সুব্রত বিশ্বাস: মেট্রোয় আগুন লাগার পর যখন কামরা ধোঁয়ায় ভরতি, তখন আর্তচিৎকার করেও চালকের সঙ্গে যাত্রী কামরার সংযোগকারী দরজা খোলাতে পারেননি যাত্রীরা। আর তাতেই বিপত্তি বাড়ে কয়েক সহস্রগুণ বলে যাত্রীদের অভিযোগ। এত বড় বিপত্তি আর ভোগান্তির জন্য যাত্রীরা চালককেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, চালক দরজা বন্ধ করে রাখায় যাত্রীরা ট্রেন থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। প্রায় ঘণ্টাখানেক এই পরিস্থিতি চলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিষয়টা মোটেই সেভাবে দেখছে না। মেট্রোর চিফ অপারেশন ম্যানেজার সাত্যকি নাথ জানিয়েছেন, “ঘটনার আকস্মিকতায় চালক ক্যাব থেকে ল্যাডার নামাতে ব্যস্ত ছিলেন। কারণ সামনে ও পিছনের ক্যাবে একমাত্র ল্যাডার থাকে। যা দিয়ে যাত্রীরা নেমে আসেন।”
আগুন লাগার প্রায় ২০ মিনিট পর উদ্ধার কাজ শুরু করে মেট্রো। তার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে বেরিয়ে আসে মানুষ। এই সময়টাকে ‘ভয়ানক’ বলে বর্ণনা করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরি। তিনি বলেন, ‘ইমোশনাল ট্রমা’ থেকে সব কিছু ঘটতে পারে। আমি মারা যাব, এই ভাবনা থেকে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। দমবন্ধ পরিবেশ আর ধোঁয়ায় কার্বন মনোক্সাইড দ্বারা শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। বিষয়টা মোটেই লঘু বলে মনে করছেন না স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মেট্রো অবশ্য মৃত্যুর ঘটনা না ঘটায় কপালে হাত ঠেকাচ্ছে। সাত্যকিবাবু বলেন, অহেতুক আতঙ্ক ছড়াবেন না।
বিপত্তির কারণে, যাঁদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, পা ভেঙেছে, শরীরে ক্ষত হয়েছে, তাঁদের নিজেদের কাজকেই দায়ী করেছে মেট্রো। সিপিআরও ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যাঁরা বেশি মাত্রায় ঘাবড়ে গিয়ে জানালা ভেঙে ঝাঁপ দিয়েছেন, তাঁদেরই এই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, মেট্রোয় বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য দক্ষ কর্মী রয়েছে। যাঁরা সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। এঁদের উপরই ভরসা রাখতে বলেন তিনি। এঁরাই উদ্ধার করতে পারবেন আগামিদিনে বিপর্যয় হলেও। এই ভরসা রাখার বিষয়টি এদিন মেট্রো স্টেশনগুলিতে বারবার ঘোষণা করা হয়। যদিও এই ঘোষণায় শুক্রবার যথেষ্ট বিরক্ত যাত্রীরা। তাঁদের কথায়, ঢের হয়েছে। উপায় নেই তাই এই মেট্রোর যাত্রা। ঘটনার পরই স্পষ্ট হয় পরিষেবার মান কতটা উন্নত। বৃহস্পতিবারও বিপর্যয় মোকাবিলার দক্ষতা অনুভব করা গিয়েছে। ধোঁয়ার সঙ্গে দমবন্ধ করা পরিবেশে মেট্রোয় ‘ভরসা’ রেখে নিশ্চিত মৃত্যুর প্রহর গোনা ছাড়া আর কিছু না।
শুক্রবার ট্রাফিক, ইলেকট্রিক বিভাগ সহ অন্য কয়েকটি বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ অনুধাবন করে সারা রাত ধরে ২২টি রেকের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তার পরেই শুক্রবার সেগুলিকে চালানো হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত রেকটিও চলছে এদিন।
[আগুন-আতঙ্ক থেকে শিক্ষা, এবার থেকে প্রতিটি মেট্রোয় থাকবে আরপিএফ]
The post মেট্রোয় আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় ভরে যায় কামরা, কী করছিলেন চালক? appeared first on Sangbad Pratidin.