সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাশ্চাত্যের গণ্ডি পেরিয়ে সেই কবেই ভারতে প্রবেশ করেছে 'ললিপপ'। শৈশবে অনেকেই এই মিষ্টি ক্যান্ডিকে 'কাঠির মাথায় আলুরদম' বলে রসিকতা করত। মনভোলানো এই স্টিক ক্যান্ডির কদরও কম নয়! আট থেকে আশির মুখ বন্ধ করতে 'ললিপপ'-এর জুড়ি মেলা ভার। শিশুমন তো কোন ছাড়, রাজনীতির ময়দানে বিরোধীপক্ষকে কটাক্ষ করতেও সময় বিশেষে এই 'ললিপপ' ক্যান্ডির নামের আশ্রয় নিয়েছেন রাজনীতিকরা। 'হাতে ললিপপ ধরিয়ে দেওয়া'র মতো সংলাপও শোনা গিয়েছে! প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন আকার, রঙে, স্বাদে মানুষের মন ভুলিয়ে আসছে এই ললিপপ। মুখে গুঁজে দিলেই জিভে স্বাদকোরকের সাম্বা নৃত্য অবধারিত। ২০ জুলাই, জাতীয় ললিপপ দিবস। সেই সুবাদেই জেনে নেওয়া যাক কিছু মজার তথ্য।
এই ললিপপের উৎস কত পুরনো? সেই তথ্য পরিবেশন করা খুব মুশকিল। জানা যায়, প্রাগৈতিহাসিক যুগে এই চকোলেট একটা অন্য অবতারে প্রসিদ্ধ ছিল। তখন মধুতে বাদাম এবং নানা ধরণের বেরি সংরক্ষিত করে রাখা হত। যা কিনা অনেকটা ক্যান্ডি চকোলেটের মতো দেখতে হত। পরে চিনির ব্যবহার শুরু হয়। তার পর ১৬ শতকে ইউরোপের দেশগুলিতে আবিভার্ব হয় মনভোলানো ললিপপের। জানা যায়, ১৮৬০ সালের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিষ্টির দোকান এবং ওষুধের দোকানগুলিতে পর্যন্ত বিভিন্ন আকারে ললিপপ বিক্রি হত। পরে ১৯০৮ সালে এই 'সুইট ট্রিট'কে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করান জর্জ স্মিথ। বিভিন্ন প্রতিবেদন ঘেঁটে জানা গিয়েছে, এই স্মিথই আদতে ললিপপের জনক। তিনি এই খাদ্যবস্তুকে আধুনিকা রূপ দিয়ে নিয়ে আসেন। যদিও আজকের ললিপপের জনক হিসেবে কৃতীত্ব অর্জন করতে জর্জ স্মিথকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, অনেক কাঠখড়ও পোহাতে হয়েছে বলে শোনা যায়। ললিপপ-এর নামকরণের নেপথ্যেও রয়েছে এক ইতিহাস।
[আরও পড়ুন: আম চিংড়ি থেকে এঁচোড় চিংড়ি বাটা, রকমারি রেসিপি খাদ্যরসিকদের জন্য]
কীভাবে এই নামকরণ করেন জর্জ স্মিথ? তখন ১৯৩১ সাল। স্মিথ দাবি করেন, এই ভুবনভোলানো চকোলেটের নাম তিনি তাঁর প্রিয় রেসের ঘোড়া 'ললি পপস'-এর নামানুসারেই রেখেছেন, তাকে স্মরণীয় করে রাখতে। জাস্ট ভাবুন একবার, যে জাদুকাঠি আপনার ঘরের বাচ্চাদের কাছে এত প্রিয়, সেই চকোলেটের নামের উৎপত্তি এক ঘোড়ার নামানুসারে। পরবর্তীতে এই ললিপপ এক সৌজন্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় ইউরোপের দেশগুলিতে। ব্যাঙ্ক, হোটেল থেকে এমনকী স্যালোঁতে আগত অতিথিদের আপ্যায়ণের জন্য ললিপপ হাতে ধরিয়ে দেওয়া হত। পরবর্তীতে চকোলেট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো ললিপপের বাড়তি চাহিদা দেখে বেশি করে লগ্নী করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক কোম্পানি স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে ললিপপ তৈরির অভাবনীয় পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল। যা কিনাপ্রতি ঘন্টায় ৪০ থেকে ২৪০০ স্টিক তৈরি করতে পারত। ২০ শতকের প্রথম দিকে ললিপপ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিখ্যাত ছিল 'McAviney Candy Company' এবং 'Racine Confectionary Machine'। এখনও বিভিন্ন নামী সংস্থা থেকে স্থানীয় সংস্থা নানা আকারে, রংচঙে মোড়কে ললিপপের বাজার মাতিয়ে রেখেছে।