বাজারের ওঠাপড়া থাকবেই। কিন্তু তার সঙ্গে যুঝে, কীভাবে উন্নতির পথে এগিয়ে যাবেন, সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত ইনভেস্টরদের। ট্রেন্ড কী বলছে? কোন পথে এগোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে? কী কী দিকে নজর রাখতে হবে? কোন সুযোগ ‘মিস’ হলেই মুশকিল? জানতে হলে পড়ুন অরবিন্দ কুণ্ডু-র এই লেখা।

গত ছয় মাসের ঘটনা মনে করিয়ে দিই আপনাদের। ইক্যুইটির বাজার প্রবলভাবে পড়েছে, আবার গত কয়েকদিন ধরে ফেলে আসা ভ্যালুয়েশনের পুনরুদ্ধারও হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবর্ষে আমাদের শিক্ষার রূপরেখা আরও একটু পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে বলে আমি মনে করি। পুরনো-নতুন, সব জমানার “রিকভারি” যদি দেখেন, তাহলে বিশেষ কিছু কথা বলতে হয়, না হলে এই শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে না। এই পয়েন্টগুলি দেখুন –
ক। বাজার, পড়ে যাওয়ার পর, রিকভারির পথে হাঁটা দেয়
খ। দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন
গ। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া জারি থাকা দরকার, তবে তার জন্য স্ট্র্যাটেজি বদলাতে হতে পারে।
ঘ। বাজারে কারেকশন এসেছে? আপনাকে এরই মধ্যে সুযোগ খুঁজতে হবে।
ঙ। সিপ চলুক, ডাইভারসিফিকেশন অটুট থাকুক, কিন্তু লগ্নির কৌশলে কড়া নজর রাখুন।
আমরা মোটের উপর কী করে থাকি, জানেন? লক্ষ্য করবেন, বেশিরভাগ ইনভেস্টরই “টাইম” করার চেষ্টায় থাকেন। স্বল্প কথায় বলে নিই, “টাইমিং দ্য মার্কেট”(timing the market) করা খুব শক্ত, এবং তাতে উপকার নিশ্চিতভাবে না-ই হওয়া সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে, যদি আমরা এই টাইমিং করার সুবাদে সব থেকে ভাল দিনগুলির (অর্থাৎ যখন সুযোগ সর্বাধিক) সুবিধা না নিতে পারি, তাহলে রিটার্ন কখনই মনের মতো হবে না। সঙ্গের চার্ট দেখুন–জনৈক ইনভেস্টর গত ২৫ বছরে সবথেকে বড় সুযোগগুলি ‘মিস’ করেছেন (৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত)। তাতে তাঁর ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকার ভ্যালুয়েশন, নিফটি ৫০ নিরিখে, কোথায় পৌঁছেছে দেখুন। কী হতে পারত, আদতে কী হয়েছে, এই দুইয়ের মধ্যে কি বিপুল ফারাক !
এ তো গেল বিগত দিনের কথা, দেখা যাক সামনের বছরগুলিতে ভারতীয় লগ্নিকারীর জন্য কী অপেক্ষা করছে। আমার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী দেখে, বিভিন্ন ট্রেন্ড পরখ করে, এবং অবশ্যই নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলতে পারি যে আম আদমি আমাদের দেশে লগ্নির বিষয়ে আজ খুবই সজাগ এবং আগ্রহী হয়ে উঠছেন। নিফটি কোথায়, কোন স্তরে পৌঁছে যেতে পারে, তা নিয়ে আমি আদপেই “স্পেকুলেট” করতে চাই না। তবে সাধারণভাবে বলতে চাই যে বাজারে সুযোগ থাকবে অনেক রকম। যেমন ধরুন, নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরের কথা বলা চলে – আইটি, ফার্মা, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যায়। দেশের কনসাম্পশন সেক্টরের অগ্রগতি নিয়েও আমি আশাবাদী। সব মিলিয়ে লগ্নির ক্ষেত্রটি খুব ইতিবাচক।
তাই এই বিষয়টি নেপথ্যে রেখে কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে বলছি, খেয়াল করবেন –
১। ডাইভারসিফিকেশনে খামতি রাখবেন না। বিভিন্ন সেক্টরে নিজের অ্যাসেট ছড়িয়ে রাখুন। যদি সরাসরি লগ্নি না করে, ফান্ড ম্যানেজারের মাধ্যমে করেন, আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন ধরনের ফান্ড থাকুক। তবে তা সবই রিস্ক প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে হবে।
২। সিপ করুন নিয়ম মেনে। এতে ধারাবাহিকতা থাকবে, তাই সংসারের বাজেটের অঙ্গ হয়ে উঠুক আপনার সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট।
৩। প্রফেশানালের সাহায্য নিন, সঠিক পথের সন্ধান পাবেন। সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে এতে, ভুলবেন না।
৪। 'কস্ট অফ ডিলে' সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন। আলোচনার পরের অংশটিতে এই নিয়ে বিশদে বলছি আপনাদের। দেরি করার কুফল, যদি এক কথায় বলতে হয়, আপনার রিটার্নের সম্ভাবনায় আঘাত করবে। একটা ছোট চার্ট দিলাম বোঝার সুবিধার জন্য। ধরা যাক, আপনার “টার্গেট” এক কোটি টাকা। আর তা আপনি ষাট বছরে পড়ার সময়ই পেতে চান, আপনার গ্রোথ হচ্ছে বছরে ১২ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে প্রতি পাঁচ বছরের “ডিলে” – অর্থাৎ দেরি হওয়ার কারণে – আপনার মাসিক আউফ্লো প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
লক্ষ্য: ৬০ বছরে ১ কোটি টাকা (বার্ষিক বৃদ্ধি : ১২%)
সামান্যভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তাই নিজের সাধ্যমতো মার্কেটে আসুন, বিনিয়োগ করতে থাকুন। দেখুন, বিশ্বের নানা কোণে তো ঘটনাবলী অবিরত ঘটে চলছেই, তার উপর সাধারণ মানুষের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এরই কারণে কারেকশন আসে বারে বারে, এবং সর্বশেষ “পিক” থেকে সূচক নেমে আসে প্রত্যেকবার। তবে যদি লক্ষ্য স্থির রাখেন, সুযোগ বুঝে কৌশল পরিবর্তন করেন, সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলেন, এবং প্রযুক্তির সাহায্য নেন তাহলে আপনি পরিকল্পিত উপায়ে সম্পদ গঠন করতে পারবেন। আরও অনেক কিছুর মতোই, “প্যানিক সেলিং” হতে থাকে মাঝেমধ্যেই। সজাগ লগ্নিকারীর দল এরই মধ্যে থেকে ঠিক ফান্ড বা স্টক খুঁজে নেন। আশা করি আগামী দিনে তা করতে পারবেন। আমার এই লেখা একান্তভাবেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। যা শিক্ষা নিজে পেয়েছি তা সকলের মধ্যে বন্টন করার উদ্দেশ্য নিয়ে কলম ধরা। কোনও বিশেষ নামের প্রতি পক্ষপাত নেই আমার। নতুন আর্থিক বর্ষের জন্য শুভকামনা রইল।