কৃষ্ণকুমার দাস: ঘূর্ণিঝড় ফণীর দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের বিপর্যয় মোকাবিলায় শুক্রবার রাতভর পুরভবনের কন্ট্রোল রুমে থাকছেন পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুলিশ, দমকল ও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে দুর্গতদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ফণীতে বিপন্নদের উদ্ধারের পাশাপাশি তিনদিনের খাওয়া-দাওয়া ও ত্রাণেরও ব্যবস্থা করলেন মহানাগরিক।
কলকাতার পাশাপাশি লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়া জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতেও দ্রুত বিপর্যয় মোকাবিলায় পুলিশ ও প্রশাসনকে পৌঁছে দিলেন পুরমন্ত্রী। বারাসত, সোনারপুর, বালি, উত্তরপাড়া এবং কাকদ্বীপ, রিষড়ার ক্ষতিগ্রস্তদের বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর (৯৮৩০০৩৭৪৯৩) দিয়েছেন। মহানগরের ত্রাণ ও উদ্ধারের পাশাপাশি ঘনঘন খড়গপুরে থাকা মুখ্যমন্ত্রীকে পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্টও দিয়েছেন তিনি। মেয়র জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় রাস্তায় নেমেছে, ক্ষতিগ্রস্তদের সমস্তরকম সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। ত্রাণ ও উদ্ধার পুরোদমে চলবে। কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের কর্তারাও রাতভর জাগছেন, বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় নেমে বিপন্ন মানুষের পাশে থাকবেন।”
শুক্রবার দুপুরে পুরভবনে এসেছিলেন মেয়র, ফণীর তাণ্ডবের আশঙ্কার জেরে থেকে গেলেন রাতভর। অফিসে এসেই কমিশনার ও বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা-বৈঠক করেন। বিকেলে নিজেই ফোনে আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে কখন ফণী তিলোত্তমার বুকে আছড়ে পড়বে তা জেনে নেন। এরপরই ডেপুটি মেয়র ও মেয়র পারিষদদের দু’টি করে বরো অফিসে বসে রাতভর নজরদারির জন্য পাঠিয়ে দেন। ঠিক হয়, মেয়র নিজে যেমন পুরভবনের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুমে থাকবেন, তেমন ডেপুটি মেয়র যাবেন হাতিবাগানে ১ ও ২ নম্বর বরো অফিসে। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার ৭ ও ৮ নম্বর বরোয়।
[ আরও পড়ুন: রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ফণীর মোকাবিলায় সরকারকে সাহায্যের আশ্বাস রাজ্য বিজেপির ]
মেয়র পারিষদ নিকাশি পুরসভার কন্ট্রোলরুম থেকে শহরের জল জমা ও পাম্পগুলির সক্রিয়তা নিয়ে নজরদারি চালাবেন। পুরসভার অন্য মেয়র পারিষদ ও বরো চেয়ারম্যানদের বরোভিত্তিক নানা দায়িত্ব ভাগ করে দেন। ঝড় আসার আগে জানবাজার সংলগ্ন এলাকায় জরাজীর্ণ বাড়িতে আদৌ আর কেউ থাকছেন কি না, তা সরেজমিনে দেখে আসেন মেয়র।
সন্ধ্যায় পুরভবন থেকে বসে কলকাতার সমস্ত কাউন্সিলরদের কাছে অনুরোধ জানান, “রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বেন, তখনই ঘূর্ণিঝড় শহরে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ঢোকার কথা। তাই ওয়ার্ডবাসী যাতে নিরাপদে-নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন, সেই কারণে আমাদের সবাইকে জাগতে হবে। জনগণকে নিরাপদে রাখার জন্য জনপ্রতিনিধিকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।” রাতেই যে সমস্ত জায়গায় গাছ পড়েছে, সেগুলিকে সরিয়ে ফেলার জন্য বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে পুরসভার কর্মীরা।
কন্ট্রোলরুমে বসে সন্ধ্যায় বৃষ্টি শুরুর আগে বরোর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের নিজেই ফোন করেন মেয়র। জানতে চান, ‘আপনার বরোর কতগুলি বিপজ্জনক ও জরাজীর্ণ বাড়ি আছে? সেই বাড়িতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের পুরসভার তৈরি করা নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কী?’ একাধিক ইঞ্জিনিয়ার সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। এরপরই তিনি সমস্ত ইঞ্জিনিয়ারদের বলেন, বৃষ্টি শুরুর আগেই বিপজ্জনক বাড়ি থেকে দ্রুত নিরাপদস্থলে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যান। এজন্য কলকাতা পুলিশেরও সাহায্য নিতে বলেন তিনি। কন্ট্রোলরুমে মেয়র বসে থাকার সময়ই বেশ কয়েকটি ফোন আসে সোনারপুর, বারাসত ও উত্তরপাড়া এলাকা থেকে। সেখানকার বিপন্ন বাসিন্দারা সরকারি সাহায্য চান। ফোন আসতেই পুরকর্মীর হাত থেকে নিজেই ফোন তুলে নিয়ে কথা বলেন মেয়র। আশ্বাস দেন, রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত সাহায্য ও ত্রাণের। কন্ট্রোলরুমে ফোন করা কলকাতার বাইরের সমস্ত বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর জন্য নিজের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও দিয়ে দেন। সন্ধ্যায় মেয়র জানান, “রাতভর শুধু আমি নই, পুরসভার সমস্ত আধিকারিকরা পুরভবন ও সমস্ত বরো অফিসে রয়েছে। যখন যেখানে প্রয়োজন পড়ছে, ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি পুরসভার কর্মীরা যন্ত্রপাতি-গাড়ি এবং ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এবং দুর্ভোগে পড়া নাগরিকদের পাশে, শহরবাসীর জন্য ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় রয়েছে কলকাতা পুরসভা।”
দেখুন ভিডিও:
The post বিপর্যয় মোকাবিলায় রাতভর পুরভবনে কন্ট্রোলরুমে থাকছেন মেয়র appeared first on Sangbad Pratidin.