আলাপন সাহা, ক্যান্ডি: পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের (Pallekele International Cricket Stadium) সঙ্গে সেঞ্চুরিয়নের বড়সড় মিল রয়েছে। সেঞ্চুরিয়নে যেমন ঘাসের বিশাল গ্যালারি রয়েছে, এখানেও তাই। তবে গতকালের ভারত-পাকিস্তান মহাযুদ্ধের কেন্দ্রস্থল পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামের ভাবনাটা একজন ক্রিকেট-বীরের মস্তিষ্কপ্রসূত।
মুথাইয়া মুরলীধরনের (Muttiah Muralitharan)! পাল্লেকেলে মুরলীর জন্মশহর। বর্তমানে কলম্বোয় থাকেন লঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার। কিন্তু জন্ম-শহরের সঙ্গে নাড়ির টানে ধুলো জমেনি এখনও। আর সেটা জমেনি যে, কাজকর্মে বেশ বোঝা যায়। বায়োপিক নিয়ে শত ব্যস্ততার মধে্যও শুক্রবার ঠিক উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলেন পাল্লেকেলেতে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে। সোমবার আবার ফিরে যাচ্ছেন ভারত। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বায়োপিকের ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠান আছে। রোববার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সঙ্গে কথায়-কথায় মুরলী যা বললেন পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম নিয়ে, চমকপ্রদ।
[আরও পড়ুন: সপরিবারে লন্ডনে ছুটি কাটাচ্ছেন সৌরভ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাচে হাজির মহারাজ]
শোনা গেল, এককালে এ চত্বরে আশেপাশে ছুটকো-ছাটকা মাঠঘাট থাকলেও কোনও স্টেডিয়াম ছিল না। আন্তর্জাতিক ম্যাচ হওয়ার মতো, লোকে বসে খেলা দেখার মতো। মুরলী নিজেই খেলতেন স্কুলের মাঠে। ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্তির পর টেস্টে আটশো উইকেটের অধীশ্বর ঠিক করেন, তাঁর জন্ম-শহর পাল্লেকেলেতেও একটা স্টেডিয়াম হবে। আর সেই স্টেডিয়াম গড়বেন তিনি, নিজে!
দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নকে বড় পছন্দ মুরলীর। স্টেডিয়াম গড়ার সাধ জাগার পর ঠিক করেন, পাল্লেকেলে স্টেডিয়াম গড়বেন সেঞ্চুরিয়নের আদলে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সেঞ্চুরিয়ন থেকে স্থপতি নিয়ে আসেন, খোঁজা শুরু করেন বিনিয়োগকারী। দুবাইয়ের এক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন, নিজেও অর্থ খরচ করতে শুরু করেন অকাতরে। ২০০২ সাল নাগাদ কাজ শেষ হয় এই স্টেডিয়ামের। প্রথম-প্রথম শ্রীলঙ্কা বোর্ড দু’একটা ম্যাচ দিত বটে এখানে, কিন্তু তাতে লাভের লাভ হত না। যথেষ্ট আয় হত না। শেষ পর্যন্ত লঙ্কা বোর্ড নিজেরাই স্টেডিয়ামের মালিকানা নিয়ে নেয়। মুরলীকে তাঁর বিনিয়োগের অর্থ কিছুটা ফেরত দিয়েছিল বোর্ড। তবে পুরোটা নয়।
আক্ষেপ হয় না?
‘‘না তো,’’ বলতে থাকেন মুরলী। সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল নিজের জন্মশহরে একটা আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরি করার। ছোট থেকে দেখতাম অন্য শহরে খেলা হচ্ছে। কিন্তু এখানে সেভাবে হচ্ছে না। তাই ঠিক করি একটা স্টেডিয়াম তৈরি করব, যেখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হবে। আর গোটা বিশ্ব জানবে আার শহর সম্পর্কে।’’ একটা সময় ঠিক হয়েছিল, স্টেডিয়াম মুরলীর নামেই করে দেওয়া হবে। কিন্তু নানাবিধ কারণে, তা আর শেষে হয়নি। তবে তাতেও মুরলীর মনে অভিমানের জলীয় বাষ্প জমে না। বরং অক্লেশে বলে দেন, ‘‘এটা ঠিক যে, একটা সময় ঠিক হয়েছিল স্টেডিয়ামটা আমার নামে হবে। কিন্তু শেষে আর হয়নি। কিন্তু তা নিয়ে ক্ষোভ নেই আমার। বললাম না, আমি চেয়েছিলাম পাল্লেকেলেতে আন্তর্জাতিক মানের একটা স্টেডিয়াম করতে। সেটা হয়েছে, তাতেই শান্তি।’’
কত জন ক্রিকেটার এ ভাবে নিঃস্বার্থ ভাবতে পারেন, জানা নেই। কিন্তু কেউ পারুন না পারুন, মুথাইয়া মুরলীধরন অবশ্যই পারেন!