shono
Advertisement

Breaking News

পথ দেখাবে প্রযুক্তি

প্রয়োজন গ্রাম সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণার বিনাশ।
Posted: 12:51 PM Aug 01, 2023Updated: 12:51 PM Aug 01, 2023

গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্ব প্রবল। কারণ সিংহভাগ নাগরিকের বাস গ্রামীণ অঞ্চলে। নতুন পঞ্চায়েত ব‌্যবস্থায় তাই প্রয়োজন অর্থনীতির সুপরিকল্পনা এবং তার রূপায়ণ। একইসঙ্গে প্রয়োজন গ্রাম সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণার বিনাশ। তার অন‌্যতম উপায় হয়ে উঠতে পারে প্রযুক্তি। কলমে নীল সরকার

Advertisement

বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, নতুন পঞ্চায়েত গঠনের। সাবেক পঞ্চায়েত ও বর্তমানের সাংবিধানিক পঞ্চায়েতের ফারাক আকাশ-পাতাল। ভারতে যেহেতু সিংহভাগ নাগরিক বসবাস করেন গ্রাম ও প্রত‌্যন্ত অঞ্চলে, কাজেই দেশের অর্থনীতি-দুনিয়ায় তৃতীয় স্থান দখল করতে হলে গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্ব প্রবল। অথচ, এ-ও সত‌্য, গ্রামের বিকাশ ও উন্নয়ন ঠিক হয় শহরে বসে। কারণ, সাংবিধানিক ক্ষমতার কেন্দ্র জেলার সদরে ও রাজ্যের রাজধানীতে। তাহলে শহর কী করে গ্রামের দুঃখ টের পাবে? অর্থনীতির নিরিখে কেমন পঞ্চায়েত হওয়া উচিত? গ্রামের অর্থনৈতিক কাজকারবার বৃদ্ধি কীভাবে নগরের সমতুল্য করে তোলা সম্ভব?

প্রায় দেড় দশক হল দুনিয়ায় নগরবাসীর সংখ্যা গ্রামীণ জনসংখ্যাকে টপকে গিয়েছে। ভারতেও যাবে সিকি শতাব্দী পরে। অর্থনৈতিকভাবে শহরে আয় বেশি বললে গ্রাম ছেড়ে মানুষের শহরমুখী ঢেউ শিল্পোয়ন্নের সূচনা থেকেই চলছে। পাল্লা দিয়ে দেশে শহরের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে মহানগরগুলি অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে এবং বিপুল নগরায়নের চাপে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে।

এখানে মনে রাখতে হবে, শহর কিন্তু স্বনির্ভর নয়। তার রসদ জোগায় গ্রামই। আর, অর্থনৈতিকভাবে গ্রামকে ভরতুকি জোগায় শহর। প্রকৃতির কাছে গ্রামের অবস্থান। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিকাঠামোর বৈষম্যের কারণে মানুষ গ্রামে থাকতে নারাজ। জানে এবং ভাবে, শহরে গেলে কিছু একটা হয়ে যাবে।

এমন প্রেক্ষাপটে নতুন পঞ্চায়েতের যাত্রা শুরু। উন্নয়নের লক্ষ্যে নগরের সঙ্গে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা কাম্য। যদিও তা বাস্তবে সম্ভব কি? নগর ও গ্রামের সাম্য আনার পথে বড় সহায় প্রযুক্তি। যে-কাজ সল্টলেক সেক্টর ফাইভে সম্ভব, সেই পরিকাঠামো গড়ে গোবিন্দপুরেও করা যায় না কি? সেই প্রযুক্তি কৃষিকাজে প্রয়োগ করে উৎপাদন বাড়ানো যেমন উন্নত দুনিয়ায় সম্ভব হয়েছে, তেমনই কৃষিপণ্য বাজারজাত করাতেও তার ভাল সম্ভাবনা। আলু যখন বাংলার মাঠ থেকে তোলা বাজার দরে পোষায় না, তখন পড়শি রাজ্য বা দেশে দেখা যায় আলুর দাম লাভজনক। বাজারের চাহিদা ও উৎপাদনের গুণমান জানার বেলাতেও প্রযুক্তি দারুণ কাজে আসছে। এখানে রয়েছে পঞ্চায়েতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সঠিক পেশাদারি পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো গড়ে তোলা।

[আরও পড়ুন: মমতার গণ-আন্দোলন বনাম অনিলের মস্তিষ্ক, কলমে কুণাল ঘোষ]

পরের অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন, গৌরী সেন হয়ে বিনিয়োগ কে করবে? দেখতে হবে পঞ্চায়েতের আর্থিক ভিত্তি কী। চাষবাস, সমবায় শিল্প প্রভৃতি ছাড়াও অর্থ আসে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রকল্পের মাধ‌্যমে। তৃণমূল স্তরের নাগরিকদের প্রয়োজনীয়তা বুঝে প্রকল্পের এলাকা নির্দিষ্ট করবে।

কৃষি বাজার যেমন বহু ব্লকে সফল নয়। কোনও গ্রাম চাষ ভাল করে তো কোনও গ্রামে তাঁতের কাজ ভাল। এককালে এই গ্রামবাংলার কাপড় দেশ-বিদেশে রফতানি হত। বিনিয়োগ সম্ভাবনার ভিত্তিতে প্রত্যেক গ্রামের প্রোফাইল তৈরি করা হোক। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়োগে অনায়াসে গ্রামীণ পণ্য নিয়ে দেশের বাজার হানা দেওয়া যেতে পারে।

কী প্রযুক্তি ব্যবহার হবে ও কীভাবে হবে, সেটা বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাছাই করতে হবে। হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট নেই, এমন নয়া প্রজন্ম গ্রামেও এখন বিরল। বিশেষত গ্রামে নারীদের হাতে প্রযুক্তি তুলে দিলে আখেরে লাভ। গ্রামের ছেলেরা অল্পবয়সে পরিযায়ী হয়ে কাজে চলে যায়। ফলে নারীরা বেশি শিক্ষার সুযোগ নিচ্ছে। সেই শিক্ষিত নাগরিকদের শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী বা সরকারি কাজের জন্য উৎসাহিত করলে মানবসম্পদের ব্যবহারে বড় ভুল হয়ে যাবে না তো? পশ্চিমের কিছু রাজ্যে নারীরাই যাবতীয় অর্থনৈতিক কারবার সামলান। তাহলে বাংলার নারীরা কেন পারবেন না?

গ্রামীণ জনতাকে টাকার ব্যবহার ও প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে সচেতন করা আবশ্যক। টাকা আয় করা ও সংসারে সচ্ছলতা আনা এক বিষয় নয়- এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে অজানা। এই সময়ে টাকার ব্যবহার জানলে একজন সামান্য আয়ের নাগরিকও স্বছন্দে দিন কাটাতে পারেন। টাকার ব্যবহার ও চালু আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে ধারণাটা প্রাথমিক স্তর থেকেই গড়ে তোলা উচিত। শুধুমাত্র ফসল ফলানো ও তার আয় নিয়ে ভাবলে ভাবীকালে পস্তাতে হতে পারে। তাই পঞ্চায়েতের উচিত প্রযুক্তি ও টাকার ব্যবহার সম্বন্ধে গ্রামীণ নাগরিকদের সচেতন ও উপযোগী করে তোলা।

(মতামত নিজস্ব)
লেখক প্রাবন্ধিক
sarkarlnil91@gmail.com

[আরও পড়ুন: আফগানিস্তান থেকে ইরান, ধর্মোন্মাদে হারিয়ে যাচ্ছে মানবমূল‌্য]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement