অর্ণব আইচ: পরনে তার লাল-সবুজ-বাঘছাল রঙের গেঞ্জি ও প্যান্ট। পায়ে সাদা রঙের মোজার সঙ্গে সুবজ-লাল জুতো। দুবাই থেকে ফ্লাইটে মুম্বইয়ের বিমানবন্দরে নেমেই মোবাইলে বান্ধবীকে ফোন করে বলেছিল, “তোমাকে ক্রিসমাস সারপ্রাইজ দিতেই এলাম মুম্বইয়ে।”
বন্ধু-প্রেমিকের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে মুম্বইয়ের বিমানবন্দরে ছুটে এসেছিলেন তরুণী। কিন্তু শেষপর্যন্ত বন্ধুটির সন্ধান মিলল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন অফিসে। মুম্বইয়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে বান্ধবীকে ফোন করামাত্রই কলকাতার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা সতর্ক হয়ে যান যে, দু’বছর পর দুবাই থেকে দেশে ফিরেছে ৯০০ কোটি টাকার লগ্নি অ্যাপ প্রতারণা চক্রের এক মাথা ভিরাজ সুভাষ পাতিল। এর আগে মধ্য কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট ও জোড়াসাঁকোর তিনটি মামলায় এই চক্রের অন্যতম অভিযুক্ত শৈলেশ পান্ডেকে তাঁর দুই ভাই-সহ গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ ও তার পর ইডি। পরে এই মামলার তদন্তভার নেয় ইডি। মুম্বই বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের পর রবিবার রাতে কলকাতা থেকে মুম্বইয়ের ইমিগ্রেশন দপ্তরে যান ইডি আধিকারিকরা। সোমবার ভোররাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।
[আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য! হার্দিককে দলে নেওয়ার জন্য গুজরাটকে ১০০ কোটি ট্রান্সফার ফি দিয়েছে মুম্বই!]
দীর্ঘদিন ধরে ভিরাজের সন্ধান না পেয়ে তার বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করেছিল ইডি। দুবছর পর বড়দিনের ছুটিতে মুম্বইয়ে বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে এসেই ইডির হাতে গ্রেপ্তার হল ওই প্রতারণা চক্রের মাথা। বান্ধবীর সঙ্গে বড়দিন থেকে বর্ষবরণ কাটানোর ছক কষেছিল ভিরাজ। কিন্তু তার বদলে এই দিনগুলি তাকে আপাতত কাটাতে হবে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির হেফাজতে। এদিন ভিরাজকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। ভিরাজের গ্রেপ্তারি আইন মেনে হয়নি বলে দাবি করে আদালতে আবেদন জানান তার আইনজীবী বিক্রম মিত্র। তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানান ইডির আইনজীবী। দুপক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
ইডি জানিয়েছে, ইউটিউব ও অনলাইনে ফরেক্স বা ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ’ শেখানোর পর ভুয়ো অ্যাপে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে প্রথমে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে গ্রেপ্তার হয় শৈলেশ পান্ডে ও তার দুই ভাই। হাওড়ার শিবপুরে তাঁর বাড়ি ও গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা ও গয়না। পরে এই তদন্তভার নেয় ইডি। দু’শোর বেশি অ্যাকাউন্টে ৯০০ কোটি টাকারও বেশি প্রতারণা ও তছরূপের অভিযোগ ওঠে এই চক্রের মাথা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। সেই বিপুল টাকা বিদেশে বিটকয়েনের মাধ্যমে পাচার করা হয়। ইডি এই মামলায় ২৪০ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ‘শত্রু’-কে খুঁজে বের করলেন অশ্বিন! কে সেই ব্যক্তি?]
ইডির দাবি, লগ্নি অ্যাপ চক্রের প্রতারণায় শৈলেশের সঙ্গী ছিল পূর্ব মুম্বইয়ের দহিসরের বাসিন্দা ভিরাজ সুভাষ পাতিল নামে ৩০ বছরের ওই যুবক। ওই যুবকের ইউটিউব চ্যানেল ‘ওয়ান এক্স’ কয়েক বছর আগে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ’ ও বিটকয়েনে লগ্নির মাধ্যমে কীভাবে দেশের বাসিন্দারা অল্প সময়ে প্রচুর টাকার মালিক হবেন, তা নিয়ে প্রচার শুরু করে ভিরাজ। এই ‘ফরেক্স’ পদ্ধতি শেখানোর জন্য রীতিমতো ১০০ ডলার নিয়ে কোর্সও করান। তাতে যোগ দেওয়ার পর শৈলেশ ওই ব্যক্তিদের তাঁর অ্যাপের মাধ্যমে বিটকয়েনে টাকা লগ্নির প্রলোভন দেখায়। কলকাতা-সহ দেশের বহু মানুষ বিপুল টাকা শৈলেশ-ভিরাজদের অ্যাপে লগ্নি করে। প্রথমে সামান্য কিছু টাকা ফেরত দেওয়া পর হঠাৎই তারা বন্ধ করে দেয় সেই অ্যাপ। বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালায় তারা। শৈলেশের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার পর ভিরাজ দুবাইয়ে পালিয়ে যায়। তার খোঁজ না পেয়ে ইডি লুকআউট নোটিস জারি করে। তাকে জেরার পর এই মামলায় আরও বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।