করোনার আবহে কলম ধরলেন হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যাপক ঋত্বিক আচার্য।
আতঙ্কের অপর নাম হয়ে উঠেছে Covid-19। নিজের বংশ বিস্তার করেই চলেছে সে। কিন্তু শেষ কোথায়? গোটা বিশ্ব এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে হন্যে হয়ে। উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই মনে আসে মৃত্যুর কারিগর, আনবিক বোমার জনক জুলিয়াস রবার্ট ওপেনহেইমেরের সেই বিখ্যাত উক্তির অংশ, “We knew the world would not be the same.” ‘জানতাম পৃথিবীটা আগের মতো থাকবে না।’ কিন্তু বাস্তবে কি তাই? যদি ভাবি সব আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এই জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় আসবেই? না, হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া কয়েকটা আশার বাণী নয়, বিশ্ববাসীর সাধারণভাবে আলোচিত কিছু প্রশ্নের উত্তরেই রয়েছে এর সম্ভাব্য পথ। চলুন একটু আলোকপাত করা যাক।
প্রশ্ন ১: কীভাবে শেষ হবে এই সংক্রমণ?
উত্তর: হার্ড ইমিউনিটি গড়ে ওঠা অবধি। হার্ড ইমিউনিটির কী? এটি হল কমিউনিটির মধ্যে ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠা। যা হতে পারে দুটি উপায়ে, ১. ভ্যাক্সিনেশন বা প্রতিষেধক প্রয়োগে ২. সংক্রমণের মাত্রা বেশি হলে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠা স্বাভাবিক অনাক্রম্যতা। ব্রিটিশ গবেষকদের মতে, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের বাড়িতে রেখে, তরুণদেরই কাজের জন্য বাইরে বেরতে হবে ক্রমান্বয়ে। এর পিছনেও রয়েছে তিনটি কারণ। প্রথমত, যুবপ্রজন্মের মধ্যে
সংক্রমণের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। দ্বিতীয়ত, তাদের সুস্থ হওয়ার প্রবণতাও অনেকাংশে বেশি। এবং তৃতীয়ত, এদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত ভারতের জনসংখ্যার ৬৫% তরুণ (বয়স ৩৫-এর নিচে), ফলে এদের মাধ্যমেই আসতে পারে হার্ড ইমিউনিটি। বর্তমানে ডিপথেরিয়ার ক্ষেত্রে ৭৫% এবং হামে ৯১% হার্ড ইমিউনিটি লক্ষ্য করা যায়। COVID-19-এর ক্ষেত্রে সম্ভবত এই হার প্রাথমিকভাবে ৬০%। যদি তর্কসাপেক্ষে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে লক্ষণহীন বাহকের সংখ্যাটা বড় হয় তবে তা দেশের মানুষ কিন্তু হার্ড ইমিউনিটির দিকেই ইঙ্গিত করে।
[আরও পড়ুন: SARS ও MERS-এর চিকিৎসা পদ্ধতিতেই কি মিলবে ঘাতক COVID-19 থেকে মুক্তি?]
প্রশ্ন ২: হার্ড ইমিউনিটির আগে পর্যন্ত কী করণীয়?
উত্তর: প্রচুর পরিমাণে টেস্ট করতে হবে। যার জন্য আপাতভাবে ব়্যাপিড কিটই যথাযথ মনে হয়। যার মাধ্যমে উপসর্গহীন বাহক এবং আরও বেশি সংখ্যক আক্রান্তকে চিহ্নিত করা যাবে। পুল টেস্ট পদ্ধতিতেও মিলবে উপকার। যেখানে একসঙ্গে পাঁচজনের লালারস টেস্ট হবে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে ভাল। আর পজিটিভ হলে ফের আলাদা আলাদা করে হবে পরীক্ষা। আমাদের জানা আছে যে সাধারণ ফ্লু এবং করোনার উপসর্গ অনেকাংশে এক। কাজেই এদের পৃথকীকরণে পরীক্ষার কোনও বিকল্প নেই।
প্রশ্ন ৩: লকডাউন পরবর্তীতে কী হবে?
উত্তর: ইউহান প্রদেশে লকডাউন চলেছিল দু’মাসেরও বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইংল্যান্ডে হয়তো চলতে পারে টানা ৬ মাস। ভারতে ২৫ দিন অতিক্রান্ত। লকডাউন চলবে ৩ মে পর্যন্ত। ২০ এপ্রিল থেকে চালু হবে কিছু সরকারি ও বেসরকারি কর্মক্ষেত্র। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি। পরীক্ষা একইভাবে চালিয়ে যেতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাত্র ২৫% জনবল নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বাড়িতে বসে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করে কাজ করায় উৎসাহ দিতে হবে।
প্রশ্ন ৪: দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধের বিষয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: এককথায় অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ২২ তম দেশ হিসেবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় দশ হাজারের গণ্ডি পার করেছে, যাতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ৭৪ দিন। চিনের ক্ষেত্রে যা ৭৩ দিন, ব্রিটেনে ৫৫, আমেরিকায় ৫৩, স্পেনে ৪৬ এবং ইতালিতে ৪৪ দিন। চিন বাদে বলাই বাহুল্য অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় আমাদের জনসংখ্যা কয়েকগুণ বেশি এবং চিনের তুলনায় আমাদের জনঘনত্ব প্রায় তিনগুণ বেশি। সেক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার বলা চলে নিয়ন্ত্রণাধীন। বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, টানা দু’সপ্তাহ ধরে আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস না পাওয়া পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
[আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় কেরল মডেলই আশার আলো, ভারত কি পারবে?]
প্রশ্ন ৫: প্রতিষেধক আসতে কতদিন লাগবে?
উত্তর: কাজ অতি দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে। তাও আরও মাস ৬ অন্তত লাগতে পারে। অগ্রণী ভূমিকাতে আছে আমেরিকা ও চিন। COVID-19-এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটি মহামারি রোগে পরিণত হচ্ছে। মনে করা হয় যে কোনও সংক্রমণ জনগোষ্ঠীর ৫০% লোককে আক্রান্ত করে ফেললে, হার্ড ইমিউনিটির কারণে দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা হারায়। ভ্যাকসিন দ্রুত আবিষ্কার হয়ে গেলে, হার্ড ইমিউনিটিও আসবে দ্রুত। করোনা ভারতবাসীকে এমনিতে কাবু করতে পারেনি, পারবেও না। জীববিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান তাই বলছে।
The post আতঙ্কের অপর নাম করোনা ভাইরাস, এর শেষ কোথায়? appeared first on Sangbad Pratidin.