shono
Advertisement

বেশি ওষুধে নাকাল বার্ধক্য, পরিণতি সাংঘাতিক, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল কোথায় হচ্ছে?
Posted: 08:13 PM Mar 08, 2024Updated: 08:13 PM Mar 08, 2024

সুস্থ থাকতে ওষুধ দরকার। কিন্তু গোল বাধে যখন একাধিক খেতে হচ্ছে, তার মিশ্র প্রতিক্রিয়ায়। নানা কারণে একই ওষুধ বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে অসুখ ঠিক হওয়ার বদলে আরও বাড়ে। এক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। এই মুহূর্তে ‘পলিফার্মাসি’ (Polypharmacy) বয়স্কদের অসুস্থতার একটি অন্যতম কারণ। বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অনির্বাণ দলুই

Advertisement

অসুস্থ হলে আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হয়। কিছু কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে আমাদের একই সময়ে অনেকগুলো ওষুধও খেতে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী একই সময়ে অনেকগুলো ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। এই পর্যন্ত ঠিকই আছে। বয়স্ক মানুষ নানা অসুখে জর্জরিত হয়ে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে যান ও প্রত্যেকের প্রেসক্রিপশন দেখে বিভিন্ন ওষুধ খান। ভুলটা যেখানে হয়, রোগী চিকিৎসকের কাছে পূর্ববর্তী প্রেসক্রপিশন নিয়ে যান না। ফলে অনেক সময়ই একই ধরনের ওষুধের পুনরাবৃত্তি হয়। ফলে রোগী একই ধরনের একাধিক ওষুধ খেতে থাকেন। বিশেষত বয়স্করা। এই ধরনের সমস্যা গুলোই হল পলিফার্মাসি এবং এর জন্যই মানুষকে অতিরিক্ত ভুগতে হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুযায়ী পলিফার্মাসি হল একই সময়ে অনেক ওষুধের ব্যবহার বা অত্যধিক সংখ্যক ওষুধের ব্যবহার। নানা বিশ্বখ্যাত পত্রিকার মতে পলিফার্মাসি হল সাধারণত দৈনিক পাঁচটি বা তার বেশি নির্ধারিত ওষুধ খাওয়া এবং যা বৈজ্ঞানিক ভাবে দরকার তার চেয়ে বেশি অপ্রয়োজনীয়/অবাঞ্ছিত ওষুধের ব্যবহার। এটাই এই মুহূর্তে অন্যতম চিন্তার কারণ।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রতিদিন গড়ে ২-৯টি ওষুধ গ্রহণ করেন। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে অবাঞ্ছিত ওষুধ ব্যবহারের প্রাদুর্ভাব প্রায় ১১.৫ – ৬২.৫% পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

সমস্যা কোথায়?
এই পলিফার্মাসি বিভিন্ন কারণে মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। সব থেকে বেশি সমস্যা হল adverse drug recation (ADR) বা ওষুধের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বেশ কিছু বিপাকীয় পরিবর্তন দেখা দেয় এবং একই সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত ওষুধ বা দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়াও হ্রাস পায়। বেশি সংখ্যক ওষুধের ব্যবহারের ফলে এই ঝুঁকি বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে আরও বেড়ে যায়। একাধিক ওষুধ ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের ওষুধের মধ্যে ক্রিয়া-বিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। ফলে বিভিন্ন ওষুধের মাত্রা শরীরে অবাঞ্ছিত ভাবে বেড়ে যায় বা কমে যায় বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্কদের মাঝে মাঝেই যে হিপ ফ্র্যাকচার অর্থাৎ কোমরের হাড় ভাঙার খবর পাই, তার জন্য এই পলিফার্মাসি একটি অন্যতম বড় ঝুঁকি।

আসলে নতুন উপসর্গ মানেই নতুন রোগ আর নতুন ওষুধ নয়। শুধুমাত্র পলিফার্মাসির জন্য অনেক সময়ে নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। সেই উপসর্গগুলোকে অনেক সময়েই নতুন রোগের বহিঃপ্রকাশ ভেবে নিয়ে আবার নতুন করে ওষুধ দেওয়া হয়। এর ফলে অহেতুক ওষুধের সংখ্যা বাড়ে, ওষুধের নিজেদের মধ্যে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং আরও নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। এই ভাবে উত্তরোত্তর অপ্রয়োজনীয় ওষুধের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

