নব্যেন্দু হাজরা: আস্ত একটা ট্রামের মালিক হতে চান? যাতে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা যাবে। জমানো যাবে বৈঠকি আড্ডা। খুলে ফেলা যেতে পারে রেস্তরাঁ। কিংবা কোনও এক বিকেলে আপনার বারান্দায় হেরিটেজ বাহন দেখতে হয়তো ভিড় করলেন পাড়ার সমস্ত লোকেরা।
লাখ কয়েক খরচ করুন। আর তাতেই ট্রাম উঠে আসবে ঘরের ড্রয়িং রুমে। সেই সাহেবি আমলের সেগুন কাঠের গন্ধ, পুরনো লোহার রেলিংয়ে স্মৃতির টুকরো। কলকাতার অহঙ্কার মুহূর্তে জৌলুস বাড়াবে আপনার বাড়ির।
চাইলে যে কেউই বাতিল ট্রাম কিনতে পারেন এবার। যেগুলোর বয়স ১০০ পার এমনই ১২টি কাঠের ট্রাম বিক্রি করছে সিটিসি। ইতিমধ্যেই অবসরপ্রাপ্ত দু’টি ট্রাম গিয়েছে চণ্ডীগড় এবং গুরগাঁওয়ের ট্রান্সপোর্ট মিউজিয়ামে। আর এবার পুরনো ট্রাম শোভা পাওয়ার কথা হাওড়ার রেল মিউজিয়ামে। ইতিমধ্যেই বাতিল ট্রাম কিনতে চেয়ে কলকাতা ট্রাম কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়েছে রেল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই ওই বাতিল হয়ে যাওয়া বহু পুরনো ট্রামটি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। শুধু কি রেল মিউজিয়াম! আসানসোলে যাবে আরও একটি বাতিল বা ‘মরা ট্রাম’। সেখানে কলকাতার এই নস্টালজিয়ার অন্দরে হবে ক্যাফেটোরিয়া।
সিটিসি কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, রেল বা ট্রান্সপোর্ট মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষই শুধু নয়। চাইলে আপনিও কিনতে পারেন বাতিলের খাতায় যাওয়া পুরনো ট্রাম। তবে শর্তসাপেক্ষে। সেই ট্রামকে অবহেলা করে ফেলে রাখলে হবে না। তার যত্নাদি চালাতে হবে। রাখতে হবে সাজিয়ে। বাড়ির সামনের উঠোন হোক বা পার্কে! যেখানে খুশি সাজিয়ে রাখতে পারবেন কলকাতার এই ঐতিহ্যকে। কর্তৃপক্ষ চাইছে যেভাবেই হোক, ‘বেঁচে থাকুক ট্রাম।’
কোথাও মেট্রোর কাজের জন্য, আবার কোথাও রাস্তা সারাইয়ের জন্য, আবার কোথাও যানজট এড়াতে একের পর এক ট্রামরুট বন্ধ হচ্ছে শহরে। বাধ্য হয়ে বসে যাচ্ছে বহু ট্রাম। সেগুলো আদৌ আর কখনও রাস্তায় নামবে কিনা তা নিয়েও সংশয়ে ট্রাম কোম্পানির অনেক কর্তা। কলকাতার এই ঐতিহ্যের তাই জায়গা বিভিন্ন ডিপোয়। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। কারণ ডিপো জুড়ে বাতিল ট্রামের ভিড়। যেগুলো চলার অযোগ্য। বহু পুরনো। বাধ্য হয়েই তাই ১২টি পুরনো ট্রাম বোর্ড মিটিংয়ে চিহ্নিত করা হয়, প্রথমে সেগুলি ‘স্ক্র্যাপ’ করে ফেলা হবে বলে ঠিকও হয়।
কিন্তু এরই মধ্যে গুরগাঁওয়ের হেরিটেজ ট্রান্সপোর্ট মিউজিয়ামে রাখার জন্য সিটিসি-র একটি পুরনো ট্রাম চায় মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার একটি ট্রাম। সূত্রের খবর, প্রায় ১৯ লক্ষ টাকায় গুরগাঁওয়ের ট্রান্সপোর্ট মিউজিয়ামে বিক্রি হয়েছে কাঠের একটি ট্রাম। একটি যায় চণ্ডীগড়ে। এই ট্রাম দু’টি মাসখানেক আগে পাঠানো হয়েছে। তারপরই পুরনো ট্রাম চেয়ে চিঠি আসে রেলের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, হাওড়ায় যে রেল মিউজিয়াম আছে, সেখানে রাখা হবে বাতিল হওয়া এই ট্রাম। আসানসোল থেকেও একটি চিঠি এসেছে ট্রাম কেনার জন্য। সেখানে একটি ক্যাফেটোরিয়া করা হবে পুরনো এই ট্রামে।
[মুখ্যমন্ত্রীর অভিনব উদ্যোগ, ফিফার ওয়েবসাইটে এবার কলকাতার দুর্গাপুজো]
নিগম সূত্রে খবর, এখনও অনেকেই ট্রাম কিনতে চেয়ে চিঠি দিচ্ছে সিটিসি-র কাছে। কেউ চাইছেন, কোনও পার্কে শুধু সাজিয়ে রাখতে। কেউ চাইছেন, ক্যাফেটোরিয়া বানাতে। আর এই চাহিদা দেখেই পুরনো ট্রাম ‘স্ক্র্যাপ’ করার ভাবনা মাথা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন দফতরের কর্তারা। ‘কারণ পুরনো (অচল) ট্রাম বিক্রি করে কোষাগার ভরছে ভালই’, বলেন পরিবহণ নিগমের এক কর্তা।
১৮৮০ সালে প্রথম কলকাতার রাস্তায় যাত্রী নিয়ে ট্রাম চলা শুরু করেছিল। প্রথমে ঘোড়ায় টানা ট্রাম, তারপর কাঠের ট্রাম। কালের বিবর্তনে বদল হয়েছে ট্রামের গড়নের। কিন্তু সে তার ঐতিহ্য এখনও বহন করে চলেছে। হেরিটেজ এই যানকে অবশ্য এবার চাইলে নিজের করে সাজিয়ে রাখতে পারবেন আপনিও।
অচল ট্রাম বিক্রি করে যদি টাকা আসে, তবে ক্ষতি কী! অবশ্য ট্রাম বিক্রির কোনও বিজ্ঞাপন করা হবে না বলেই জানান সিটিসি-র এক কর্তা। কারণ মানুষের যথেষ্টই চাহিদা রয়েছে ট্রাম কেনায়। অনেকদিন আগেই তো বেণুবনছায়া কর্তৃপক্ষ একটি ট্রাম কিনে নিয়েছিল। তারপর এখন এই ট্রাম কিনতে চেয়ে অনেকেই চিঠি পাঠাচ্ছেন। আপাতত ১২টি ট্রাম বিক্রির জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বছর তো একটি ট্রাম নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পুজোর প্যান্ডেল তৈরির জন্যও- জানান সিটিসি-র ওই কর্তা।
[ডিস্কোয় তরুণী নিয়ে বচসার পরই পার্ক সার্কাসে গুলিকাণ্ড]
The post এবার আপনিও আস্ত একটি ট্রামের মালিক হতে পারেন appeared first on Sangbad Pratidin.