সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ম্যাচ শেষে স্টেডিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে আসা একঝাঁক প্যালেস্টাইনের (Palestine) তরুণ-তরুণী তখনও নেচে চলেছেন ‘ডাম্মি ফালাস্তিনি’ গানের সঙ্গে। যে গান ইতিমধ্যেই বেসরকারিভাবে প্যালেস্টাইনের জাতীয় সঙ্গীত বলে প্রচার করা হয়েছে গাজা শহরে। কে বলবে রবিবার এশিয়ান কাপের গ্রুপ স্টেজের প্রথম ম্যাচে ইরানের কাছে ১-৪ গোলে হেরে গিয়েছে প্যালেস্টাইন!
এই হারকে নিয়ে এতটুকু মাথা ঘামাতে নারাজ প্যালেস্টাইন সমর্থকরা। বরং দেশের উপর ইজরায়েলের হামলার পরও তাঁরা যে মাথা উঁচু করে এশিয়ার সেরা টুর্নামেন্টে যোগ দিতে এসেছেন, সমর্থকদের কাছে সেটাই বড় বিষয়। তাই এই হারের পরও ম্যাচ দেখতে আসা প্যালেস্টাইন সমর্থকরা স্বদেশি ফুটবলারদের বাহবা দিয়ে গেলেন প্রাণভরে।
[আরও পড়ুন: প্রখর চতুর্বেদীর ৪০৪, কোচবিহার ট্রফির ফাইনালে ইতিহাস]
ভিড়ের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা এক প্যালেস্টাইন তরুণী বলেন, “দেশের প্রতি যে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে, সেটাই প্রমাণ করতে এখানে আজ এসেছি আমরা। ভাবতেও কষ্ট হয়, হয়তো আর প্রিয় স্বদেশে ফিরে যেতে পারব না। চিন্তামুক্ত হয়ে হাঁটতে পারব না গাজার রাস্তায়। বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, সেটা কখনওই আমাদের দেশের মতো হতে পারে না। ”
ম্যাচ জিতে স্টেডিয়াম ছাড়তে ছাড়তে বেশ কয়েকজন ইরানি সমর্থকও তাঁদের সমর্থন জানিয়ে গেলেন।
এসবের মধ্যেই দেখা গেল এক ইরানি সমর্থককে একটি অদ্ভুত পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে আসতে। আলি মির নামের সেই ইরানি সমর্থক নিজের দেশের পতাকাটিকে অর্ধেক কেটে তার পাশে অর্ধেক প্যালেস্টাইনের পতাকা লাগিয়ে মাঠে এসেছিলেন। আসলে মাঠের প্রতিপক্ষ হলেও খারাপ পরিস্থিতিতে বন্ধু দেশটির পাশে দাঁড়াতেই তা করেছিলেন তিনি।
এই মুহূর্তে খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে প্যালেস্তাইন ফুটবলারদের। প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলি আক্রমণে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে সেদেশের ফুটবল পরিকাঠামো। জানা গিয়েছে, হানি আল মাসদার নামের এক প্যালেস্টাইন ফুটবল কোচের মৃত্যুও হয়েছে সে আক্রমণে। যিনি একটা সময় যুক্ত ছিলেন প্যালেস্টাইন যুব দলের সঙ্গেও। যে মৃত্যু নড়িয়ে দিয়েছে প্যালেস্টাইন ফুটবলমহলকে। প্যালেস্টাইনের জাতীয় কোচ মাকরাম দাবৌব বলেন, “আমাদের দেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা ব্যাক্তিত্ব ছিলেন হানি।”
এশিয়ান কাপ খেলতে আসা প্যালেস্টাইন ফুটবল দলের যে সব সদস্যের বাড়ি গাজা শহরে, তাঁদের প্রতিনিয়তই চিন্তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়তই কারও না কারও পরিচিতের মৃত্যুর খবর পাচ্ছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ার সেরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসে দলের কোচ আরও যোগ করেন, “সত্যি এই পরিস্থিতি বড়ই কঠিন প্রত্যেকের কাছে।” তাই প্রথম ম্যাচে হারলেও দুঃখ নেই তাঁদের। আর কিছু না হোক, ফুটবল তো অন্তত জীবনের স্বাদ দিচ্ছে!