সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবার্তো কার্লোস (Roberto Carlos) আজও হুবহু মনে করতে পারেন দিনটা। আজ থেকে চব্বিশ বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের দিন।
রোনাল্ডো নাজারিও দি লিমাকে একটা বিশেষ নামে ডাকতেন কার্লোস। সরি, ডাকেন। রোনাল্ডো (Ronaldo) তাঁর কাছে নিছক এক সতীর্থ ছিলেন না, আদতে ছিলেন– ‘ব্লাড ব্রাদার্স’। জন্মসূত্রে আলাদা হলে কী হবে, কোথাও গিয়ে রোনাল্ডোর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক ছিল কার্লোসের। আর ছিল বলেই, ’৯৮-এর বিশ্বকাপ ফাইনালের দুপুরে রোনাল্ডোকে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখে দু’বার ভাবেননি কার্লোস। ব্রাজিলের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাকের মাথায় শুধু দু’টো লাইন ঘুরেছিল– আমাকে ডাক্তার ডাকতে হবে। বাকিদের ডাকতে হবে। নইলে ক্ষতি হয়ে যাবে, বড় ক্ষতি।
[আরও পড়ুন: ‘সবই কর্মফল’, পাকিস্তানের হারের পর শোয়েবের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে শামির]
প্যারিসে আটানব্বই বিশ্বকাপের দুপুরে রোনাল্ডোর সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিল সে দিন, আজও কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া, কুয়াশায় ঢাকা। বিশ্বফুটবলের এখনও যা অন্যতম সমাধানহীন রহস্য। কেউ বলেন, আটানব্বইয়ের কাপ ফাইনালের দুপুরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন রোনাল্ডো। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরিয়ে গিয়েছিল। বিষক্রিয়ায় যেমন হয়। কেউ আবার বলেছিলেন, কিছুই হয়নি। পুরোটাই গাঁজাখুরি। কেউ বলেন, পুরোটাই রাজনীতি। সেই ফাইনাল হারের প্রভাব এতটাই ছিল যে, সরকারি এনকোয়ারি বসে যায় ব্রাজিলে। ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে তিন গোলে হার নিয়ে। রোনাল্ডো-কার্লোসকে জবানবন্দি দিতে হয়! কারণ সন্দেহ করা হচ্ছিল যে, কিছু একটা দুর্নীতি ঘটেছে ফাইনালকে কেন্দ্র করে!
‘‘রাজনীতি বরং হয়েছিল আমাদের সঙ্গে। আমাকে লোকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ফাইনাল কেন হেরেছিলেন? আমি বলি, জিজু (জিদান) দু’টো গোল করেছিল বলে। এর বাইরে কিছু বলার নেই আমার,’’ বলতে থাকেন কার্লোস। ‘‘সে দিন কী হয়েছিল, আমার চোখের সামনে দেখা। তখন আমরা রুম শেয়ার করতাম। কেউ ঘরে না থাকলে আরও খারাপ কিছু ঘটতে পারত। কিছুই না, দুপুরে একটা পাওয়ার ন্যাপ নিচ্ছিল রোনাল্ডো। একটু ঘুমোতে গিয়েছিল। তার পর হঠাৎ দেখি, ওর শরীর খারাপ করছে। আমি দ্রুত ভাবতে শুরু করি, কী কী করব এখন? প্রথমেই ডাক্তার ডাকি। তার পর আশেপাশের ঘরে থাকা সতীর্থদের ডাকি,’’ বলেন চলেন কার্লোস। আর ভুল কিছু বলেননি। রোনাল্ডোও পরে বলেছিলেন যে, কার্লোস সে দিন তাঁর জীবন বাঁচিয়েছিলেন। প্রকৃতার্থে তাঁরা ‘ব্লাড ব্রাদার্স।’
আটনব্বইয়ের অভিশাপের চার বসন্ত পর জাপান-কোরিয়ায় বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। জিতিয়েছিলেন রোনাল্ডো, পুনর্জন্মের শ্রেষ্ঠ কাহিনি লিখে। ‘‘মজার ব্যাপার কী জানেন, আটানব্বইয়ের ফাইনালের দুপুর, আর ২০০২-এর ফাইনালের দুপুরের মধ্যে তফাত ছিল না কিছু। একই ছিল সব। শুধু রোনাল্ডোকে আমরা সেই দুপুরে আর ঘুমোতে দিইনি,’’ বলে হাসতে শুরু করেন কার্লোস। যিনি যাচ্ছেন কাতার। ব্রাজিলের হাতে আরও একটা বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে।
‘‘ব্রাজিল বিশ্বকাপ খেললে ফাইনালে ওঠাটাই একমাত্র শর্ত। তার নিচে কিছু চলে না। আর তিতের এই ব্রাজিল টিমটা কিন্তু বেশ ভাল। ভাল ভাল কিছু প্লেয়ার আছে, যারা ফাইনাল পর্যন্ত টিমকে নিয়ে যেতেই পারে। আরও এ সব প্রেশার নিয়ে বলে কোনও লাভ নেই। ব্রাজিলের জার্সিতে যে পাঁচটা তারা রয়েছে, তার চাপ থাকবে। আসল হল ব্রাজিলের হলুদ জার্সি পরার যোগ্যতা তোমার আছে কি না, হলুদ জার্সির গৌরব রক্ষা করার মতো কলজে তোমার আছে কি না। আমার মতে, তিতের টিমের প্রত্যেকের সেটা রয়েছে,’’ বলার সময় ধকধক করে কার্লোসের চোখ। বিশ্বজয়ীদের দৃষ্টি হয় যেমন।
এরপর গড়গড়িয়ে কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল স্কোয়াডে থাকা নামগুলো বলে যান কার্লোস। থিয়াগো সিলভা। ভিনিসিয়ার জুনিয়র। নেইমার (Neymar)। রাফিনহা। রদ্রিগো। কাসোমিরো। পেদ্রো। কার্লোসের মতে, এঁরা এক একজন একাই পারেন তফাত গড়ে দিতে। বলছিলেন, ‘‘পেদ্রো ছেলেটার দিকে খেয়াল রাখলেন। আদর্শ নাম্বার নাইন। বক্সের মধ্যে ভয়ঙ্কর। পেদ্রোর মতো প্লেয়ার খুব বেশি নেই এখন। আমাদের গোলকিপার ভাল, স্ট্রাইকার ভাল, তাই বিশ্বজয়ের সুযোগ আছে আমাদের।’’ আর নেমার? তাঁকে নিয়ে কী বলবেন? কার্লোস জবাব দেন, ‘‘নেমারের একটা বড় গুণ, লোকে কী বলছে সে সব নিয়ে ভাবে না। তবে হ্যাঁ, মাঠে ওকে সেরাটা দিতে হবে। আর মাথায় রাখতে হবে, ও পারলে, লোকে মাথায় তুলে রাখবে। নেমারই সেরা, বলবে। কিন্তু কাপ না দিতে পারলে সমালোচনাও করবে। সেটা নেইমারকে মেনে নিতে হবে। কারণ, সেটাই ফুটবল।’’ নেইমার, শুনলেন?
[আরও পড়ুন: ২০১৯ থেকে ২০২২, বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের নায়ক সেই স্টোকস]