সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে ছাপ রাখতে ঝাঁপিয়েছে তৃণমূল। সর্বভারতীয়স্তরে বিজেপি বিরোধিতায় ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বাংলার বাইরে একের পর এক রাজ্যে সংগঠন বাড়াচ্ছে তারা। শুধু সংগঠন তৈরি নয়, রাতারাতি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মেঘালয়ে বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু আচমকাই দেশজুড়ে তৃণমূলের এই শক্তিবৃদ্ধির কারণ কী?
তৃণমূলের (TMC) শক্তিবৃদ্ধির নেপথ্য কারণ নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে বসলে উঠে আসছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত রাজ্যে কংগ্রেস দুর্বল কিংবা তাদের অন্দরে অশান্তি রয়েছে সেই সমস্ত রাজ্যেই সুচতুরভাবে ঘাসফুল ফোটাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকেরা। ইতিমধ্যে কংগ্রেসের একাধিক প্রাক্তন সাংসদ, বিধায়ক দলবদল করছেন। তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও।
[আরও পড়ুন: ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা, অপমানে ৪০ দিনের সন্তানকে খুন নাবালিকা মায়ের]
বাংলায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পরই তৃণমূল পাখির চোখ করেছে ত্রিপুরাকে (TMC in Tripura)। প্রথমবার আগরতলা পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছে তারা। কিন্তু এত কমদিনে কীভাবে অন্য একটি রাজ্যে শক্তিশালী সংগঠন তৈরি করে ফেলল ঘাসফুল শিবির? তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ত্রিপুরায় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে এসেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশ চন্দ্র দাস, প্রাক্তন বিধায়ক সুবল ভৌমিক এবং অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি পান্না দেব এবং সংখ্যালঘু নেতা মহম্মদ ইদ্রিস মিঞা। সুবল ভৌমিককে ত্রিপুরায় গুরুদায়িত্বও দিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহল বলছে, সে রাজ্যের ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের নিজেদের দলে টেনে শক্তি বাড়িয়েছে ঘাসফুল শিবির।
শুধু ত্রিপুরা নয়, একই ছবি অসমেও। রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) বিশ্বস্ত সৈনিক সুস্মিতা দেবও দল বদলেছেন। কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা সন্তোষ মোহন দেবের কন্যা শুধু অসম রাজনীতিতে নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের যথেষ্ট প্রভাবশালী। অসম বিধানসভা ভোটে বরাক ভ্যালির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের সঙ্গে মতানৈক্য হয়। তার পর থেকেই বাড়ছিল দূরত্ব। শেষে কংগ্রেস বদলে তৃণমূলে এসে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, উত্তর পূর্বের রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর গুরুদায়িত্বও এসেছে তাঁর কাঁধে।
কংগ্রেস ছেড়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফ্যালেইরোও। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে দল বদল করেছেন আরও নয় কংগ্রেস নেতা। যার জেরে গোয়ায় বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রতিরোধ আরও দুর্বল হল। শুধু কংগ্রেস নয়, গোয়া ফরোয়ার্ড পার্টিকেও দুর্বল করতে সক্ষম হয়েছে ঘাসফুল শিবির। সে দলের কার্যকরী সভাপতি কিরণ কান্ডলকারের সঙ্গে ৪০ কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই গোয়াতেও বিজেপির বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসছে সেই তৃণমূল-ই।
[আরও পড়ুন: স্ত্রীর সামনে দুই মেয়েকে খুন, বাধা দিতে গিয়ে প্রাণহানি পুলিশ-সহ ৫ জনের]
আর মেঘালয়েতে তো রীতিমতো ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। ছোট্ট পাহাড়ির রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা-সহ মোট ১২ কংগ্রেস বিধায়ক যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। হরিয়ানায় রাহুল গান্ধীর একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলেন অশোক তানওয়ার। কিন্তু দলের সঙ্গ ভুল বোঝাবুঝিতে তিনি কংগ্রেস ছাড়েন। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে যোগ দেন তৃণমূলে। সেদিনই হরিয়ানায় তৃণমূলের সংগঠন তৈরির দায়িত্ব তাঁর কাঁধে তুলে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। উত্তরপ্রদেশ, বিহারের বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসিদের নেতারা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।
আর এই কংগ্রেস বদলের কারণ হিসেবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যুক্তিটা দিয়েছেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহে ফ্যালেইরো। বলেছেন, “কংগ্রেস তিনভাগে ছড়িয়ে গিয়েছে। শরদ পওয়ারের রাষ্ট্রবাদী কংগ্রেস পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস। আর তাদের মধ্যে বিজেপিকে একমাত্র কড়া টক্কর দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস।” এক কথায় বলতে গেলে, কংগ্রেসের দুর্বল সংগঠন, নেতৃত্বের টানাপোড়েন আর একচেটিয়া বিজেপি বিরোধিতাই সাফল্য এনে দিচ্ছে তৃণমূলকে।