শেখর চন্দ্র, আসানসোল: আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে পবন সিং প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার পর এখনও অন্য কোনও নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি। তারই মাঝে নিজের এক্স হ্যান্ডেল সরাসরি বাবুল সুপ্রিয়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন ভোজপুরি গায়ক পবন সিং। ভোজপুরি গায়ক-নায়ক 'পাওয়া স্টার' পবন সিংয়ের অভিযোগ, বাবুল সুপ্রিয় তাঁর শিল্পসত্ত্বা নিয়ে মিথ্যা প্রচার করেছেন। শুক্রবার বাবুল সুপ্রিয়কে ট্যাগ করে এই নিয়ে তিনি পর পর দুটি পোস্ট করেন। অভিযোগ সত্যি প্রমাণ হলে রাজনীতি এবং সংগীত জগত থেকে সন্ন্যাস নেওয়ার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন।
২৭ দিন পর বাবুলের সেই পোস্টের পালটা জবাব দিলেন পবন সিং (Pawan Singh)। বাবুলের উদ্দেশে তিনি লেখেন, "বলতে চাইছিলাম না কিন্তু আপনি শুধু পবন সিংয়ের মন ভাঙেননি। আপনি আঘাত করেছেন ৪০ কোটি ভোজপুরিভাষীকে। ভোজপুরি শিল্পকে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের মানসম্মানেও আপনি আঘাত করেছেন।"
বলে রাখা ভালো, পবন প্রার্থী হওয়ার পর প্রথম যে ব্যক্তি তাকে আক্রমণ করেছিলেন তিনি আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বর্তমান মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (Babul Supriyo)। গত ২ মার্চ পবন সিংয়ের চারটি গানের পোস্টার সামনে রেখে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন বাবুল সুপ্রিয়। সেই পোস্টারগুলিতে লেখা ছিল, 'বাঙালওয়ালি মাল', 'সওতীন বাঙাল সে', 'বাঙ্গাল সে লিয়া আয়েম সওতীন' এবং 'বাঙ্গাল কি পানি।' বাবুল দাবি করেছিলেন, বাংলার মা-বোনেদের এসব গানে অসম্মান করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় নতুন ছবির শুটিংয়ে কাজল, যাবেন বোলপুরেও]
তা নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দেয়। চাপের মুখে কার্যত নতিস্বীকার করেন পবন সিং। আসানসোলের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। তখন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, “উনি শিল্পী মানুষ। কিছু ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে। সেই কারণেই তিনি দাঁড়াতে পারছেন না। শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। উনি হয়তো অন্য জায়গা থেকে দাঁড়াবেন।”
যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে নিজে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেননি। পবন সিংকে দলের তরফ থেকে কার্যত জোর করে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করানো হয়েছিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রথমত, পবনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর গানের ভিডিওতে বঙ্গনারীদের অসম্মানজনক মন্তব্য করা হয়েছে। আবার তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী জ্যোতি সিংয়ের উপরেও মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর সঙ্গে ইতিমধ্যে ভোজপুরি তারকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও চলছে। দ্বিতীয়ত, পবনের নাম ঘোষণা হওয়ার পর আসানসোলে বিজেপির অন্দরেও বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
একসময় তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহাকে ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষ করেছিল আসানসোলের গেরুয়া শিবির। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, নিজেদের জমি পুনরুদ্ধার করতে ও হিন্দিভাষী ভোট পকেটে ভরতে বিহার থেকে পবনকে দাঁড় করিয়েছিল পদ্মশিবির। তবে সূত্রের খবর, আসানসোলের বিজেপির আপত্তি ও বহিরাগত তত্ত্বের জন্যই পবনকে সরিয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। পবন সিং অবশ্য জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত কিছু কারণে আসানসোলে লড়তে পারছেন না। এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপির হয়ে কে ভোটে লড়েন, সেটাই এখন দেখার।