বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: কারখানা ওহি বনায়েঙ্গে।… মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে সিঙ্গুরের মাঠেও….। না। কোনও মিছিলে রাজনৈতিক দলের স্লোগান নয়। বামেদের (Left Front) ইস্তেহারের মূল বক্তব্য হতে চলেছে এটাই। প্রার্থী তালিকা এবং ইস্তেহার। দুইয়ের মাঝে সামঞ্জস্য রাখার সিদ্ধান্ত। প্রার্থী তালিকায় অগ্রাধিকার তারুণ্যে। ইস্তেহারে জোর কর্মসংস্থানে। তরুণদের চাওয়া-পাওয়াকেই ইস্তেহারে গুরুত্ব দিতে চলেছে আলিমুদ্দিন। আগামী সপ্তাহে ইস্তেহার প্রকাশ করবে বামেরা।
কৃষি আমাদের ভিত্তি। শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। অতীতের এই অবস্থানের সঙ্গে এবার যোগ হচ্ছে কর্মসংস্থান আমাদের লক্ষ্য। আগে কৃষি ও শিল্পের ওপর জোর দিত বামেরা। এই দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া হতো। এবার শুধু বেসরকারি নয়, সরকারিক্ষেত্রেও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে বলে ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দেবে আলিমুদ্দিন। কমরেডকুলের ধারণা, গত ১০ বছরে রাজ্যে সরকারি এবং বেসরকারিক্ষেত্রে নতুন করে কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তাই সরকারিক্ষেত্রে কর্মসংস্থান (Employment) সৃষ্টির পাশাপাশি শিল্পের উপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। গত দেড় দশকে রাজ্যে শিল্পে খরা চলছে। সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা ও নন্দীগ্রামে পেট্রোলিয়াম হাব নির্মাণ বামেদের স্বপ্ন ছিল। এক দশক ক্ষমতার বাইরে থাকায় সেই স্বপ্ন আজও অধরা রয়ে গিয়েছে। ইস্তেহারে নন্দীগ্রামের কথা না থাকলেও সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরে গাড়ি শিল্প হবে বলে ইস্তেহারে উল্লেখ করা হবে। সিঙ্গুরের পাশাপাশি গোটা রাজ্যেই শিল্পের উপর জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে বামেরা। ভারি শিল্পের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে সংযুক্ত মোর্চা। শিক্ষিত বেকার যুবকদের মন পেতেই এহেন প্রতিশ্রুতি।
[আরও পড়ুন: একের পর এক ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণ! ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের অপসারণ দাবি তৃণমূলের]
সরকারি ক্ষেত্রে বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক নিয়োগের উল্লেখ থাকছে ইস্তেহারে। গত ১০ বছরে নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব ছিল বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ার আশ্বাস দেওয়া হবে। কৃষিভিত্তিক প্রান্তিক এলাকায় কৃষিনির্ভর শিল্প গড়ে তোলার দিশা দিতে চলেছে লাল-পার্টি। সেইসঙ্গে ইস্তেহারে দেওয়া হবে কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা। ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন রাজ্যে প্রয়োগ হবে না বলে ঘোষণা করা হবে।
রাজ্যে গণতন্ত্র নেই বলে বারবার চিল চিৎকার করেছে সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্ব। ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি সাংবিধানিক পদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও থাকছে বামেদের ইস্তেহারে। এবার জোটে নয়া সংযোজন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। তাই রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নের পাশাপাশি দলিত ও আদিবাসীদের সংযুক্ত মোর্চার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার খতিয়ান তুলে ধরা হবে ইস্তেহারে।
[আরও পড়ুন: ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে প্রায় দু’শো কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ, হাই কোর্টে দায়ের জনস্বার্থ মামলা]
এবার ইস্তেহার তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞানী ও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যকে। রয়েছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakraborty), প্রাক্তন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী দেবেশ দাসের মতো সিপিএম নেতারা। সংযুক্ত মোর্চা গঠন হলেও যৌথ ইস্তেহার প্রকাশ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে যৌথ বিবৃতি মারফত সংযুক্ত মোর্চার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর।