সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবসন্ন, শোকের পাথর হয়ে গিয়েছে মুখ। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জলও শুকিয়ে গিয়েছে। হেঁটেই চলেছেন তাঁরা। আর কিছুটা পথ পেরোলেই পৌঁছে যাবেন বাড়িতে। কিন্তু সেই চেনা পথও তাঁদের কাছে ক্রমে দুর্গম হয়ে উঠেছিল। পায়ে জুতো নেই। কাদাপথ ধরে হেঁটে চলেছেন পাশাপাশি। মাঝেমধ্যেই ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের কাঁধেই মাথা নোয়ানো দুই সন্তান। শরীরের উপরিভাগ সাদা কাপড় আর চাদর দিয়ে মোড়ানো। দুই সন্তানেরই পা উন্মুক্ত। এভাবেই দুই সন্তানকে নিয়ে হেঁটে চলেছেন ওঁরা। না, ওদের সন্তানরা ঘুমাচ্ছে না। উঠে পড়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই। ওদের ঠান্ডাও লাগছে না। কারণ ওরা দু’জনেই যে চিরঘুমে চলে গিয়েছে। দুই সন্তানের নিথর দেহ কাঁধে ফেলে হেঁটেই চলেছেন ওঁরা।
আর এই দৃশ্যই অবিকল স্মৃতি উসকে দিল আট বছর আগে ২০১৬ সালে ওড়িশার দানা মাঝির ঘটনা। ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশের কুশিনগর এবং প্রয়াগরাজের ঘটনা। তবে এই ঘটনা ওড়িশা বা উত্তরপ্রদেশ নয়, মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলির। জ্বরে ভুগছিল দুই শিশুপুত্র। সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি দম্পতি। হাসপাতাল যে অনেক দূরে। অর্থও নেই যে, অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে নিয়ে যাবেন। তা-ও নিজেরাই ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে অসুস্থ দুই সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই সন্তানের অবস্থার আরও অবনতি হয়। সময়মতো চিকিৎসা না মেলায় মৃত্যু হয় দুই শিশুর।
[আরও পড়ুন: গণেশ চতুর্থীতে বিশেষ অর্ঘ্য, লালবাগচা রাজাকে ২০ কেজি সোনার মুকুট অনন্তর]
দুই সন্তানের মৃত্যুতে দিশাহারা হয়ে পড়ে দম্পতি। শেষমেশ সন্তানদের দেহ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অ্যাম্বুল্যান্সের খোঁজ করেন। কিন্তু তা-ও জোটেনি তাঁদের। উপায় না দেখে শেষে দুই সন্তানের দেহ কোলে নিয়েই বাড়ির পথে হেঁটে রওনা হন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
[আরও পড়ুন: প্রায় গা ছুঁয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে গেল ট্রেন! বড়সড় দুর্ঘটনার মুখে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী]
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ওড়িশার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাঝির স্ত্রীর মৃত্যু হয় এক সরকারি হাসপাতালে। অতিকষ্টে চিকিৎসার খরচটুকু জোগাড় করতে পারলেও স্ত্রীর মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি হতদরিদ্র দানা মাঝি। হাসপাতালে বারবার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। অগত্যা স্ত্রীর দেহ কাঁধে চাপিয়েই ৬৭ কিলোমিটার দূরে নিজের গ্রামে ফেরেন তিনি।