প্রসূন বিশ্বাস: সেই নাবালিকার নাম আজ আর প্রকাশ করতে চান না তিনি। তবে ভেবে এটুকু স্বপ্তি পান যে, গ্রামীণ এক নাবালিকাকে তাঁর স্বপ্নের দিকে ছুটতে সাহায্য করতে পেরেছিলেন প্রাক্তন তারকা অ্যাথলিট অঞ্জ ববি জর্জ। যিনি আবার এই মুহূর্তে অ্যাথলেটিক্স ফেডারশন অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টও। খেলা ছাড়ার পর এখন অনেক বেশি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন। নারী দিবসের ঠিক আগে সেই গল্প শোনাচ্ছিলেন একসময় ভারতীয় লং জাম্পের রানি।
অঞ্জু রুখে দিয়েছিলেন তাঁরই আঠারো বছরের কম বয়সি এক ছাত্রীর বিয়ে। যে ছাত্রীকে তাঁর বাবা-মা মাঠে আসা আটকে দিয়ে অপরিণত বয়সে জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে চাইছিলেন। রাজস্থানের সেই নাবালিকা তাঁরই ছাত্রী ছিল। সেদিনের কথা বর্ণনা করতে করতে চিকচিক করে উঠছিল তাঁর চোখ। পাশাপাশি আরও বলছিলেন যে, ভারতের মতো বিশাল দেশে এমন ঘটনা আটকানো যথেষ্ট কঠিন।
ঠিক কী হয়েছিল? অঞ্জু বলছেন, "আমি জানি অনেক মা-বাবা ১৫ বছরের পর আর খেলতে পাঠায় না। বিয়ের জন্য চাপ দেয়। আমার একজন ছাত্রী ছিল রাজস্থানের। আঠারো হওয়ার আগেই যার পরিবার থেকে চাপ দিচ্ছিল বিয়ের জন্য। ওকে অনুশীলনে বেশ সমস্যায় পড়তে দেখতাম। তা দেখে জিজ্ঞাসা করি তোমার কী সমস্যা। বলে, বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে বাড়িতে খুব খারাপ ব্যবহার করছে। ওর মা কার্যত হুমকি দিছিল। মাঠে আসতে দিচ্ছিল না। সেটা শুনে পাশে দাঁড়াই। ওর ওই বিয়েটা আটকাই। কিন্তু এরকম কত উদাহরণ আছে। আমার কাছে এসে ও বলেছিল বলে বাধা দিতে পেরেছি। সবার কাছে তো আমরা পৌঁছাতে পারিনা। কিন্তু জানি যে, আমাদের দেশের অনেক মেয়ে একই সমস্যা আছে।" তিনি মনে করেন, এভাবে গ্রামে গ্রামে প্রচুর প্রতিভা হারিয়ে যাচ্ছে। ইদানিং এমন পরিস্থিতি দেখলে অঞ্জু সেই ছাত্রীর পরিবারকে বোঝান। কিন্তু সব সময় যে সফল হন, তা-ও না।
অঞ্জু বলতে থকেন, 'আমি এমন পরিস্থিতি বুঝতে পারলে বাবা-মা'দের বোঝাই। সরকারের তরফ থেকে বোঝানো হয়। কিন্তু ক'জন আর বোঝে। মোবাইন ফোনের যুগেও গ্রামের অনেক পরিবার এখনও বুঝতেই চায় না, কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া অপরাধ। আমাদের থামলে চলবে না। ওরা ভাবে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিলেই মেয়েদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।" অথচ ভারতীয় মেয়েদের মধ্যে যথেষ্টই সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন তারকা অ্যাথলিট।
ইদানীং অলিম্পিকে যথেষ্ট ভালো ফল করছেন ভারতীয় অ্যাথলিটরা। অলিম্পিকে আরও ভালো ফল করতে পারেন নীরজ চোপড়ারা তেমনই মনে করছেন অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার এই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। অঞ্জু আরও বলছেন, "একটা সময় আমাদের কাছে অলিম্পিক পদক স্বপ্নের মতো ছিল। এখন আমাদের প্রতিযোগীরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারছে। এই পদক সংখ্যা যত দিন যাবে, ততই বাড়বে।" অ্যাথলেটিক্সের দেশীয় পরিকাঠামো নিয়ে উচ্ছ্বসিত অঞ্জু। বললেন, 'পরিকাঠামোর দিক থেকে আমরা এতটুকু পিছিয়ে নেই। এখন আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা করার সময় এসেছে। তৃণমূল স্তরের দিকে আরও নজর দিতে হবে। গত চার বছরের সময়কালকে তিনি ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের অন্যতম সেরা সময় বলে উল্লেখ করে গেলেন।