সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বুথ এজেন্ট থেকে বিধায়ক। আর এবার লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) ময়দানে। সিঁড়ি ভেঙে রাজনৈতিক উত্তরণ বোধহয় একেই বলে। একসময়ের বিড়ি শ্রমিক, পুরুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো। বামফ্রন্টে নানা টানাপোড়েনের পর ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে সোমবার পুরুলিয়ায় প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরই নিজেদের মতো অঙ্ক কষতে শুরু করেছে 'বুড়ো সিংহ'র দল। পুরুলিয়ার রাজনৈতিক মহলে ফরওয়ার্ড ব্লক (All India Forward Bloc) এই নামেই পরিচিত। কিন্তু প্রার্থী বা পুরুলিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব তা মানতে নারাজ। প্রার্থীর কথায়, "সিংহ এখনও 'বুড়ো' হয়ে যায়নি। তার গর্জন যৌবনের মতোই রয়েছে। এবার ভোটের লড়াইয়ে আমরা তা সিপিএমকে (CPM) বুঝিয়ে দেব।"
পুরুলিয়া আসন সিপিএম কংগ্রেসকে সমর্থন করায় জেলা ফরওয়ার্ড ব্লক আপাতত বামফ্রন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। গত সোমবার জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে যায়নি তারা। শুধু তাই নয়, এই ভোটের আবহে আর বামফ্রন্টগতভাবে কোন কর্মসূচিতে নেই পুরুলিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব। শুধু পুরুলিয়া কেন্দ্রে নয়। এই জেলার রঘুনাথপুর যা বাঁকুড়া লোকসভা। সেই সঙ্গে বান্দোয়ান বিধানসভা যা ঝাড়গ্রাম লোকসভার অধীনে। সেখানেও এই সিংহ নিজেদের মতো করে ভোট প্রচার করবে।
[আরও পড়ুন: ৬ মাস ধরে হামাসের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাত, অবশেষে পিছু হটছে ইজরায়েল সেনা?]
তাহলে কি তারা রঘুনাথপুর ও বান্দোয়ানে সিপিএমকে ভোট দেওয়ার কথা বলবে? বিষয়টি অবশ্য ভাঙেনি দল। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অসীম সিনহা বলেন, "পুরুলিয়া কেন্দ্রের বাইরে অথচ এই জেলায় বাঁকুড়া লোকসভার রঘুনাথপুর ও ঝাড়গ্রাম লোকসভার বান্দোয়ান বিধানসভায় আমাদের প্রচার হবে। তবে কোনওভাবেই তা বামফ্রন্টগত ভাবে নয়। আমরা আমাদের রাজনৈতিকভাবে কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দেব।" সবে মিলিয়ে জঙ্গলমহল পুরুলিয়ায় বাম ঐক্যে ফাটল যেন ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। কিন্তু ফরওয়ার্ড ব্লক পিছু হঠতে চায় না। তাই ১ বৈশাখ, রামনবমী, হনুমানজয়ন্তী পার হওয়ার পর ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করবেন প্রার্থী। ওই দিন ঝালদা শহরে ফরওয়ার্ড ব্লকের মহিলা সংগঠন অগ্রগামী মহিলা সমিতির মিছিলের মধ্য দিয়ে সিংহ প্রার্থীর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। তারপর দলীয় কর্মীদের সিংহ সাজিয়ে নৃত্য ভঙ্গিমায় প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেবেন ৩০ এপ্রিল।
সাতের দশকে একসময় বিড়ি বেঁধে সংসার চালাতেন তিনি।১৯৭৭ সালে প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ চিত্ত মাহাতোর হয়ে তাঁর গ্রাম রাহানের বুথে এজেন্ট হয়েছিলেন। ১৯৭৮-এ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। ওই বছরই উপপ্রধান। ১৯৭৯- তে প্রধান। দু' দু বার কোটশিলা পশ্চিম লোকাল কমিটির সম্পাদক। ২০০৭-০৮ থেকে দলের কোটশিলা জোনাল সম্পাদক। সেই দায়িত্ব আজও কার্যত পালন করছেন তিনি। বর্তমানে জোনাল না থাকলেও দুটো লোকাল সমন্বয় কমিটির সম্পাদক তিনি। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো পুরুলিয়া অগ্রগামী কিষান সভার জেলা সাধারণ সম্পাদক। তাঁর হাত ধরেই দলের কৃষক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেই সঙ্গে অগ্রগামী বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে ওই শ্রমিকদের কল্যাণের কাজে তাঁর লড়াই চলছে।
[আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে কমিশন’, রাজভবন থেকে বেরিয়ে তোপ অভিষেকের]
প্রার্থীর কথায়, "আমি নেতাজির একজন কর্মী। তাঁর নীতি আদর্শ মেনে আমি চলেছি। আমার দল চলছে। প্রয়াত সাংসদ চিত্ত মাহাতোর হাত ধরে আমার ফরওয়ার্ড ব্লক শুরু। বামফ্রন্টের এমন হাল হবে তা কোনওদিনই ভাবিনি।" চাষাবাদ করে সংসার চালানো আর সেই আয় থেকেই কিছুটা নিজের এলাকায় দলের কাজে ব্যবহার। এভাবেই ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা রিগিদ-সহ কোটশিলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সিংহের গর্জনকে ধরে রেখেছেন কমরেড ধীরেন্দ্রনাথ। আক্ষরিক অর্থেই যেন দেশনায়কের পথকে অনুসরণ!