ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কংগ্রেস, সিপিএম কাঁটা হলেও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপিকে (BJP) ধরাশায়ী করাই মূল লক্ষ্য তৃণমূলের (TMC)। রাত পোহালেই ব্রিগেডে ‘জনগর্জন’ সভা শাসকদলের। তার আগে ব্রিগেড মঞ্চ ছেয়ে গেল নয়া স্লোগানে ভরা ব্যানারে। এদিন ব্রিগেড (Brigade) সজ্জায় দেখা গেল তৃণমূলের নতুন স্লোগান “জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন, তৃণমূলই করবে অধিকার অর্জন।” তাৎপর্যপূর্ণভাবে তৃণমূলের এই ব্যানারে ‘বিসর্জন’ শব্দটি লেখা হয়েছে গেরুয়া রঙে। যাতে স্পষ্ট যে গেরুয়া রঙ দিয়েই ‘গেরুয়া’ বিসর্জন দিতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল।
রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে নজর রাখলে দেখা যাবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরই বাংলায় কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে বাম-কংগ্রেস। অন্যদিকে, তেড়েফুঁড়ে বেড়েছে বিজেপি। বঙ্গে শক্তি বাড়িয়েই কেন্দ্রে শাসক হওয়ার সুবাদে এ রাজ্য়ে এজেন্সি রাজনীতি ও বঞ্চনার অভিযোগে বিদ্ধ গেরুয়া শিবির। বাংলার মানুষের টাকা আটকে ‘বঞ্চনা’র রাজনীতির বিরুদ্ধে বার বার সরব হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhisekh Banerjee)। ১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনা-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। যার জেরে ভুক্তভোগী বাংলার সাধারণ মানুষ।
[আরও পড়ুন: নিশীথ গড়ে হাওয়া বদল? কার দখলে যাবে ‘কোচ’দের ‘বিহার’ ক্ষেত্র?]
এহেন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলের দাবি, কেন্দ্রের বাংলা বঞ্চনার এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে বার বার তুলে ধরে তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছে, বিজেপি বাংলা বিরোধী। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করেই এবার বাংলা থেকে বিজেপি বিসর্জনের ডাক দিতে চলেছে শাসকদল। তাই ব্রিগেডের ব্যানারে ‘বিসর্জন’ শব্দটি ইঙ্গিতপূর্ণ গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। গেরুয়া রং মূলত ত্যাগের প্রতীক হলেও ব্রিগেডের স্লোগান লেখা ব্যানারে গেরুয়াকে উগ্র হিন্দুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখাতে চেয়েছে তৃণমূল, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
[আরও পড়ুন: ‘ব্রিগেডে না গেলে দল ব্যবস্থা নেবে’, বুথকর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিতর্কে মানস ভুঁইঞা]
শুধু তাই নয়, তৃণমূলের এই স্লোগানে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ লাইন হল ‘তৃণমূলই করবে অধিকার অর্জন’। রাজনৈতিক মহলের দাবি, একদিকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যকে ‘বঞ্চিত’ করছে এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রয়োগে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের টাকা থেকে ‘বঞ্চিত’ হয়ে রাজ্যের খরচেই জনমুখী প্রকল্পগুলিকে চালাতে উদ্যোগী হয়েছে তৃণমূল সরকার। কেন্দ্র থেকে প্রাপ্য ১০০ দিনের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকারই মিটিয়ে দেবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের খরচেই শুরু হয়েছে কর্মসংস্থানের নয়া প্রকল্প। পাশাপাশি রাজ্যের নিজস্ব জনমুখী প্রকল্প কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ একাধিক কাজকে হাতিয়ার করে মানুষের মন এবং ভোট পরীক্ষা জয় করতে আসন্ন লোকসভা ভোটে কোমর বেঁধে নামছে তৃণমূল।