দেবব্রত মণ্ডল, ভাঙড়: দিনদুপুরে হামলা, খুন। বাড়ির মধ্যে ঢুকে উঠোনে সকলের চোখের সামনে সে এক রক্তারক্তি কাণ্ড। প্রবল যুদ্ধের পর একজনকে খতম করল আরেকজন। হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন অন্যান্যরা। কিন্তু খুনি এতটাই হিংস্র যে কোনওভাবেই তাকে বাধা দেওয়া যায়নি। উঠোন থেকে চাতাল – রক্তে ভাসাভাসি। এমন দৃশ্য দেখে সোজা থানায় গিয়ে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন প্রত্যক্ষদর্শী বৃদ্ধ। বললেন, ভাইপো ইচ্ছে করেই খুনটা করিয়েছে। বড়বাবু অভিযোগ লিখলেনও। কিন্তু তদন্তে নেমে তো মাথায় হাত তাঁর। এত খুনের ঘটনার তদন্ত করে পোক্ত ওসি সাহেব এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কীভাবে করবেন, ভেবেই পাচ্ছেন না। এ যে সাধারণ খুন নয়। এক পোষ্য আরেক পোষ্যকে খুন করেছে! ভাইপোর হাঁসের হামলায় নিহত কাকার লড়াই করা মুরগি। ভাঙড়ের (Bhangar) কাশীপুর থানা এলাকার এই ঘটনা এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
ঘটনা মঙ্গলবার দুপুরের। কাশীপুরের বাসিন্দা মহম্মদ আলি মোল্লার পোষা মুরগি (Chicken) চড়ে বেড়াচ্ছিল উঠোনে। এমনই সময়ে হিংস্র পেরি হাঁসের হামলা এবং প্রবল লড়াই। শেষমেশ মুরগি নিকেশ। অভিযোগনামার বয়ানে নিহত মুরগির মালিক মহম্মদ আলি মোল্লা জানিয়েছেন, এই মুরগির উপর নাকি খুব রাগ ছিল তাঁর ভাইপো শরিফুলের। কারণ, মুরগিটি যখনতখন শরিফুলের উঠোনে চলে যায়। তাঁর পোষা হাঁসের সঙ্গে বিবাদ করে। সেই কারণে একেবারে পরিকল্পনামাফিক নিজের পোষ্য হাঁস (Goose)দিয়ে কাকার মুরগি খুন করিয়েছে শরিফুল। কাশীপুর থানায় রীতিমতো ৫০ টাকা মুহুরি দিয়ে তিনি হত্যার মামলা ঠুকেছেন!
[আরও পড়ুন: ৮ বছর বয়সে উপন্যাস লিখে চমক মার্কিন শিশুর, বই পড়তে লাইব্রেরিতে লম্বা লাইন পড়ুয়াদের!]
মামলা তো নিয়ে নিয়েছেন কাশীপুর থানার ওসি প্রদীপ পাল। কিন্তু সব দেখেশুনে তাঁর তো চক্ষুচড়কগাছ। দীর্ঘ পুলিশি জীবনে বহু খুনের তদন্ত করেছেন। কিন্তু এরকম একটা খুনের তদন্ত কীভাবে করবেন, তা বুঝেই উঠতে পারছেন না তিনি। অভিযোগকারীকে বেশ খানিক্ষণ টেবিলের সামনে বসিয়ে রেখেই মাথা চুলকোলেন। বারার করে পড়লেন লিখিত অভিযোগপত্রটি। বৃদ্ধ তখনও বলে চলেছেন, ”আমার ভাইপো ইচ্ছে করে খুন করিয়েছেন।” তারপর যোগ করলেন, ”আমার লড়াই করা মুরগি চড়ে বেড়ায়, তা চাইত না। আর এই মুরগিকে খুনের জন্যই সে পেরি হাঁস পুষেছে।” এই কথা শুনেই চমক ভাঙল। এ তো মানুষ খুনের ব্যাপার নয়। তাহলে তদন্ত হবে কোন পথে?
পোষা মুরগির শোক কিছুতেই ভুলতে পারছেন না মহম্মদ আলি মোল্লা। কান্নাভেজা গলায় বলছেন, ”এই মুরগি ২ বছরে ৫০০টি ডিম দিত। তার আগেই তাকে খুন করে দিল শরিফুল।” তিনি আরও জানান যে বাড়ির উঠোনে এমন রক্তারক্তি কাণ্ড দেখে পাড়ার নেতা, পঞ্চায়েত সদস্যদের সবটা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউ আমল না দেওয়ায় ৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে সটান থানায় গিয়ে মামলা রুজু করেছেন। তাঁর স্ত্রী তসলিমা বিবির কথায়, ”আমরা হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল সবই পুষি। কিন্তু এভাবে যে পোষ্য মুরগি খুন হবে, বুঝে উঠতে পারিনি। আমরা এর বিচার চাই।” লিখিত অভিযোগ পেয়ে কাশীপুর থানার ওসি অবশ্য অভিযুক্ত শরিফুল মোল্লাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। এবার তদন্ত কোন পথে, সেটাই দেখার।
[আরও পড়ুন: নিরাপত্তারক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে পেন্টাগনে প্রবেশ, গ্রেপ্তার মুরগি]
রাজনৈতিক সংঘর্ষে (Political Clash) সদাসর্বদা উত্তপ্ত ভাঙড়ে এমন খুনোখুনির ঘটনা প্রায় নিত্যদিনের। এসবের নিরিখেই খবরের শিরোনামে থাকে ভাঙড়। কিন্তু হাঁস-মুরগির লড়াইয়ে খুনের ঘটনা ভাঙড়বাসীর কাছেও নতুন।