সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূল-আইএসএফ দ্বন্দ্বে পুড়েছে ভাঙড়। গুলি-বোমায় ত্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, ক্যানিং। ঝরেছে রক্ত। প্রাণ গিয়েছে তরতাজার ৩ জনের। গোটা ঘটনায় অভিযোগ, পালটা অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন আইএসএফ (ISF) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি এবং তৃণমূলের শওকত মোল্লা-আরাবুল ইসলামেরা। আর তাঁরাই আজ ‘ভাই-ভাই’। সোমবার বৃষ্টিস্নাত বিধানসভায় অন্তত সেই ছবিই ধরা পড়েছে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নওশাদ ও শওকত। ঘোরতর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শওকত মোল্লাকে সহাস্য়বদনে ‘বড় ভাই’ বলে পরিচয় দিলেন নওশাদ। আবার আইএসএফ বিধায়ককে ‘ছোট ভাই’ বলে মেনে নিলেন শওকতও। গণতন্ত্রে অবশ্য এমন ছবিই কাম্য। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিজেদের সমস্যা মেটালেও তাঁদের রেষারেষিতে যাঁদের ক্ষতি হল, যাঁদের প্রাণ গেল, তাঁদের কী হবে? তাঁদের ক্ষতি কি পূরণ করতে পারবেন ‘ভাই’রা।
এদিন বিধানসভায় আচমকাই মুখোমুখি হন যুযুধান নওশাদ ও সওকত। দুজনকে কার্যত ছেঁকে ধরেন সাংবাদিকরা। ক্যামেরার সামনে দু’জনের শত্রুতা উধাও! সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব নওশাদ সিদ্দিকি বলেন, “উনি (শওকত মোল্লা) তো আমার বড় ভাই। আমি বলব, পঞ্চায়েত-বিধানসভা ভোটের জন্য় আমাকে গাইড করুন।” তাঁর সেই সম্বোধন মেনে নেন শওকতও। বলেন, নিশ্চয়ই গাইড করব। তবে ভাইকে বলব, ভাঙড়ে অশান্তিটা একটু কম করতে। তৃণমূল বিধায়কের খোঁচার জবাবে বহিরাগত তত্ত্বও টেনে আনেন নওশাদ। তাঁর কথায়, “বড় ভাই তো জানেন, কোথায় কীভাবে অশান্তি হচ্ছে। কারা বহিরাগতদের এনে অশান্তি পাকাচ্ছে।” বলাইবাহুল্য, নওশাদের নিশানায় ছিলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল হোসেন। কিন্তু তাঁর সেই অভিযোগ মানতে নারাজ ছিলেন শওকত।
[আরও পড়ুন: মনোনয়ন বিকৃতিতে CBI তদন্তের নির্দেশ খারিজ, তদন্ত করবে রাজ্য পুলিশই]
পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Poll) মনোনয়ন পর্বেব শেষদিনে ভাঙড়ে প্রাণ গিয়েছিল ৩ জনের। রক্ত ঝরে ক্যানিংয়েও। সেই ঘটনায় নিয়ে দুজনেই খুব মর্মাহত বলে দাবি করেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিধায়কও। শওকতের কথায়, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কোনও মৃত্যুই কাম্য নয়।” নওশাদ বলছেন, ভাঙড়ে শান্তি ফিরুক। মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এতে যদি আমার দলের কেউ যুক্ত থাকে তাহলে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।” শান্তি ফেরানোর আবেদন জানান শওকতও মোল্লাও। তবে রাজনৈতিক মহল বলছে, এই শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানাতে বড্ড দেরি করে ফেললেন দুজনেই। ততদিনে ৩টে তরতাজা প্রাণ বলি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে আরও অনেকে ভরতি। বারুদের গন্ধে এখনও কেঁপে উঠছে ভাঙড়বাসী। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজনীতির নিয়ম মেনে দুজনে শান্তি ফেরানো বার্তা দিলেও অগ্নিগর্ভ ভাঙড়ে কি আদৌ শান্তি ফিরবে? সেই প্রশ্নের জবাব এখও অবশ্য কালের গর্ভে।