[আরও পড়ুন: মাধবনের তাণ্ডবে জাগ্রত ‘শয়তান’, কীভাবে মোকাবিলা করলেন অজয়? পড়ুন রিভিউ]

ওষুধ সহজলভ্য হলেই নিরাপদ হয় না পলিফার্মাসি ADR এডিআর বা প্রতিকূল প্রতিক্রিয়ার বেশিরভাগই কিন্তু দেখা যায় ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধের কারণে অর্থাৎ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের মতামত বা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ
কিনে খাওয়ার কারণে। এই প্রবণতা মারাত্মক। ওষুধের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ADR-এর ঝুঁকি ও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এত ওষুধের কারণে মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ খেতে
ভুলে যান, অপ্রয়োজনীয় ওষুধের কারণে খরচের পরিমাণ বাড়ে, জীবনযাত্রার মান
খারাপ হয়।

ভালো থাকার উপায়
বয়স্ক রোগীদের পলিফার্মাসি ওষুধের প্রতিকূল প্রভাব কমাতে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খাওয়া জরুরি।

যখনই আপনি কোনও রোগ বা নতুন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, সেক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত যে ওযুধ খান সেটা সঙ্গে নিয়ে যান, প্রয়োজনে চিকিৎসককে দেখান।

একটি সমস্যার জন্য যত কম ওষুধ খাওয়া যায় ততই ভাল।

ওষুধ সেবন শুরু করা উচিত ন্যূনতম ডোজ বা মাত্রায় এবং যেখানে ক্লিনিক্যালি প্রয়োজন ও নির্দেশিত। প্রয়োজনে ওষুধের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা যেতে পারে পরামর্শ মতো।

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের লেখা একাধিক প্রেসক্রিপশনের চেয়ে একটি সর্বোপরি প্রেসক্রিপশন করে নেওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে জেরিয়াট্রিক মেডিসিনের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারলে ভালো। সে ক্ষেত্রে একই ধরনের ওষুধ বারবার পুনরাবৃত্তি হওয়ার ভয় থাকে না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বয়স্ক রোগীরা অনেকদিন ধরে একই ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। হয়তো সেই সময়ে ওষুধটা আর দরকার নেই। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অবিলম্বে ওষুধ বন্ধ করা জরুরি।

ওষুধের দোকান থেকে নিজের মতো ওষুধ কিনে খাবেন না। সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খান।

দুর্ভাগ্যবশত পলিফার্মাসির জন্য যে লক্ষণগুলি দেখা দেয়, সাধারণ মানুষ সেগুলোকে বার্ধক্যের লক্ষণ এবং উপসর্গ ভেবে নেন এবং বিভ্রান্ত হতে থাকেন। যে সমস্যাগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো হল- ক্লান্তি, তন্দ্রাচ্ছন্নতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়েরিয়া, ক্ষুধামান্দ্য, মানসিক বিভ্রান্তি, পড়ে যাওয়ার প্রবণতা, বিষন্নতা বা স্বাভাবিক কাজকর্মের প্রতি অনীহা, দুর্বলতা, হাত-পা কাঁপা, ভুল দেখা বা শোনা, উদ্বেগ বা উত্তেজনা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি।

ওরাল হেলথ এর ক্ষেত্রে, পলিফার্মাসির সবচেয়ে প্রতিকূল প্রভাব হল জেরোস্টোমিয়া অর্থাৎ মুখের ভিতরে শুকনো বোধ। শুষ্ক মুখের কারণ হতে পারে এমন ওষুধ/ ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে কিছু হৃদযন্ত্রের ওষুধ (ডাইইউরেটিকস, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার), অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যান্টিসাইকোটিকস, সেডেটিভস, সেন্ট্রাল অ্যানালজেসিকস, অ্যান্টি-পারকিনসন্স ওষুধ, অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ এবং অ্যান্টাসিড। খেয়াল রাখতে হবে অহেতুক এই ওষুধ যেনো ব্যবহৃত না হয়।

[আরও পড়ুন: মানবসেবা নয়, মুনাফাই লক্ষ্য অল্টম্যানের! ‘OpenAI নাম বদলে হোক ক্লোজএআই’ খোঁচা মাস্কের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement