অর্ণব আইচ: গরমে তাদের কমেছে ডিউটির সময়। কিন্তু রাতেও ইডেনে ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত আর ডিউটি দিচ্ছে না কলকাতা পুলিশের ঘোড়া। গত নভেম্বর মাসে ইডেনে বাজি ফাটানোর কারণে আতঙ্কিত হয়ে একটি পুলিশের ঘোড়ার মৃত্যু ও পাঁচটি ঘোড়ার আহত হওয়ার ঘটনার জেরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। যাতে আইপিএল ম্যাচ জেতার আনন্দে কেউ বাজি ফাটালে কোনও ঘোড়া আতঙ্কিত অবস্থায় অস্বাভাবিক আচরণ না করে বা তাদের কোনও শারীরিক ক্ষতি না হয়, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রচণ্ড গরমে কষ্ট পাচ্ছে কলকাতা পুলিশের মাউন্টেড পুলিশের ঘোড়ারাও। তাই তাদের পরিচর্যা করা হচ্ছে বিভিন্নভাবে। ডিউটির সময় যাতে তাদের কষ্ট না হয় সেই চেষ্টাই করছেন সওয়াররা। ময়দানে ডিউটি চলাকালীন যথাসম্ভব গাছের ছায়ায় নিয়ে গিয়ে রাখা হচ্ছে ঘোড়াগুলিকে। তাদের উপর যাতে চাপ না পড়ে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আস্তাবলেও ঘোড়গুলিকে একাধিকবার স্নান করানো হচ্ছে। খাবারের সঙ্গে লিনসিড অয়েলের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার তাদের জলের সঙ্গে একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের তরল ওষুধ ও গ্লুকোজ মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, দিনে ঘোড়াদের ডিউটির সময় কিছুটা কমানো হয়েছে। কিন্তু রাতেও ইডেনে আইপিএল ম্যাচের ডিউটিতে খেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আর রাখা হচ্ছে না তাদের।
[আরও পড়ুন: নব্বইয়ের দশকে সিঙ্গল মাদার, টলিপাড়ার সাহসী অভিনেত্রী, রাজনীতিতেও ছকভাঙা জুনের জয়যাত্রা]
লালবাজারের এক কর্তা জানান, তাঁরা চান না, তাঁদের বাহিনীর কোনও ঘোড়ার ক্ষতি হোক। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বছরও খেলা শেষের পর যতক্ষণ না দর্শকরা ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তার দিকে রওনা দিচ্ছেন, ততক্ষণ রাস্তায় ডিউটি দিত কলকাতা পুলিশের ঘোড়া। আইন ও শৃঙ্খলার উপর কড়া নজর থাকত সওয়ারদের। সেই কারণে সন্ধ্যায় খেলা শেষ হলে ডিউটি শেষ হতে হতে প্রায় মধ্যরাত পেরিয়ে যেত। কিন্তু গত নভেম্বর মাসে ইডেনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতের জয়ের আনন্দ ‘কেড়ে নেয়’ কলকাতা পুলিশের ঘোড়ার প্রাণ। শেল ফাটার প্রচণ্ড শব্দে আতঙ্কিত হয়ে দিকবিদিক শূন্য হয়ে দৌড়য় কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের ৬টি ঘোড়া। আহত হয় ঘোড়াগুলি। এ ছাড়াও দুই ঘোড়ার সওয়ার-সহ আহত হন চারজন। ঘোড়াগুলিকে রাতে পুলিশের আস্তাবলে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু আতঙ্কিত অবস্থায় রবিবার রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় পাঁচ বছরের পুরুষ পুলিশ-ঘোড়া ‘ভয়েস অফ রিজনস’-এর।
সেই ঘটনার থেকে শিক্ষা নিয়েই লালবাজার সিদ্ধান্ত নেয়, ম্যাচের প্রথম দিকে ইডেনের আশপাশে আইন ও শৃঙ্খলার দেখভাল সংক্রান্ত ডিউটি করবে কলকাতা পুলিশের ঘোড়া। ম্যাচ শুরু হওয়ার পরও দর্শকরা ইডেনে প্রবেশ করেন। তাই ম্যাচের শুরুর পরও অন্তত এক বা দেড় ঘণ্টা ইডেনের সামনে মোতায়েন থাকছে কলকাতা পুলিশের ঘোড়া বাহিনী। কিন্তু তার পরই তাদের আস্তাবলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।