শম্পালি মৌলিক: 'টলিউডে ৬০ শতাংশ যৌন হেনস্তার অভিযোগ পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে', ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের এই মন্তব্যেই শোরগোল। ডিরেক্টর্স গিল্ডের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বিবৃতি জারি করে এর বিরোধিতা করা হয়েছে। এবার ফেডারেশন সভাপতির মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। অতীতের ফেডারেশন কর্তা এবং পরিচালকদের দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিচ্ছেন স্বরূপ বিশ্বাস। এমনই বক্তব্য তাঁর। 'সুরক্ষা বন্ধু' নিয়েও হলেন সোচ্চার।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ফোনে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে পরমব্রত জানান তাঁর বক্তব্য বড় হলেও সহজ। যেটা এই মুহূর্তে সারা দেশ, সারা রাজ্য এবং এই গোটা শহর চাইছে। ৯ আগস্টের বিচার। এর নেপথ্যে যে বা যাঁরা রয়েছে তাঁদের খুঁজে বের করা এবং উপযুক্ত শাস্তি। এমন পরিস্থিতিতেই ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (FCTWEI) যেটি আসলে ইন্ডাস্ট্রির একটি ট্রেড ইউনিয়ন বডি তাদের পক্ষ থেকে 'সুরক্ষা বন্ধু' চালু করা হয়েছে। পরমব্রতর কথায়, "বিষয়টিকে ব্যবস্থা বলব? না কমিটি বলব? তা আমি জানি না। অফিশিয়ালি, অত্যন্ত সাধুবাদ জানাবার মতো প্রচেষ্টা, খাতায়-কলমে নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে আমাদের যে ডিরেক্টর্স গিল্ড সেটি কিন্তু ফেডারেশনেরই আওতাভুক্ত। সেক্ষেত্রে ফেডারেশন যদি সবার সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, যেটা তাঁরা করেছেন বলে ধরে নিচ্ছি, তাহলে তো ডিরেক্টর্স গিল্ডের সঙ্গেও আলোচনা করা উচিত। নিদেনপক্ষে ডিরেক্টর্স গিল্ডের একটা নোটিফিকেশন তো পাওয়া উচিত। ফেডারেশনের ২৬টা গিল্ডের মধ্যে এটাও তো একটা।"
তাহলে বলছেন আপনাদের কাছে কোনও খবরই ছিল না?
প্রশ্ন শুনেই অভিনেতা-পরিচালক বললেন, "না, আমাদের নোটিফাই করা হয়নি। ডিরেক্টর্স গিল্ডকে কোনওভাবে অন্তর্ভুক্তই করা হয়নি। কিছু জানানোই হয়নি। আমরা দেখলাম, কিছুই জানানো হল না। খুব অবাক হয়েছি। ভাবছি, এটা কেন হল? তার পরই দেখলাম, যিনি ফেডারেশনের সভাপতি (স্বরূপ বিশ্বাস) খবরের কাগজে এবং ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমে খুব জোর গলায় বক্তব্য রেখেছেন যে এই অভিযোগ নাকি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে প্রযোজক এবং প্রযোজক-পরিচালকদের বিরুদ্ধেই আসে। তখন আমরা বুঝতে পারলাম বা আমাদের মনে হল, আচ্ছা! তাহলে অভিসন্ধিটা আলাদা। প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি কোনও তথ্য-প্রমাণ ছাড়া একটা পার্সেন্টেজ কী করে দিয়ে দেন? এবং পশ্চিমবঙ্গে যেখানে প্রায় পাঁচশো নামী-দামি, নানা বয়সের পরিচালক রয়েছে তাঁদের এক রঙে কীভাবে দাগিয়ে দেন?"
