সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্তোৎসবে কুরুচিকর রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন এবং ছাত্রছাত্রীদের বুক-পিঠে অশালীন শব্দে লেখা গান। নজিরবিহীন এই ঘটনার দায় নিয়ে পদ ছাড়ার জন্য ইস্তফাপত্র দিয়েছিলেন উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরি। কিন্তু তাঁর ইস্তফা গৃহীত হল না। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিলেন, উপাচার্যের ইস্তফাপত্র তিনি গ্রহণ করবেন না। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও উপাচার্যের ইস্তফার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ। তাঁরা উপাচার্যের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বলে খবর। তবে উপাচার্যের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। শুধু বললেন, ভেবে দেখবেন।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দোল বা হোলির আগেই রবীন্দ্রভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসে একটি দিন পালিত হয় বসন্তোৎসব। এটাই তাদের প্রথা এবং ঐতিহ্য। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত থাকে জনসাধারণের জন্য। বিশেষত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পডুয়ারা এই দিন অনায়াসেই এখানে প্রবেশাধিকারের সুযোগ পান। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বৃহস্পতিবার বসন্তোৎসবে মাততে রবীন্দ্রভারতীতে গিয়েছিলেন হুগলির এক কলেজের চার, পাঁচজন ছাত্রী। হলুদ-লাল শাড়ি, খোঁপায় ফুল – বসন্তের সাজে সেজে ওঠা তরুণীদের আনন্দের মাঝে বিতর্ক উসকে দিল তাঁদের পিঠের লেখা। সেখানে অশালীন শব্দ প্রয়োগে লেখা ছিল বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতের একটি লাইন। যা ক্যামেরায় ধরা পড়তেই বিতর্কের ঝড় বয়ে যায় সংস্কৃতি জগৎ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিশ্বকবির নামাঙ্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুচির এমন অবনমনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়েন, কেউ বা চাপা ক্ষোভ বুকে চেপে রেখে হাহুতাশ প্রকাশ করেন।
[আরও পড়ুন: ধর্মতলায় ‘গোলি মারো’ স্লোগান, জামিন মঞ্জুর ধৃত ৬ বিজেপি কর্মীর]
কে বা কারা ওই নিম্নরুচির পরিচয় দিল, তা জানতে সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ তদন্তে নামে রবীন্দ্রভারতী কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ওই ছাত্রীরা প্রত্যেকেই বহিরাগত। হুগলির একটি কলেজের ছাত্রী তারা। সবটা স্পষ্ট হওয়ার পর চাপে পড়ে ক্ষমা চেয়ে নেন ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা। অভিযুক্তদের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় তাদের কলেজের ছাত্র সংসদও। তাঁর দায়িত্বকালে এমন নজিরবিহীন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার দায় নিয়ে উপাচার্য পদত্যাগ করতে চান। শুক্রবার রাতেই তিনি নিয়ম মেনে শিক্ষামন্ত্রী এবং আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও রাত পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরির ইস্তফাপত্র পাননি বলে জানিয়েছিলেন।
[আরও পড়ুন: নারী দিবসে ‘লেডিস স্পেশ্যাল’ সামলাবেন মহিলারা, ঘোষণা পূর্ব রেলের]
তবে শুক্রবার সকালে সেই ইস্তফাপত্র হাতে পাওয়ার পর তা গ্রহণ করলেন না শিক্ষামন্ত্রী। সাফ জানালেন, রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের ইস্তফাপত্র গৃহীত হবে না। উলটে সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরিকে তিনি কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও উপাচার্যের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত মোটেই মেনে নিতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, উপাচার্য তাঁর পদেই থাকুন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বসন্তোৎসব এভাবে কলুষিত হওয়ার জন্য তাঁরা নিজেরাও লজ্জিত, বহুবার এর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থী করেছেন ছাত্র সংসদের সদস্যরা। সেই একই কারণে তাঁরা উপাচার্যকে দায়িত্ব ছাড়তে দিতে চান না। কারণ, তাঁদের মতে, ‘বহিরাগত’ পড়ুয়াদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের দায় কেনই বা উপাচার্য নেবেন, এই প্রশ্নই তুলছেন পড়ুয়ারা।
The post উপাচার্যের ইস্তফাপত্র ফেরাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী, পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা পড়ুয়াদের appeared first on Sangbad Pratidin.