সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাত্মা গান্ধীর হত্যা নিয়ে কয়েক দশক ধরে উঠে আসছে প্রশ্ন। প্রকাশ্যে গুলি চালালেও গডসেকে সামনে রেখে ঘুঁটি নাড়া হয়েছিল বলেই মনে করেন অনেকে। সেই প্রশ্নই এবার ফের উঠে এসেছে। নতুন করে তদন্তের দাবি জোরাল হয়েছে। এমনই পরিস্থিতিতে নতুন করে গান্ধী হত্যাকাণ্ডে ফের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রাজি হল সুপ্রিম কোর্ট। অবশ্য সে সম্ভাবনা খতিয়ে প্রখ্যাত আইনজীবী এবং প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অমরেন্দর শ্যারনকে ‘অ্যামিকাস কু্যরি’ বা আদালত বন্ধু নিয়োগ করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে কি না, তা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে আদালতকে জানাবেন তিনি। সেই সঙ্গে বিচারপতি এস এ বোবড়ে এবং এল নাগেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট মামলাকারীকে প্রশ্ন করেছে, গান্ধী হত্যাকাণ্ডে দু’জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আপনি বলছেন, তৃতীয়জন ছিল। কেউ কি এখনও বেঁচে আছেন? এর জন্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে কোথায়? আদালতের মন্তব্য, এই ব্যাপারে কোনও সংগঠনকে দোষী করা যায় না। কেউ বেঁচে থাকলে বলুন। শুক্রবার ১৫ মিনিটের জন্য সংক্ষিপ্ত শুনানি হয়। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩০ অক্টোবর।
[জিএসটি-র হারে বড় পরিবর্তন, স্বস্তি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের]
মামলাকারী মুম্বইয়ের বাসিন্দা পঙ্কজ ফড়নিসের দাবি, মহাত্মা গান্ধী হত্যায় একটি বিশেষ সংগঠনের হাত ছিল। বিষয়টিতে সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত করা উচিত। এর আগে ১৯৪৯ সালে প্রিভি কাউন্সিলেরও বক্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের উচিত তদন্ত করা। কিন্তু তার মধ্যেই দুই দোষী সাব্যস্তের ফাঁসি হয়ে যায়। এদিন বেঞ্চ আবেদনকারীর উদ্দেশে বলেছে, আমরা আপনার উদ্যোগের প্রশংসা করছি, কিন্তু এই মামলার আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। মামলায় আবেদনকারী পঙ্কজ ফড়নিস প্রশ্ন তুলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর কি তৃতীয় কোনও হত্যাকারী ছিল? পুলিশ তো ‘থ্রি বুলেট’ তত্ত্বে বিশ্বাস করে। গান্ধীকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি চালানো হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। তবে কি চতুর্থ বুলেটও ছিল, যা নাথুরাম গডসে ছাড়া অন্য কেউ ছুড়েছিল? সেই সঙ্গে গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পিছনে বড়সড় চক্রান্ত থাকার আশঙ্কা করে তা উন্মোচনের জন্য নতুন করে তদন্তের নির্দেশের আবেদন করেছেন তিনি।
আবেদনকারী ফড়নিস মুম্বইয়ের ‘অভিনব ভারত’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের ট্রাস্টি এবং গবেষকও। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, গান্ধী হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে সত্য চেপে রাখার অন্যতম বড় ঘটনা নয় তো? কিংবা তাঁর মৃত্যুর জন্য বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ভূমিকা ঢাকতে কোনও চেষ্টা হয়েছিল, কি হয়নি? আবেদনেই ফড়নিস উল্লেখ করেছেন, ১৯৬৬ সালে গঠিত তদন্ত কমিশন এই ব্যাপারে তদন্তে ব্যর্থ হয়।
[অ্যাডমিট কার্ডে হাজির স্বয়ং গণেশ, তাজ্জব পড়ুয়ারা]
নাথুরাম গডসে এবং নারায়ণ আপ্তেকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য ‘থ্রি বুলেট’ তত্ত্বের বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, যা সব আদালতেই গ্রাহ্য হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ১৫ নভেম্বর দোষীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। কিন্তু প্রমাণের অভাবে সাভারকর নির্দোষ খালাস পেয়ে যান। সাভারকরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০১ সালে অভিনব ভারতের প্রতিষ্ঠা হয়। যারা সমাজের দুর্বল শ্রেণির জন্য কাজ করে থাকে। ফড়নিস একইসঙ্গে দাবি করেছেন, সেই সময়ের সংবাদগুলি থেকে জানা যায়, গান্ধীর শরীরে চারটি গুলি লেগেছিল। তিন ও চার গুলির মধ্যে এই ফারাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি গডসে যে পিস্তল থেকে গুলি ছুড়েছিল, তাতে সাতটি গুলির জায়গা ছিল। পুলিশ গডসের পিস্তলটি বাজেয়াপ্ত করার সময় সেটিতে তখনও চারটি গুলি ছিল। সেই থেকেই এমন ধারণা করা হয় যে, গান্ধীর উপর তিনটি গুলিই চলেছিল। অর্থাৎ, গডসের পিস্তল থেকে তিনটি গুলিই চলেছিল। তবে গান্ধীর শরীরে চতুর্থ বুলেটটি কোথা থেকে এল?
The post গান্ধী হত্যার আদৌ কি তদন্তের প্রয়োজন? খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট appeared first on Sangbad Pratidin.