মাসুদ আহমেদ, শ্রীনগর: এক সময় পাথর নিক্ষেপকারীদের গড় ছিল লালচক। জুম্মার নমাজের পর সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে উন্মত্ত ভিড়ের তাণ্ডব ছিল জলভাত। ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ও ‘ইন্ডিয়া গো ব্যাক’ স্লোগান শোনা যেত অহরহ। আজ জম্মু ও কাশ্মীরের হৃদয় শ্রীনগরের সেই ঐতিহাসিক লালচকেই সগর্বে উড়ছে ভারতের জাতীয় পতাকা।
মঙ্গলবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস। দেশমাতৃকাকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে যে বীর শহিদরা চরম বলিদান করেছে তাঁদের স্মরণ করছে গোটা দেশ। এদিন লালচকেও তেরঙ্গা উড়িয়ে স্বাধীনতা দিবস পালনের ছবি ধরা পড়ল ক্যামেরায়। লালচকের বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার বা ‘ঘণ্টা ঘরেও’ উড়ল জাতীয় পতাকা। বিগত দিনে সন্ত্রাস জর্জর উপত্যকার ছবি যে অনেকটাই পালটেছে তা এদিন স্পষ্ট। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এবার ১৫ আগস্টেও কাশ্মীর উপত্যকায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বহাল রয়েছে বলে খবর। তবে জঙ্গি হানার আশঙ্কায় নিরাপত্তাও জোরদার। বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীরের জেলাগুলিতে কড়া নজর রাখছে সেনাবাহিনী।
[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসের আগে দ্রৌপদীর বক্তব্যে মাতঙ্গিনী থেকে চন্দ্রযান]
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘হর ঘর তেরঙ্গা’ অভিযানে শামিল হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অর্থাৎ প্রতিটি ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এক হিজবুল জঙ্গির ভাই। সেই খবর ভাইরাল। জম্মু ও কাশ্মীরের সোপোরে নিজের বাড়িতে তেরঙ্গা ওড়াচ্ছেন হিজবুল জঙ্গি জাভিদ মাট্টুর ভাই রইশ মাট্টু। মনে করা হচ্ছে, মোদি সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েই জাতীয় পতাকা তুলে ধরেছেন রইশ। দাদা জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হলেও ভাই যে দেশকে ভালবাসেন, সেটাই যেন বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রের মোদি সরকার। পাশাপাশি রাজ্যের মর্যাদা ছিনিয়ে নিয়ে এটিকে পৃথক দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পর থেকে অনেক বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে ভূস্বর্গে। অশান্তি থামাতে বিপুল সংখ্যক সেনা সেখানে মোতায়েন করা হয়। বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট পরিষেবাও। সেই সময় কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছিলেন, বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করলে কাশ্মীরে তেরঙ্গা তোলার মতো কেউ থাকবে না। তাঁর এই মন্তব্য যে কাশ্মীরীদের মনের কথা নয়, তা এদিন স্পষ্ট হয়ে গেল।