সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন সেই ‘বীর জারা’র শাহরুখ খান অভিনীত চরম দুর্ভাগা চরিত্রটি। ছবিতে বিনা অপরাধে পাকিস্তানের (Pakistan) জেলে বছরের পর বছর থাকতে হয়েছিল কিং খানকে। ওড়িশার (Odisha) বিরজু কুলুর জীবনটাও তেমনই। গত কুড়ি বছর ধরে তিনি বন্দি ছিলেন লাহোরের এক জেলে। এবং কোনও অপরাধ না করেই। তবে তা কোনও গল্প নয়, নিখাদ সত্যি। অবশেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। শিগগিরি ফিরে যাবেন নিজের বাড়িতেও।
শাহরুখ অভিনীত চরিত্রটির মতো এখানে অবশ্য কোনও প্রেমের আখ্যান নেই। এমনকী, কোনও ষড়যন্ত্রও ছিল না। আসলে বিরজুর মানসিক ভারসাম্যে সমস্যা রয়েছে। তাই একেবারেই ভুল করে তিনি দেশের সীমানা পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন প্রতিবেশী দেশে। তারই খেসারত এভাবে গুনতে হল! বড় করুণ সেই কাহিনি যেন কোনও বিষাদঘন উপন্যাসেরই অংশ। পঁচিশ বছর বয়সে কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার বাসিন্দা বিরজু চলে যান রাঁচি। সেখানে একটি হোটেলে চাকরিও জোগাড় করে নেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে সেখান থেকেও অদৃশ্য হয়ে যান তিনি। হোটেলের মালিক খবর দেন বিরজুর পরিবারকে। সবাই মিলে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করলেও বিরজুর সন্ধান মেলেনি।
[আরও পড়ুন: আবার সেই দিল্লি, এবার হাসপাতালের পার্কিং লটে গণধর্ষিতা রোগীর আত্মীয়া]
কী করে তিনি সুদূর পাকিস্তানে পৌঁছে গেলেন তা সঠিক ভাবে জানা যায়নি। সুন্দরগড়ের পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট সাগরিকা নাথের মতে, সম্ভবত কোনওভাবে অমৃতসরে চলে গিয়েছিলেন বিরজু। তারপর হাঁটতে হাঁটতে নিজের অজান্তেই পেরিয়ে যান সীমান্তরেখা। ধরা পড়েন পাক নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে। জীবন গিয়েছে চলে কুড়িটি বছর। গত দু’দশক যুদ্ধবন্দি হিসেবেই জেল খেটেছেন বিরজু। অবশেষে ২৬ অক্টোবর জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। কোনও অপরাধমূলক কাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার খোঁজ না মেলায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করেছে পাক প্রশাসন।
হারিয়ে যাওয়া ভাইকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আবেগ ধরে রাখতে পারছেন না বিরজুর দিদি। জেলাশাসকের কাছ থেকে ফোনে তিনি জানতে পেরেছেন, ভাই দেশে ফিরলেও কোভিড পজিটিভ থাকার কারণে আপাতত চিকিৎসাধীন। তবে কথা হয়েছে ভিডিও কলে। সুস্থ হলেই তাঁকে বাড়ি ফেরাতে মুখিয়ে রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। অবশ্য পরিবার বলতে দিদি ও কাকারা। বাবা-মা কবেই মারা গিয়েছেন হারানো ছেলের জন্য প্রতীক্ষা করতে করতে।
[আরও পড়ুন: বিহারে ফের ক্ষমতায় আসছে NDA, দ্বিতীয় দফার ভোটের দিনই ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর]
আর আছেন বিরজুর গ্রামের মানুষেরা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের যুবক বিরজুকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের মতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁরা ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার মুহূর্তটিকে উদযাপন করবেন বলে অপেক্ষায় অধীর হয়ে রয়েছেন।