দুলাল দে : ফুটবলার ছাড়া নিয়ে একটা সময় দেশ আর ক্লাবের লড়াই প্রায় প্রতিদিনকার খবর ছিল। আইএসএল (ISL) হওয়ার পর অন্তত সেই লড়াইটা কমেছিল। ফেডারেশনও ফিফা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ফুটবলারদের জাতীয় শিবিরে ডাকায় কোনও সমস্যাই হচ্ছিল না। কিন্তু ফিফার তারিখের বাইরে গিয়ে এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির জন্য জাতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ যেই বেশিদিনের জন্য প্রস্তুতি শিবির শুরু করলেন, সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়ে গেল। বারবার বলার পরেও কলকাতায় জাতীয় শিবিরের জন্য ফুটবলার ছাড়ল না আইএসএলের দল মুম্বই সিটি এফসি।
এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির জন্য মুম্বই সিটি এফসির (Mumbai City FC) ৬ জন ফুটবলারকে জাতীয় শিবিরে ডেকেছিলেন কোচ ইগর স্টিমাচ। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে (AFC Champions League) খেলার জন্য কোনও ফুটবলারকে সেই সময় জাতীয় শিবিরের জন্য ছাড়তে রাজি হয়নি মুম্বই। তখন ৬ জন ফুটবলারকে বাদ দিয়ে নতুন করে তিনজন ফুটবলারের নাম দিয়ে তাঁদের শিবিরে যোগ দিতে বলে ফেডারেশন। কিন্তু দেখা গেল, ফেডারেশনের সেই চিঠিকেও গুরুত্ব দিল না মুম্বই সিটি এফসি। ২৭ এপ্রিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুম্বইয়ের শেষ খেলা হলেও, ডাক পাওয়া তিনজন ফুটবলার রাহুল ভেকে, আপুইয়া এবং বিপিন সিং ১০ মে’ তেও কলকাতার জাতীয় শিবিরে যোগ দেননি। যা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন জাতীয় কোচ।
[আরও পড়ুন: আইপিএলের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রণবীর-রহমান শো! থাকবে আরও চমক]
ভারতীয় দলের (Indian Football Team) জন্য ফুটবলার না ছাড়লেও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সেরকম কিছু পদক্ষেপ নিতে পারছে না অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। এর একটাই কারণ, রাহুল ভেকেদের না ছাড়ার জন্য যে মুহূর্তে ফেডারেশন মুম্বইকে বলবে, সেই মুহূর্তে মুম্বই ফিফা ক্যালেন্ডারের কথা বলবে। এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জনের কথা ভেবে এরকম দীর্ঘ শিবির করার পরিকল্পনা নিয়েছেন স্টিমাচ। কিন্তু ফিফার নিয়মে যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচে এত দীর্ঘ শিবিরে ফুটবলার ছাড়ার জন্য কোনও নিয়ম নেই বলে, মুম্বইও ফুটবলার ছাড়েনি। ফলে পুরো ব্যাপারটায় বিরক্ত হলেও স্টিমাচ বা ফেডারেশন কেউই কিছু করতে পারছে না। ফলে রাহুল ভেকে, বিপিন সিং এবং আপুইয়াকে বাদ দিয়েই জাতীয় দল তৈরির কথা ভেবে নিয়েছেন স্টিমাচ।
তবে এএফসির খেলা থাকলেও মোহনবাগানের (Mohun Bagan) ফুটবলার পেতে জাতীয় কোচের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কলকাতায় এসে মঙ্গলবার থেকে সুনীলদের নিয়ে প্র্যাকটিসে নেমে পড়লেন স্টিমাচ। শিবির শুরুর আগে এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, ফুটবলার ছাড়া নিয়ে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দোর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। এএফসিতে মোহনবাগানের ভাল ফলের জন্য তিনি যেমন মোহনবাগানকে সাহায্য করতে চান। সেরকম ফেরান্দোও জাতীয় দলকে সাহায্য করতে চান এশিয়ান কাপের মূলপর্বে যাওয়ার জন্য। যে কারণে, স্টিমাচ জানিয়েছেন, এএফসিতে খেলা মোহনবাগানের ফুটবলারদের আপাতত তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার ফেরান্দো জানিয়েছেন, এএফসির খেলার শেষ হলেই প্রীতম কোটালদের ছেড়ে দেবেন জাতীয় শিবিরের জন্য।
সেই সময় দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার জন্য দোহায় উড়ে যাবেন সুনীল ছেত্রীরা। ফিরেই কলকাতায় এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ম্যাচ। তার আগে কলকাতায় আই লিগের ফুটবলারদের নিয়ে সংগঠিত দলের সঙ্গে দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ। পাশাপাশি ১১ মে’ মোহনবাগানের বিরুদ্ধেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন সুনীল ছেত্রীরা। তিনটি ম্যাচই ক্লোজড ডোরে খেলবে ভারতীয় দল। তবে এই প্রতিযোগিতাটা ভারতীয় দলের মতো কোচ ইগরের জন্যও যথেষ্ট চাপের প্রতিযোগিতা। কারণ, এশিয়ান কাপের মূলপর্বে কোয়ালিফাই না করলে চাকরি যাবে স্টিমাচেরও। তবুও তিনি স্বীকার করতে রাজি নন যে চাপে আছেন। বললেন, “সত্যিই আমি কোনও চাপে নেই। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার গুরুত্ব সবাই বোঝেন। এর গুরুত্ব নতুন করে আর বলার দরকার নেই। তবে তারজন্য আলাদা করে চাপে থাকছি না।”