কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: সময় যত এগোচ্ছে, ততই নিউটাউন এনকাউন্টারের (Newtown Encounter) ঘটনায় রহস্যের পরত খুলছে একে একে। পাঞ্জাব থেকে মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড হয়ে বাংলায় ঢুকে সোজা নিউটাউনের ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনে নিহত দুই পাঞ্জাবি গ্যাংস্টার জয়পাল এবং জসপ্রীত গা ঢাকা দিয়েছিল, এমনটা নয়। মাঝে পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Midnapore) পিংলায় তারা কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছে। তদন্তকারীদের হাতে আসা সূত্র বলছে, পিংলা থেকে জনৈক আকাশ পালের নামে মোবাইলের সিমকার্ড তোলা হয়েছিল। সেটাই পরবর্তীতে সুমিত কুমারের নামে ব্যবহার করা হয়। নিহতদের দেহ হস্তান্তরিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই এসেছিলেন জয়প্রীতের বাবা ভূপিন্দর সিং ভুল্লার। আর শুক্রবার সকালে শহরে এলেন আরেক নিহত জয়পালের পরিবারের সদস্যরা। টেকনো সিটি থানা থেকে নিয়ম মেনে তাঁরা দেহ নিয়ে ফিরবেন।
বুধবার বিকেলে নিউটাউনের ‘সুখবৃষ্টি’ আবাসনে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গুলিবৃষ্টিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছে দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টার জসপ্রীত ও জয়পাল। ২০১ নং ফ্ল্যাটে যেখানে তারা ভাড়া ছিল, সেখানে তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা উর্দু ভাষায় লেখা ক্যারিব্যাগ উদ্ধার হয়েছে। তাতেই পাক-যোগ সন্দেহ দানা বাঁধছে। প্যাকেটটিতে করাচির একটি ঠিকানা লেখা বলেও তদন্তকারী সূত্রে খবর। তবে কি পাকিস্তানের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এদের? এমনিতেই এরা আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। ফলে পাক যোগ থাকা খুব অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। শুক্রবার সকালে ফ্ল্যাটটির মালিক আকবর আলিকে টেকনো সিটি থানায় ডেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে জেরা করা হয়। বেরিয়ে তিনি জানান, তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করবেন।
[আরও পডুন: নিউটাউন কাণ্ডে বাড়ছে আতঙ্ক! ‘অচেনা’ ভাড়াটে নিয়ে কড়া হওয়ার ভাবনা বিভিন্ন আবাসনের]
এদিকে, বিপথগামী ছেলেদের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে কলকাতায়। পাঞ্জাবে বসে এই খবর পেয়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তাই তাঁরা চলে এসেছেন কলকাতায়। জয়পালের বাবা রাষ্ট্রের প্রহরী। পেশায় পুলিশকর্মী। তাঁর ছেলে সেই রাষ্ট্রেরই শত্রু হিসাবে পুলিশের খাতায় একাধিকবার নাম তুলে ফেলেছে। অস্ত্র ব্যবসা থেকে খুন। সেখান থেকে জঙ্গিযোগের উৎস। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশের গুলির কাছে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে ছেলেকে। সেই ছেলের দেহ নিতেই থানায় আসতে হয়েছে বাবাকে। পিতার আবেগের কাছে কিছুটা হলেও নত হয়েছে প্রহরীসত্তা। ভূপিন্দর সিং ভুল্লারের কথায়, ছেলের দুষ্কৃতীমূলক কাজের সম্পর্কে তার কোনও ধারণা ছিল না। তাহলে তিনি আগেই বাধা দিতেন। তবে এই ঘটনার পর সবকিছুই প্রকাশ্যে এল। শুক্রবার সকালে এসেছেন জসপ্রীতের মা, বোনেরাও। এখন রক্তমাখা দেহ হাতে পাওয়ার অপেক্ষা। সন্তান যতই অপরাধী হোক, আপনজনদের কাছে তো প্রাণসম প্রিয় তারা। তাই মৃত্যুর পর যেন তাদের ‘গ্যাংস্টার’ পরিচিতি মুছে গিয়েছে, মা-বাবার কাছে দু’জনই স্রেফ সন্তান।