সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্রিজের নিচে থাকা মেট্রো রেলের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা ঠিক আছেন তো? মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাট উড়ালপুল ভেঙে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে সবার আগে এই আশঙ্কাই ঘুরপাক খাচ্ছিল। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন শ্রমিকদের বাড়ির লোকেরাও। আর ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে অবশেষে উদ্ধার করা গেল ২১ বছরের প্রণব দে-কে। বহরমপুরের তিলপাড়ার সেই বাসিন্দা তখন মৃতদেহে পরিণত হয়েছেন।
বুধবার থেকে প্রণবের খোঁজ না মেলায় উদ্বেগ বেড়েছিল পরিবারের। ঘটনাস্থলে পৌঁছেও গিয়েছিলেন বাড়ির সদস্যরা। “এখনও যখন খোঁজ পাওয়া যায়নি, মানে আমরা ধরেই নিয়েছি ও আর নেই।” মৃতদেহ উদ্ধারের কিছু আগেই বলছিলেন আত্মীয় পরিমল দে। কান্নায় চোখ ভিজেছে বাড়ির লোকেদের। একটা সেতুভঙ্গের ঘটনায় টুকরো টুকরো হয়ে গেল দে পরিবারও। সৌমেন বাগের পর মাঝেরহাট ব্রিজ কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল দুই। গৌতম মণ্ডল নামে আরও এক ব্যক্তির খোঁজ চালাচ্ছে উদ্ধারকারী দল।
[মেট্রোর কাজের জন্যই দুর্ঘটনা, মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর]
আর যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁরা কেমন আছেন? নাহ, ভাল নেই তাঁরা। প্রাণে বেঁচে হয়তো পরের দিনের আলো দেখতে পেয়েছেন, কিন্তু ভিতর থেকে দারুণ আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ। মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন প্রত্যেকে। সরকারি মতে এসএসকেএমে এখনও ভরতি সাতজন। বেসরকারি মতে সংখ্যাটি নয়। আহত নজরুল মোল্লার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। বুকের পাঁজরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। ঘুরে গিয়েছে হাঁটু। আপাতত আইটিউতে ভরতি তিনি। এতটাই মানসিক ট্রমায় রয়েছেন, যে এদিন হঠাৎই ‘ফ্লাইওভার…ফ্লাইওভার’ বলে চিৎকার করে ওঠেন আহত ব্যক্তি। প্রত্যেকের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
পৈলানে ম্যানেজমেন্টের ছাত্র প্রান্তিক গোস্বামী চোট পেয়েছেন বুকে-কাঁধে ও পিঠে। ভবানীপুরের বাসিন্দা ব্রিজ ভাঙার সময় ছিলেন মিনিবাসে। সেই ভয়ংকর মুহূর্তে প্রাণে বাঁচতে আতঙ্কে বাস থেকে লাফ দিয়েছিলেন তিনি। মাথায় চোট পাওয়া গণেশ প্রসাদকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আইটিইউতে শিফ্ট করা হবে তাঁকে। তবে শিশির মণ্ডল, রাজেশ সিং, শেখর জানা ও গুরুপদ জানার অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
[সৌমেন নেই, বন্ধু পাপাই পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সঙ্গে]
ভিডিও সৌজন্যে: গৌতম ব্রহ্ম
এদিকে সিএমআরআই হাসপাতালে ভরতি পাপাই রায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাঁরই বন্ধ সৌমেন বাগ পরিবারকে কাঁদিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছিলেন মঙ্গলবার। এছাড়াও ভরতি রয়েছেন জামিল হানিফ, অনুপম সাহু এবং সুব্রত ঘোষ। তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন বাড়ির লোকেরা। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিক ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন তো এঁরা। নাকি একটা সেতুভঙ্গের ঘটনা পালটে দেবে তাঁদের গোটা জীবনটা? উত্তর অধরা।
The post মেট্রোর কাজে এসেই কাল হল, ২৪ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার শ্রমিকের দেহ appeared first on Sangbad Pratidin.