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। দলবদলের ফলে কোথাও বামেদের শক্তি ক্ষয় হয়েছে, তো কোথাও কংগ্রেসের। তাই প্রাথমিক আলোচনাতেই আসন ভাগে মাপকাঠি নিয়ে মতপার্থক্য হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। তবে দু’পক্ষের নেতৃত্বই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সিপিএম পলিটবুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম জানান, “ভোট এখনও অনেক দেরি। এখনই গণৎকারের মতো হিসেব নিকেশের সময় আসেনি।” তবে তৃণমূল ও বিজেপিকে পরাস্ত করতে মানুষ একজোট হবে বলেই মনে করেন তিনি।
The post দেরি হলে জট বাড়ার আশঙ্কা, বিধানসভা নিয়ে এখনই জোট আলোচনায় বাম-কংগ্রেস appeared first on Sangbad Pratidin.