ঋতুবদলে বদলে ফেলুন আপনার খাদ্যাভ্যাস, জেনে নিন কোন ঋতুতে কী খাবেন

05:03 PM Mar 14, 2023 |
Advertisement

বসন্তকালে যা খাবেন, একই খাবার খেলে কিন্তু সুস্থ থাকা কঠিন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কথিত আছে, ঋতুভেদে খাদ্যতালিকা ভিন্ন হবে। কখন কী খাবেন, কী খাবেন না বললেন রানিক্ষেতের ক্ষেত্রীয় আয়ুর্বেদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক গবেষক ডা. অচিন্ত‌্য মিত্র।

Advertisement

রোগী নয়, রোগ নয়; শরীর যাতে রোগমুক্ত থাকে তার জন‌্য আমাদের খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আহারকে সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ হিসাবে গণ‌্য করা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। সঠিক আহার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, সতেজ ও সবল রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন পরজীবী ব‌্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত‌্যাদির আক্রমণ থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের রক্ষা করে। রোগীর ক্ষেত্রে উপযুক্ত খাদ‌্য-পানীয়কে ‘পথ‌্য’ বলে এবং সঠিক বিবেচনায় অমৃতের মতো ফল দেয়। আবার অন‌্যক্ষেত্রে অনুপযুক্ত বা অবিবেচক খাদ‌্যাভ‌্যাস যা ‘অপথ‌্য’ তা মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং একটি সঠিক খাদ‌্যাভ‌্যাস, জীবনযাত্রা অাজকের আধুনিক যুগে অত‌্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে ষড় রসযুক্ত খাদ‌্য-পানীয়কেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়। বর্তমানকালে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ‌্যাট, ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজপদার্থ পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রত্যেকের প্রয়োজন।

ঋতুভেদে বদলাতে হবে
আমাদের শরীরে তিনটি ফ‌্যাক্টর আছে যার তারতম্য ঘটে বিভিন্ন ঋতুভেদে। বায়ু-পিত্ত-কফ এই তিনটি ফ‌্যাক্টর এবং মধুর-অম্ল-লবণ-কটু-তিক্ত-কষা এই ছয়টি রস বিভিন্ন ঋতুতে শরীরে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়। এগুলি সব ঋতুতেই বজায় রাখলে তবেই সুস্থ থাকা সম্ভব। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্ত এই ছয়টি ঋতুতে বিভিন্ন খাদ‌্য-পানীয়ের গুরুত্ব রয়েছে।

Advertising
Advertising

রোগের তিনটি প্রধান কারণের মধ্যে একটি অন‌্যতম হল ‘প্রজ্ঞাপরাধ’। অর্থাৎ যা অহিতকর জানা সত্ত্বেও আমরা অবজ্ঞা করে থাকি। যেমন মদ‌্যপান, ধূমপান, বিরুদ্ধ আহার (যেমন, দুগ্ধজাত খাদ্যের সঙ্গে মাংস না খাওয়া) ইত‌্যাদি। সাধারণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন‌্য সঠিক ও সুষম আহার, পানীয় গ্রহণ, মানসিকভাবে শান্ত ও খুশিতে থাকে, সঠিক জীবনশৈলীতে অভ্যস্ত হওয়ার কিছু বিকল্প নেই। বিভিন্ন ঋতুতে যেমন বিভিন্ন বিষয় অনুশীলন করতে হয়। অর্থাৎ শীতকালে এক রকম, গ্রীষ্মকালে যেমন অন্যরকম হয় আমাদের যাপন, তেমনই একটি ঋতু থেকে পরবর্তী ঋতুতে গমনের যে সন্ধিক্ষণ সেই সময়ে বিশেষভাবে সাবধানতাও পালন করলে অনেক রোগ-ব‌্যাধি থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব।

সুস্থ থাকতে
কখন কী খাবেন?
শীত চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখে থাকি অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয় তার প্রধান কারণই হল ‘মিথ‌্যা-আহার ও জীবনশৈলী’। এই সমস্ত বিষয়ই আয়ুর্বেদে ‘ঋতুচর্যা’ বলে বর্ণিত, যেখানে বিভিন্ন ঋতুতে খাওয়া-দাওয়া, পানীয়, জীবনযাত্রার প্রণালী বর্ণিত আছে। যার উদ্দেশ‌্যই হল মানুষকে সুস্থ ও সবল রাখা।

