স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও নিজস্ব সংবাদদাতা, বসিরহাট: আন্তর্জাতিক শিশু পাচার কাণ্ডে নাম জড়াল খোদ কলকাতার এক চিকিৎসকের৷ সন্তোষকুমার সামন্ত নামে এই চিকিৎসককে বুধবার গ্রেফতার করে সিআইডি৷ তিনি কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এলাকার শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে সিআইডি জানিয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শিশু পাচার কাণ্ডে ধৃত ১১জনকে আজ তোলা হবে আদালতে৷
বাদুড়িয়ার নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচারের তদন্তে নেমে প্রথম দিনেই কলকাতার কয়েকজন চিকিৎকের নাম হাতে পেয়েছিলেন সিআইডির গোয়েন্দারা৷ এবার বাদুড়িয়া কাণ্ডে সরাসরি যোগ থাকায় খাস কলকাতার দুটি বেসরকারি নার্সিংহোমের মালকিন-সহ তিন মহিলা আধিকারিককে গ্রেফতার করেছে সিআইডি৷ বুধবার কলেজ স্ট্রিট এবং বেহালার দুটি নার্সিংহোমের মালকিন পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বড়দি, মহিলা আধিকারিক প্রভা প্রামাণিক ওরফে মেজদি এবং পারমিতা চট্টোপাধ্যায় ওরফে দেবযানীকে গ্রেফতার করা হয়৷ ধৃতদের সঙ্গে শিশু পাচারচক্রের মূল মধ্যস্থতাকারী উৎপলা ব্যাপারী ওরফে পলির ঘনিষ্ঠতা ছিল৷
কলেজ স্ট্রিটের বুকে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলে আসছে শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোম৷ এই নার্সিংহোমের মালিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁরই পুত্রবধূ পারমিতা চট্টোপাধ্যায় ওরফে দেবযানী এই নার্সিংহোমের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কয়েক বছর ধরে৷ পাশাপাশি বেহালার সত্যেন রায় রোডের সাউথ ভিউ নার্সিংহোমের মালকিন পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বড়দি৷ এই নার্সিংহোমও এলাকায় দীর্ঘদিনের৷ এটি বড়দির নার্সিংহোম নামে এলাকায় পরিচিত৷ এই নার্সিংহোম দেখভাল করত প্রভা প্রামাণিক ওরফে মেজদি৷
এদিন পারমিতা চট্টোপাধ্যায়, পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রভা প্রামাণিককে জেরার জন্য ভবানী ভবনে ডেকে পাঠানো হয়৷ বাদুড়িয়া-কাণ্ডে ধৃতদের কাছ থেকেই এদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা৷ এদিন ভবানী ভবনে দীর্ঘ জেরার পর পারমিতা, পুতুল ও প্রভাকে গ্রেফতার করা হয়৷ অন্যদিকে বুধবার রাতে এই কাণ্ডে জড়িত চিকিৎসক ডাঃ তপনকুমার বিশ্বাসের গাইঘাটার বাড়িতে হানা দেয় সিআইডি৷ কিন্তু তার আগেই বেপাত্তা হয়ে যায় অভিযুক্ত চিকিৎসক৷ চিকিৎসকের বাড়ি তল্লাশির পর সিল করে দেওয়া হয়৷ চিকিৎসকের সন্ধানে তার স্ত্রী ও পুত্রকে আটক করেন গোয়েন্দারা৷ ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, বাদুড়িয়ার অভিযুক্ত সোহন নার্সিংহোম অ্যান্ড পলিক্লিনিক এবং সুজিত সরকার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যোগাযোগ কলকাতার ধৃত তিন মহিলার৷ বাদুড়িয়ার নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাতদের পাঠানো হত কলেজ স্ট্রিট এবং বেহালার নার্সিংহোমে৷
কলকাতার ওই দুটি নার্সিংহোম থেকেও সদ্যোজাতদের বাদুড়িয়ার নার্সিংহোমে পাঠিয়ে দেওয়া হত৷ মাঝখানে থেকে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করত অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সুজিত সরকার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ধৃত অন্যতম কর্ণধার উৎপলা ব্যাপারী৷ এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকরা প্রসবের জন্য নিজেদের নার্সিংহোমে প্রসূতিদের ‘রেফার’ করতেন৷ এর ফলে চিকিৎসকদের কমিশন হত অনেক বেশি৷ প্রতি অপারেশনে শুধুমাত্র কমিশন বাবদ চিকিৎসকরা পেতেন ৭০-৮০ হাজার টাকা৷ পাশাপাশি শুধুমাত্র কলেজ স্ট্রিটের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোম বা বেহালার বড়দির নার্সিংহোমই নয়, এই তদন্তে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমের নাম উঠে এসেছে৷ এই নার্সিংহোমগুলির একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করছে ভবানী ভবন৷ সেই তালিকা অনুযায়ী অভিযুক্ত নার্সিংহোম এবং আধিকারিকদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চালাবে সিআইডি৷বাদুড়িয়ার নার্সিংহোম থেকে উধাও হওয়া দুই সদ্যোজাতকে চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে বসিরহাট হাসপাতালে৷
হাসপাতালের সুপার শ্যামল সামন্ত জানান, দুটি সদ্যোজাতই অপরিণত ও ওজন বেশ কম৷ তাদের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়৷ সেই কারণে শিশু দুটিকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে৷ দুই শিশুর বাবা-মায়ের এখনও সন্ধান মেলেনি৷ সন্ধান না মিললে শিশু দুটি সুস্থ হলে আইন মেনে সরকারি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ এদিন সকালে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে একটি দল বাদুড়িয়ায় যায়৷ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নার্সিংহোমের পরিকাঠামো বিষয়ে খোঁজখবর নেয়৷ স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মহকুমার নার্সিংহোমগুলিতে এবার জোরদার নজরদারি চালাবে স্বাস্থ্য দফতর৷ নার্সিংহোমগুলির বৈধ অনুমতিপত্র আছে কি না, বা পরিকাঠামোগত কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না, তার অনুসন্ধান করা হবে৷
The post শিশু পাচার চক্রের অন্যতম চাঁই কলকাতার এক চিকিৎসকও appeared first on Sangbad Pratidin.