বাবুল হক, মালদহ: মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নাবালিকার রহস্যমৃত্যুর কিনারা করল মালদহ জেলা পুলিশ। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
১৫ বছরের ওই নাবালিকাকে ফোন করে ডেকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়। তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে পুলিশের জেরায় ধৃত যুবক মেয়েটিকে খুন করার কথা স্বীকার করলেও ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করেছে বলে তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে মালদহের কালিয়াচক থানার আকন্দবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার উজিরপুরের ফাঁকা মাঠ থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক নাবালিকার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কালিয়াচকের উজিরপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা সন্দেহ করেন, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর খুন করে কেউ বা কারা জমিতে ফেলে গিয়েছে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার জেরে কালিয়াচকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। ওই দিন বিকেল নাগাদ মৃত নাবালিকার নাম ও পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। তারপর মৃতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এই ঘটনায় পুলিশ দুই যুবককে সন্দেহ করে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।
[আরও পড়ুন: যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি কুস্তিগিরদের, বিস্ফোরক ভিনেশ ফোগাট]
তবে একটি থানা নয়, পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদবের নির্দেশে চারটি থানার দুঁদে অফিসারদের নিয়ে গঠন করা হয় বিশেষ তদন্ত কমিটি। কালিয়াচক, ইংলিশবাজার, ওল্ড মালদহ ও গাজোল, এই চার থানার বাছাই করা পুলিশ অফিসাররা ছাড়াও তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দু’জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং কালিয়াচকের এসডিপিও সম্ভব জৈন। তদন্তে নেমেই নাবালিকার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ প্রথমে দু’জনকে আটক করে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, চার থানার অফিসারদের তদন্তের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই রহস্যের কিনারা করা সম্ভব হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তদন্ত প্রক্রিয়াটির দেখভাল করছেন দু’জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং একজন এসডিপিও। পুলিশ সুপার জানান, নাবালিকাকে ওড়নার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ধৃত যুবক সেটা স্বীকার করেছে। অন্যান্য বিষয়গুলিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম বিশ্বজিত মণ্ডল (২৯)। ধৃত যুবক পুলিশের জেরায় খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। মাত্র ন’দিন আগে ফোনের মাধ্যমে ওই নাবালিকার সঙ্গে বিশ্বজিতের পরিচয় ঘটে। ফোনেই কথোপকথন হচ্ছিল। বিয়ের প্রলোভন দেওয়া হয়। সোমবার ফোনে ডাক পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় নাবালিকা। ওই যুবকের সঙ্গে ইংলিশবাজার থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মহদিপুরে চলে যায়। সেখানে তাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকতে পারে। তারপর মেয়েটি বিশ্বজিৎকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু বিশ্বজিৎ মেয়েটিকে বাড়ি ফিরে যেতে বলছিল। কারণ, বিশ্বজিৎ বিবাহিত, তার সংসার রয়েছে। বিয়েতে নারাজ ওই যুবক শেষপর্যন্ত ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে মেয়েটিকে খুন করে ঘটনাস্থলে দেহ ফেলে পালিয়ে যায়।