[আরও পড়ুন: ‘বহুরূপী’ শিবপ্রসাদকে ধরতে মরিয়া ‘সুপারকপ’ আবির, টানটান টিজারে বাজিমাত ]
পরমব্রতর বক্তব্য, "যৌন হেনস্তার মতো ঘৃণ্য অপরাধ, সেটা যে বিভাগের যেই করুক না কেন, সেটা টেকনিশিয়ানদের মধ্যে কেউ হোক, অভিনেতাদের মধ্যে কেউ হোক, পরিচালক-প্রযোজকদের মধ্যে কেউ হোক অথবা সঙ্গীত পরিচালক থেকে এগজিবিটর যেই হোক না কেন তাকে আড়াল না করে সামনে আনা হোক। তার উপযুক্ত ব্যবস্থা অবশ্যই কাম্য। কিন্তু সেটার জন্য আপনি হঠাৎ করে একটি গোষ্ঠীকে যাঁরা তাঁদের কাজের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রির নাম উজ্জ্বল করেন, তাঁদের অপমান করছেন কী করে? এই পরিচালকদের গোষ্ঠীর মধ্যে গৌতম ঘোষের সিনিয়র পরিচালকরাও আছেন, আবার একেবারে অল্প বয়সি পরিচালকরাও আছেন। আমরা অত্যন্ত অপমানিত। এটাকে আমরা বিরাটভাবে একটা অবমাননা হিসেবে দেখছি। গত প্রায় একমাস যাবৎ শহর প্রতিবাদী। যেকোনও কারণেই হোক এই সংগঠন কিন্তু তাতে যোগ দিয়ে জোর গলায় বলতে পারেনি যে আমরা এই (আর জি করের) ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। শাস্তির দাবি জানাতে পারেনি। বরঞ্চ আমরা যখন রাজনৈতিক পতাকা ছাড়া ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত মানুষ একসঙ্গে পথে নেমেছি এবং তাতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি, তখন তাঁরা জনে জনে ফোন করে নিজেদের সদস্যদের যোগ দিতে বারণ করেছেন। বলেছেন, 'এটাতে যেও না। এটা আমাদের কর্মসূচি নয়। যেতে পারবে না।' টেকনিশিয়ানদের কয়েকজন যখন বলার চেষ্টা করেছেন, এটা তো ইন্ডাস্ট্রির কর্মসূচি। ইন্ডাস্ট্রি তো একটাই। সেখানে ভেদাভেদ কোথায়? টেকনিশিয়ান, প্রযোজক, অভিনেতা, পরিচালক, সবাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে। সবাই যেতে পারত সেটাতে। তাতে বলা হয়েছে, 'না ওটা ওদের।' এই আমরা-ওরা এটা নিয়েও করা হয়েছে এবং তার প্রমাণও আছে। তা তাঁরা হঠাৎ করে সুরক্ষা বন্ধু করলেন, চমৎকার! খুব ভালো। কিন্তু তার পর যখন দেখি যে পরিচালকদের তার মধ্যে শুধু রাখা হয়নি তা নয়, সভাপতি প্রথমেই পরিচালকদের নামে কুৎসা করেছেন এবং সমস্ত পরিচালকদের একসঙ্গে অপমান করেছেন। তখন মনে হয়, আচ্ছা! বেসিক্যালি এটা একটা বড় অভিসন্ধি। কী অভিসন্ধি? এই কিছুদিন আগে আমাদের ডিরেক্টর্স গিল্ডের সঙ্গে সভাপতির এবং টেকনিশিয়ানদের যাঁরা চালান বা নেতৃত্ব দেন বলে দাবি করেন তাঁদের একটা বিরোধ ঘটে। এখানে মাথায় রাখতে হবে যে সাধারণ টেকনিশিয়ানরা কিন্তু আমাদের পরিবারের মতো। তাঁদের জনে জনে, নামে নামে আমরা চিনি। পারিবারিক সম্পর্ক বলা যেতে পারে। কিন্তু তাঁদের যাঁরা নেতৃত্ব দেওয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁরা অনেক কিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন। আর এর এক্তিয়ার ফেডারেশনের নেই। কারণ ফেডারেশন একটা ট্রেড ইউনিয়ন বডি এবং তারও কাজের কিছু সীমা আছে।"
তারকার সংযোজন, "একশোবার ফেডারেশন প্রয়োজন। শ্রমিকদের ভালো-মন্দ দেখার জন্য। তবে সেটার কোথাও সীমা থাকা দরকার। একটা লাইন যে ট্রেড ইউনিয়ন এই কাজগুলো করতে পারে না। তারা আইন তৈরি করতে পারে না, তারা রুল ইমপোজ করতে পারে না। সেই এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সেই কথাগুলো উঠে আসে, সেই কথাগুলো আমরা সার্বিকভাবে, জোরাল কণ্ঠে বলি এবং তাতে ওদের সঙ্গে আমাদের একটা বিরোধ বাধে। সেই বিরোধ ফাইনালি যেখানে গিয়ে দাঁড়ায় তাতে গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং দেব গিয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং উনি তখন একটা কমিটি গড়ার প্রস্তাব পাশ করেন, কমিটি তৈরি করতে বলেন যে কমিটি বেসিক্যালি ফেডারেশনের রীতি-নীতি এবং কাজকর্ম খতিয়ে দেখবে যে এরা কী করছে, আগ বাড়িয়ে করছে কি না বা এক্তিয়ারের বাইরে করছে কি না। এই কমিটির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সেই প্রসঙ্গে এখন আর যাচ্ছি না। তবে আমাদের এখন যেটা মনে হচ্ছে যে সুরক্ষা বন্ধু থেকে পরিচালকদের বাদ রাখা, পরদিনই পরিচালকদের নামে কুৎসা করা, তাঁদের সমষ্টিগতভাবে দাগিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে একটা বড় অভিসন্ধি রয়েছে এবং তা ওই ঘটনার একটা প্রতিশোধ। মানে ভিলিফাই করা যাকে বলে। আমাদের অন্তত এমনই এক স্পষ্ট ধারণা তৈরি হচ্ছে। 'কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভেবেছেন?', পরমব্রতর উত্তর, "আমরা অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করেছি। সেই ভাবনাচিন্তার ফসল অবশ্যই দেখা যাবে। সেটা আগামীর কথা আগামীই বলুক।"
[আরও পড়ুন: সিদ্ধিবিনায়ক থেকে মাউন্ট মেরি, হবু সন্তানের জন্য মন্দির-চার্চের দুয়ারে দীপবীর]