নব্যেন্দু হাজরা: হাতে আর ছ মাস। তার পরই বসে যাবে কলকাতায় চলাচল করা প্রায় অর্ধেকের বেশি বেসরকারি বাস। যার ফলে রাস্তায় বেরিয়ে বাসের জন্য হয়রানি আরও বাড়ার আশঙ্কা যাত্রীদের। ১৫ বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণেই আদালতের নিয়ম মেনে এই গাড়ি বসিয়ে দিতে হবে। আর তার ফলে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার বাস শহর থেকে বসে যেতে পারে। ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা একাধিক রুটেরও। বর্তমানে শহরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার বেসরকারি বাস চলে বলে জানাচ্ছেন বেসরকারি মালিকরা। তার মধ্যে আড়াই হাজার গাড়ি বসে গেলে তা প্রায় অর্ধেকেরও কম হয়ে যাবে। মালিকদের দাবি, নতুন বিএস সিক্স বাস এখন রাস্তায় নামাতে খরচ কম করে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা। পরিবহণ ব্যবসার যা হাল, তাতে এই টাকা খরচ করে আর কতজন নতুন বাস নামাবেন তা নিয়ে তাঁদের যথেষ্টই সন্দেহ রয়েছে।
২০০৯ সালের আগস্ট মাসে কলকাতা হাই কোর্ট একটি রায়ে বলেছিল, ১৫ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে কোনও বাস কলকাতা শহরে চালানো যাবে না। পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত একটি মামলায় এই রায় দিয়েছিল হাই কোর্ট। এই নিয়মেই সেই বছর প্রায় আড়াই হাজার বাস বসিয়ে নতুন বাস রাস্তায় নামান মালিকরা। আর ২০০৯ সালে কেনা সেই বাসগুলোর বয়স আগামী বছর ১৫ বছর পূর্ণ করছে। বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলির দাবি, সেই নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে এ বার রাজ্যজুড়ে বহু বাস মাস ছয়েকের মধ্যে বাতিল হতে চলেছে। যার সরাসরি প্রভাব রাজ্যের জনজীবনে পড়বে।
[আরও পড়ুন:করমণ্ডল দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা, সিগন্যাল ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে রেল]
বেসরকারি বাস মালিকদের একাংশের দাবি, ১৫ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে আগামী বছর যে সব বেসরকারি বাস বাতিল হচ্ছে, কোভিড সংক্রমণের সময় প্রায় দুবছর সেই বাসগুলি চলেনি। তাই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই বাসগুলিকে কমপক্ষে আরও দুবছর সময় দেওয়া হোক। তাতে এক দিকে করোনাকালে যে আর্থিক ধাক্কা বেসরকারি পরিবহণ খেয়েছে, তার থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। তেমনই, বিকল্প জ্বালানির যানবাহন রাস্তায় নামানোর পরিকাঠামো তৈরি করার সময়ও পাওয়া যাবে। এবং নতুন বাস নামানোর সময়ও পাওয়া যাবে হাতে।
এই সংক্রান্ত দাবি নিয়ে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের তরফে পরিবহণ দপ্তরকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনও উত্তর পাননি বলেই জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এক সঙ্গে সরকারি এবং বেসরকারি বাস রাস্তা থেকে উঠে গেলে পরিবহণ পরিষেবা যে কতটা ভেঙে পড়তে পারে তা আমাদের সবারই ভাবা উচিত। আমি বার বার পরিবহণ দপ্তরকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি। কোভিডের সময় দুবছর বাস চলেনি। তাই সরকার চাইলে সেই দুবছর বাড়তি সময় এই বাসের ক্ষেত্রে দিতে পারে।’’ সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘নতুন বাস কিনে তা চালানোর মতো অবস্থা এখন মালিকদের নেই। কারণ সেই টাকা ভাড়া থেকে তোলা সম্ভব নয়। সরকারের নানা নিয়ম-কানুনে পড়ে শিল্পটাই একদিন না শেষ হয়ে যায়!’’ তবে পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানান, এটা আদালতের নিয়ম। কোনওভাবেই তা বদল করা সম্ভব নয়।