বসন্তকাল : বসন্তকালে শরীরের কফ দোষের প্রকোপ হয়, হজম ক্ষমতা কম থাকে। সেই কারণে গুরুপাচ‌্য অাহার, ঠান্ডা পানীয়, তৈলাক্ত ও টকজাতীয় বা মিষ্টি জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত। দিনের বেলা ঘুমানো একেবারেই অনুচিত। লঘু পাচ‌্য আহার, ফ‌্যাট ফ্রি খাবার, হালকা ব‌্যায়াম, বডি ম‌্যাসাজ, নিয়মিত স্নান বিশেষভাবে উপকারী। পুরনো চাল, বার্লি, গম ইত‌্যাদি খাদ‌্যতালিকায় রাখলে ভাল। বিভিন্ন ফলের রস, বিশেষত মরশুমি ফলের রস লাগবে। প্রধান বিষয় হল, এই ঋতুতে শীতকাল থেকে গ্রীষ্মে প্রবেশ তাই পরিবেশে একটি সামগ্রিক পরিবর্তন দেখা যায়।  তাই সহজপাঠ‌্য সুষম খাবার ও স্বাস্থ‌্যকর জীবনযাত্রার মধ্যে নিজেকে রাখতে হবে।

[আরও পড়ুন: শুয়েই ঘুমিয়ে পড়েন? ‘লক্ষণ ভাল নয়’, বলছেন বিখ্যাত ঘুম-বিজ্ঞানী ]

গ্রীষ্মকাল : সূর্যের কঠিন দাবদাহে প্রকৃত রুক্ষতা প্রাপ্ত হয়। এই সময়ে কফ দোষের নাশ হয় ও বাতদোষ বৃদ্ধি পায়। তাই এই সময়ে অতিরিক্ত লবণাক্ত, ঝাল স্বাদযুক্ত, টক জাতীয় খাবার বেশিমাত্রায় খেলে ভাল। অত‌্যধিক কায়িক পরিশ্রম, প্রত‌্যক্ষ সূর্যালোকে থাকা বর্জন করতে হবে। বেশিমাত্রায় ঠান্ডা পানীয় হজম শক্তির নাশ করে তাই যতটা পারা যায় তা বর্জন করতে হবে। এই ঋতুতে মিষ্টি জাতীয় লঘু বা সহজপাচ‌্য খাবার-পানীয়, ঈষৎ ঠান্ডা ও তরলজাতীয় খাবার পানীয় উচিত মাত্রায় পান করা জরুরি। ফ‌্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার অল্প মাত্রায় চলতে পারে। ছাতুর শরবত, আমপোড়ার শরবত, আমপানা, পুদিনার শরবত, বিভিন্ন ফল যেমন – মুসাম্বি, আম, তরমুজ, বেল ইত‌্যাদি বিশেষভাবে বিধেয়। পরিবেশের রুক্ষতাকে দূর করার জন‌্য প্রচুর পরিমাণে ফল যেমন-অআম, জাম, তালশাঁস, লিচু, বেল, তরমুজ, ডাব খাদ‌্যতালিকায় রাখতে হবে। ভাত, রুটি, মুগডাল, সবুজ শাকসবজি নিত‌্য খাদ‌্য তালিকায় রাখতে হবে। আমলকী, পালং বা আমলকীর রস বিশেষভাবে উপকারী। দিনের বেলা অল্প সময়ের জন‌্য ঘুম বিশেষভাবে বিধেয়। রাত্রের ঘুম ভাল হওয়া দরকার। তুলসী, হলুদ, শিম, সজনে ইত‌্যাদি ভেষজ খাদ্যতালিকায় রাখলে ভাল।

বর্ষাকাল : এই ঋতুতেও পাচন ক্ষমতা হ্রাস পায় ও বাতদোষ বৃদ্ধি পায়। তার কারণে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। জল ফুটিয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে পান করতে হবে। জল ফোটানোর সময় অল্প পরিমাণে ধনে, মৌরী বা তুলসীপাতা দেওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় তেল, ঘি, চিজ ও অন‌্যান‌্য তৈলাক্ত বা চর্বিজাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। দিবানিদ্রা, একেবারেই চলবে না। পুরনো চালে ভাত, মাংসের পাতলা ঝোল, সুপ ইত‌্যাদি স্বাস্থ্যকর।

মূলত, যে ঋতুতে যে সমস্ত শাকসবজি, ফল-মূল স্থানীয় এলাকায় পাওয়া যায় তাই দৈনন্দিন খাদ‌্য তালিকায় রাখতে হবে। নিয়মিত খাদ‌্যাভ‌্যাস অত‌্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন হাল্কা ব‌্যায়াম, প্রাণায়াম, যোগাসন, কমপক্ষে প্রাতঃভ্রমণ বা সন্ধ‌্যাকালীন ভ্রমণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায‌্য করে। রাত্রি জাগরণ, অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক গ‌্যাজেট ব‌্যবহার, মদ‌্যপান, ধূমপান বা অন‌্যান‌্য তামাকজাতীয় নেশা কোনওকালে কোনও ক্ষেত্রেই গ্রহণযোগ‌্য নয়।

[আরও পড়ুন: ‘খেলব হোলি, ভাং খাব না!’ কিন্তু হ্যাংওভার কাটাবেন কী করে? ]

Advertisement
Next